চটপটি রেসিপি উপকরণ | Chotpoti Recipe

চটপটি রেসিপি উপকরণ
চটপটি রেসিপি

চটপটির ইতিহাস:

চটপটি (Chotpoti) বাংলাদেশের জনপ্রিয় এক street food বা রাস্তার খাবার। এটি বিশেষ করে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার এবং অন্যান্য শহরের রাস্তা কিংবা বাজারে পাওয়া যায়। চটপটির নামটি এসেছে হিন্দি শব্দ "চটপ" (Chotp) থেকে, যার মানে হল 'মসলাদার' বা 'স্বাদে পূর্ণ'। এই খাবারের মসলাদার স্বাদ এবং বৈচিত্র্যময় উপকরণের কারণে এটি মানুষের মধ্যে অনেক জনপ্রিয়।

চটপটির ইতিহাস বেশ পুরনো। ধারণা করা হয়, এটি মূলত ভারতীয় উপমহাদেশের একটি ঐতিহ্যবাহী খাবার, তবে বাংলাদেশে এটি বিশেষভাবে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। এটি মূলত "চাট" নামক খাবারের একটি বিশেষ ধরনের সংস্করণ। চাট বা চাটপটির উৎপত্তি ভারতীয় উপমহাদেশের প্রাচীনতম খাবারের মধ্যে একটি, যা মোগল যুগের সময়ের দিকে চলে যায়। তখন মোগলরা মসলাদার খাবারের প্রতি অনেক আগ্রহী ছিল, এবং তাদের রাজ্যজুড়ে বিভিন্ন মসলাদার খাবারের প্রচলন ঘটেছিল।

প্রাথমিকভাবে, চটপটি একটি সাধারণ উপাদান হিসেবে বিভিন্ন ধরণের ডাল, আলু, শসা, কাঁচামরিচ, মসলা, তেঁতুল, এবং টক দিয়ে তৈরি করা হতো। পরবর্তীতে, স্থানীয় বাসিন্দারা বিভিন্ন স্বাদ ও রকমফের নিয়ে চটপটিকে আরও মজাদার ও আকর্ষণীয় করে তুলেছিল। চটপটি খাওয়ার সাথে সাথে এর রেসিপি এবং উপকরণগুলি বিভিন্ন অঞ্চলে আরও বৈচিত্র্যময় হয়ে ওঠে।

বাংলাদেশে চটপটি একটি খুবই জনপ্রিয় বিক্রেতার খাবার হিসাবে পরিচিত, বিশেষ করে সন্ধ্যার সময় বা যেকোনো সামাজিক সমাবেশে। এতে যে মসলাদার, টক-মিষ্টি ও ঝাল স্বাদ থাকে, তা দেশের ভোজন সংস্কৃতির একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠেছে।

চটপটির জনপ্রিয়তার কারণ এটি সহজলভ্য, মজাদার এবং খুব দ্রুত তৈরি করা যায়। এটি রাস্তার খাবার হিসেবে একেবারে হাতের কাছে পাওয়া যায় এবং একে সহজে ‘ফাস্ট ফুড’ হিসেবে অভ্যস্ত হয়ে উঠেছে। আজকাল, বিভিন্ন রেস্টুরেন্ট এবং হোটেলগুলোতেও চটপটি পরিবেশন করা হয়, যা প্রমাণ করে যে, এটি শুধুমাত্র রাস্তার খাবার নয়, বরং একটি সুস্বাদু এবং প্রিয় খাবারের নাম হয়ে উঠেছে।

চটপটি রেসিপি উপকরণ:

  • ডাবলি/চানা ডাল - আধা কেজি
  • আলু - ২৫০ গ্রাম
  • চটপটির মসলা - ২ টেবিল চামচ
  • ভাজা জিরার গুঁড়া - ১ টেবিল চামচ
  • কাঁচামরিচ কুচি - স্বাদ মতো
  • ধনেপাতা কুচি - ১ টেবিল চামচ
  • শসা কুচি - ২ টেবিল চামচ
  • চটপটির টক - ৪ টেবিল চামচ
  • ডিম - ১টি

চটপটির মসলা তৈরির উপকরণ:

  • জিরা - ১ টেবিল চামচ
  • ধনে - ১ টেবিল চামচ
  • মৌরি - ১ টেবিল চামচ
  • মেথি - ১ চা চামচ
  • রাঁধুনি - ১ চা চামচ
  • কালো জিরা - আধা চা চামচ
  • সরিষা - আধা চা চামচ
  • বিট লবণ - ১ চা চামচ
  • লবঙ্গ - ১৫টি
  • গোলমরিচ - আধা চা চামচ
  • শুকনা মরিচ - ১০টি

চটপটির টক তৈরির উপকরণ:

  • তেঁতুল - ২৫০ গ্রাম
  • বিট লবণ - ২ টেবিল চামচ
  • চিনি - ২ টেবিল চামচ
  • ভাজা জিরা গুঁড়া - আধা চা চামচ
  • চটপটির মসলা - ১ টেবিল চামচ
  • শুকনা মরিচ - ১ টেবিল চামচ (আধা ভাঙা)

প্রস্তুত প্রণালি:

  1. ডাবলি সেদ্ধ করা:
    ডাবলি সারারাত পানিতে ভিজিয়ে রাখুন। পরদিন ভালো করে ধুয়ে সেদ্ধ করে নিন। আধা কেজি ডাবলি প্রেসার কুকারে সেদ্ধ করার জন্য প্রয়োজন হবে ৬ কাপ পানি। উচ্চ তাপে আধা ঘণ্টা জ্বাল দিন।

  2. চটপটির মসলা তৈরি:
    ডাবলি সেদ্ধ হতে হতে চটপটির মসলা তৈরি করে ফেলুন। একটি প্যান উচ্চতাপে গরম করে শুকনা মরিচ দিয়ে দিন। তেল দেবেন না। মরিচ চেপে চেপে ভেজে নিন। মচমচে হয়ে গেলে উঠিয়ে চটপটির মসলার বাকি উপকরণগুলো প্যানে দিয়ে চুলা বন্ধ করে দিন। গরম প্যানে নাড়াচাড়া করুন সব মসলা। বাদামি রং হলে নামিয়ে মসলা ও ভাজা মরিচ গুঁড়া করুন। পানি যেন একদম না থাকে সেদিকে লক্ষ রাখবেন। সব মসলা মিহি গুঁড়া হলে বাটিতে উঠিয়ে রাখুন। এই মসলা মুখবন্ধ বয়ামে অনেকদিন পর্যন্ত সংরক্ষণ করা যায়।

  3. চটপটির টক প্রস্তুত:
    তেঁতুল পানিতে ভিজিয়ে রাখুন ২০ মিনিট। ভিজিয়ে রাখা তেঁতুল ভালো করে কচলে রস বের করে নিন। ছেঁকে রস আলাদা করে ফেলুন। টক তৈরি সব উপকরণ দিয়ে নেড়ে দিন।

  4. ডাবলি মেশানো:
    ডাবলি সেদ্ধ হয়েছে কিনা দেখে নিন। অতিরিক্ত পানি ফেলে দেবেন না। আলু সেদ্ধ করে খোসা ছাড়িয়ে আধা ভাঙা করে মিশিয়ে দিন সেদ্ধ ডাবলির সঙ্গে।

  5. মসলা ও টক মেশানো:
    এবার একে একে চটপটির মসলা, ভাজা জিরার গুঁড়া, কাঁচামরিচ কুচি, ধনেপাতা কুচি, তেঁতুলের টক মিশিয়ে ভালো করে নেড়েচেড়ে নিন।

  6. ডিম ও সাজানো:
    সেদ্ধ ডিম মিহি কুচি করে উপরে ছড়িয়ে দিন। ধনেপাতা কুচি ও কাঁচামরিচ কুচি দিয়ে সাজিয়ে পরিবেশন করুন মজাদার চটপটি।

এটি একটি সুস্বাদু, মজাদার এবং স্বাস্থ্যকর চটপটি রেসিপি যা আপনাকে এবং আপনার পরিবারকে ভালোবাসা ভরা একটি খাবার উপহার দেবে!

Post a Comment

Previous Post Next Post