পাস্তা ইতিহাস !
পাস্তা ইতালীয় উচ্চারণ Pasta ইটালির একটি প্রধান খাদ্য,যা সিসিলিতে প্রথম ১১৫৪ সালে প্রামাণ্য খাদ্য হিসেবে লিপিবদ্ধ হয়। এবং যা ইউরোপ, আমেরিকায় রেস্তোরাগুলোতে খুব প্রসিদ্ধ। পাস্তা অনেক ধরনের হয়ে থাকে। পাস্তা কয়েক মিনিটেই রান্না করা যায়। নুডুলসের সাথে এর সাদৃশ্য রয়েছে। পাস্তা আটা দ্বারা তৈরি করা হয়।
বিশ্বের অন্যতম ভ্রমণকারী মার্কো পোলো চতুর্দশ শতাব্দীতে চীন ভ্রমণের সময় পাস্তা আবিষ্কার করেন। সেখানে ৩০০০ খ্রিষ্টপূর্ব থেকেই পাস্তা খাওয়ার চল রয়েছে। মার্কো তার লেখায় একটি গাছের কথা উল্লেখ করেছিলেন যা থেকে পাস্তা তৈরি করত চীনারা। যেটি এখন আমাদের কাছে সাবু দানা হিসেবে পরিচিত।
পাস্তা ইতালির জনপ্রিয় খাবার হলেও এর জন্ম চীনে। তবে একথা অনেক গবেষক স্বীকার করতে চান না। কারণ চীনের আর ইতালির পাস্তার মধ্যে বেশ অনেকটাই তফাত রয়েছে। চীনে পাস্তা বলতে নুডুলসকে বোঝানো হয়েছে। সেখানে তারা বেশিরভাগ সময় ভাত দিয়ে বা চালের গুঁড়া থেকে নুডুলস বা পাস্তা তৈরি করে। আর ইতালিয়ান পাস্তা তৈরি হয় গমের আটা, ডিম আর দুধ দিয়ে।
অনুমান করা হয় ইতালিয়ানরা বছরে গড়ে ষাট পাউন্ড পাস্তা খেয়ে থাকে। তারা পাস্তা রান্না করতে বিভিন্ন সসের সঙ্গে ভেড়া এবং শূকরের মাংস ব্যবহার করে। মাঝে মাঝে সবজিও ব্যবহার করে থাকে পাস্তায়। ইতালির পরেই আমেরিকায় পাস্তার জনপ্রিয়তা সবথেকে বেশি। তারা নিজেদের চাহিদা মিটিয়ে সারাবিশ্বে পাস্তার চাহিদা মেটাচ্ছে। এতে অর্থনৈতিকভাবেও বেশ অর্জন হচ্ছে তাদের এই খাতে।
নোক্রাটিস-এর গ্রীক কথাসাহিত্যিক অ্যাথেনিয়াস লাগনার প্রথম শতাব্দীতে পাস্তার একটি রেসিপি দিয়েছিলেন। সেখানে তিনি ময়দার সঙ্গে লেটুস পাতার গুঁড়া,বিভিন্ন মশলা এবং জলপাই তেল ব্যবহার করেছিলেন। খ্রিস্টীয় দ্বিতীয় শতাব্দীতে গ্রীক চিকিৎসক গ্যালেনের রচনায় পাওয়া যায় পাস্তা তৈরির পদ্ধতি। সেখানে তিনি ময়দা আর পানি তৈরি একধরনের পাস্তার কথা লিখেছিলেন। খাদ্য ইতিহাসবিদরা মনে করেন ত্রয়োদশ শতাব্দীতে মধ্যযুগের বৃহত্তর ভূমধ্যসাগরীয় ব্যবসায়ের মাধ্যমে ইতালিতে পাস্তার আগমন। সেসময় থেকে ষোড়শ শতাব্দীর শুরু পর্যন্ত ধীরে ধীরে এর প্রচলন শুরু হয়। এরপর এটি ইতালিয়ানদের প্রধান খাবারে পরিণত হয়। দক্ষিণ ইতালীয়দের মতে অষ্টম শতাব্দীতে আরব অঞ্চল থেকে সেখানে অনেক মানুষ আসে। তাদের মাধ্যমেই নাকি এদেশে এসেছিল পাস্তা।
বর্তমানে আমরা যে ম্যাকারোনি খাই তা এসেছে সিসিলিয়ান থেকে। সেসময় সিসিলিয়ায় গম উৎপাদন হতো অনেক বেশি। অন্যান্য ফসল ভালো না হওয়ায় তারা ময়দাকে খাবারের মূল উপকরণ হিসেবে বেছে নেয়। ময়দার সঙ্গে ডিম আর পানি মশিয়ে ডো তৈরি করে প্রথমে। তারপর লম্বা করে কেটে সিদ্ধ করে টমেটো সস, মাংস দিয়ে রান্না করে খেত। যদিও সেসময় সিসিলিয়ানরা পাস্তায় বাদাম, কিসমিস, দারুচিনি ব্যবহার করত।
বিংশ শতাব্দীতে এসে আমেরিকানরা পাস্তার সঙ্গে পরিচিত হয়। এরপর থেকে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন রেস্তোরাঁয় বেশ চড়া দামে বিক্রি হতে থাকে পাস্তার নানা পদ। ১৯৩৫ সালে পাস্তার প্রথম বিজ্ঞাপন বের হয়। ইতালিয়ানরা এখনো টাটকা পাস্তা খেতে পছন্দ করে। তবে ব্যস্ত জীবনকে সহজ করতে এবং বাণিজ্য করতে পাস্তা প্রক্রিয়াজাত করে প্যাকেটজাত করা হয়। সেসময় পাস্তা তৈরি করে কাঠের লম্বা লম্বা তারে শুকানো হত। এরপর প্যাকেটে ভরে বিক্রি জন্য প্রস্তুত করা হত।
এটি বিভিন্ন ধরনের আকার এবং সাইজে পাওয়া যায়। পাস্তা বিভিন্ন উপাদানের সাথে প্রস্তুত করা যায় এবং এটি বিভিন্ন ধরণের সসের সাথে পরিবেশন করা হয়। এখানে পাস্তার বিভিন্ন প্রকার এবং আকার, পাশাপাশি কিছু জনপ্রিয় ইতালিয়ান পাস্তা রেসিপি ও পাস্তা সসের রেসিপি দেয়া হলো:
জনপ্রিয় পাস্তার বিভিন্ন প্রকার ও আকার:
স্প্যাগেটি (Spaghetti): আকার: পাতলা, লম্বা নলাকার। ব্যবহার: টমেটো সস, কার্বোনারা, বোলনেস সসের সাথে ভাল চলে।
ফেটুচিনি (Fettuccine): আকার: চওড়া এবং সমানভাবে প্যাকানো। ব্যবহার: আলফ্রেডো সস, ক্রিমি সসের সাথে আদর্শ।
পেনে (Penne): আকার: ছোট, খাঁজযুক্ত নলাকার। ব্যবহার: সসের মধ্যে স্নিগ্ধভাবে মিশে যায়, বেকড পাস্তা ডিশে ব্যবহৃত হয়।
ফুসিলি (Fusilli): আকার: লকানো আকারে ঘুরানো। ব্যবহার: সস ধারণ করে এবং সালাদের জন্য উপযুক্ত।
ফারফেল্লে (Farfalle): আকার: প্রজাপতির মতো আকৃতির। ব্যবহার: সালাদ, সস বা হালকা মাংসের সাথে ভাল কাজ করে।
রেগাটোনি (Rigatoni): আকার: বড়, খাঁজযুক্ত নলাকার। ব্যবহার: সস, মাংস বা সবজির সাথে স্নিগ্ধভাবে মিশে যায়।
টরটিলনি (Tortellini): আকার: ছোট বুটির মতো বা বাঁকা। ব্যবহার: সাধারণত পূর্ণ করা হয় এবং সূপের সাথে পরিবেশন করা হয়।
রেভিওলি (Ravioli): আকার: ছোট, বর্গাকার বা গোলাকার প্যাস্ট্রি যা পূর্ণ করা হয়। ব্যবহার: সস, কিপিং, বা ক্রিম সসে পরিবেশন করা হয়।
লাসাগনা (Lasagna): আকার: প্রস্থে সোজা স্তরের শীট। ব্যবহার: বেকড ডিশ হিসেবে লেয়ার করা হয়।
ইতালিয়ান পাস্তা রেসিপি:
পাস্তা কার্বোনারা (Pasta Carbonara):
উপকরণ:
- স্প্যাগেটি – ২৫০ গ্রাম
- প্যানকেটা বা বেকন – ১০০ গ্রাম (ছোট টুকরো)
- ডিম – ২টি (ফেটানো)
- পারমেজান চীজ – ৫০ গ্রাম (কোরা)
- রসুন – ২ কোয়া (কাটা)
- জল – ১ লিটার
- লবণ এবং গোলমরিচ – স্বাদ অনুযায়ী
প্রস্তুতি: একটি বড় প্যানে জল গরম করুন এবং স্প্যাগেটি রান্না করুন। অন্য প্যানে প্যানকেটা বা বেকন বাদে রসুন এবং মাংস ভাজুন। রান্না হওয়া পাস্তা যুক্ত করুন এবং সস তৈরির জন্য ডিম এবং পারমেজান চীজ মিশিয়ে দিন। গরম প্যান থেকে সরিয়ে সস দিয়ে ভালোভাবে মিশিয়ে নিন। লবণ, গোলমরিচ দিয়ে স্বাদ দিন এবং গরম পরিবেশন করুন।
পাস্তা বোলনেস (Pasta Bolognese):
উপকরণ:
- পেন্নে বা স্প্যাগেটি – ২৫০ গ্রাম
- মাংস – ৩০০ গ্রাম (গুঁড়া করা)
- টমেটো সস – ১ কাপ
- গাজর – ১টি (কাটা)
- পেঁয়াজ – ১টি (কাটা)
- রসুন – ২ কোয়া (কাটা)
- অলিভ অয়েল – ২ চা চামচ
- লবণ, গোলমরিচ – স্বাদ অনুযায়ী
প্রস্তুতি: অলিভ অয়েলে পেঁয়াজ, গাজর, এবং রসুন ভাজুন। মাংস যোগ করে রান্না করুন যতক্ষণ না এটি বাদামী হয়ে যায়। টমেটো সস যোগ করুন এবং রান্না করতে থাকুন। রান্না হওয়া পাস্তা যুক্ত করুন এবং ভালোভাবে মিশিয়ে নিন। গরম পরিবেশন করুন।
টমেটো সস (Tomato Sauce):
উপকরণ:
- টমেটো – ৪টি (পাকা এবং কাটা)
- পেঁয়াজ – ১টি (কাটা)
- রসুন – ৩ কোয়া (কাটা)
- অলিভ অয়েল – ২ চা চামচ
- বাসিল পাতা – ৪-৫টি
- লবণ এবং গোলমরিচ – স্বাদ অনুযায়ী
প্রস্তুতি: অলিভ অয়েলে পেঁয়াজ এবং রসুন ভাজুন। টমেটো যোগ করুন এবং সস তৈরি করুন। বাসিল পাতা যোগ করুন এবং কিছু সময় রান্না করুন। লবণ এবং গোলমরিচ দিয়ে স্বাদ ঠিক করুন।
আলফ্রেডো সস (Alfredo Sauce):
উপকরণ:
- মাখন – ১/৪ কাপ
- ক্রিম – ১ কাপ
- পারমেজান চীজ – ১/২ কাপ (কোরা)
- রসুন – ২ কোয়া (কাটা)
- লবণ এবং গোলমরিচ – স্বাদ অনুযায়ী
প্রস্তুতি: মাখন গলিয়ে রসুন ভাজুন। ক্রিম যোগ করুন এবং গরম করুন। পারমেজান চীজ যোগ করে সস তৈরি করুন। লবণ এবং গোলমরিচ দিয়ে স্বাদ ঠিক করুন।
মেরিনারা সস (Marinara Sauce)
- ১.জলপাই তেল ৫০ গ্রাম।
- ২.রসুন কিমা ২০ গ্রাম।
- ৩.পেয়াজ ৫০ গ্রাম।
- ৪.শুকনো মরিচ ফাকি স্বাদ অনুযায়ী।
- ৫. টমেটো ২৫০ গ্রাম।
- ৬.টমেটো পেষ্ট ১ টেবিল চামচ।
- ৭.অরিগানু ১ চা চামচ
- ৮.চিনি,লবন,কালো গোল মরিচ গুড়ো স্বাদ মত।
এই রেসিপিগুলি আপনাকে বিভিন্ন ধরনের পাস্তা প্রস্তুত করতে সাহায্য করবে এবং আপনার ইতালীয় রান্নার অভিজ্ঞতাকে আরও সমৃদ্ধ করবে।