কফি ইতিহাস | History of Coffee | Type of Coffee ☕

কফি ইতিহাস  ☕ 

কফি ইংরেজি: Coffee) বিশ্বব্যাপী খুবই জনপ্রিয় পানীয়। পানির সাথে ফুটিয়ে "কফি বীজ" নামে পরিচিত এক প্রকার বীজ পুড়িয়ে গুঁড়ো মিশিয়ে কফি তৈরি করা হয়। এই বীজ কফি চেরি নামক এক ধরনের ফলের বীজ। প্রায় ৭০টি দেশে এই ফলের গাছ জন্মে। সবুজ কফি বিশ্বের সব থেকে বেশি বিক্রীত কৃষিপণ্যের মধ্যে একটি। কফিতে ক্যাফেইন নামক এক প্রকার উত্তেজক পদার্থ রয়েছে। ৮ আউন্স কফিতে প্রায় ১৩৫ মিলিগ্রাম ক্যাফেইন থাকে। কফির উপাদান ক্যাফেইনের জন্যে কফি মানুষের উপর উত্তেজক প্রভাব ফেলে ও উদ্দীপক হিসেবে কাজ করে। বর্তমানে কফি বিশ্বের সর্বাধিক বিক্রীত গরম পানীয়।

কফির ইতিহাস অনেক পুরানো এবং তা প্রায় ৯ম শতাব্দী থেকে শুরু। এটি প্রথম আবিষ্কার করা হয় ইথিওপিয়ায়। একটি কিংবদন্তি অনুসারে, ইথিওপিয়ার এক রাখাল বালক ক্যালডি লক্ষ্য করেছিল যে তার ছাগলগুলো একটি নির্দিষ্ট গাছের ফল খাওয়ার পর খুব বেশি সক্রিয় হয়ে যায়। তখন ক্যালডি সেই ফল নিজেও খেয়ে দেখতে পায় যে, এটি তার মধ্যে শক্তি ও উদ্দীপনা তৈরি করছে। এর পরেই কফির জনপ্রিয়তা ছড়িয়ে পড়ে।

কফিয়া গাছের ফল থেকে বীজ আলাদা করে তা থেকে সবুজ কফি বীজ তৈরি করা হয়। বীজগুলো ভাজা হয় এবং মিহি করে গুড়ো করা হয়। এরপর গরম পানিতে ফিল্টার করে এক কাপ কফি তৈরি করা হয়। কফি সাধারণত গরম গরম পরিবেশন করা হয়, তবে ঠাণ্ডা বা বরফযুক্ত কফিও সহজলভ্য। কফি বিভিন্ন উপায়ে প্রস্তুত এবং পরিবেশন করা যায় (যেমন, এসপ্রেসো , ফ্রেঞ্চ প্রেস , ক্যাফে ল্যাটে অথবা পূর্ব প্রস্তুতকৃত টিনজাত কফি )। কফির তিক্ত স্বাদ কমাতে বা স্বাদ বাড়াতে প্রায়ই চিনি , কৃত্রিম মিষ্টিকারক ,দুধ এবং ক্রিম ব্যবহৃত হয়।

১৪শ এবং ১৫শ শতকে, কফি আরব দেশে পৌঁছায়, বিশেষ করে ইয়েমেনে। ইয়েমেনের সুফি সম্প্রদায় কফি পান করতো সারা রাত জেগে প্রার্থনা করার সময়। এরপর কফি কায়রো এবং মক্কায় জনপ্রিয় হতে শুরু করে। কফি পরবর্তীতে তুরস্ক, ইরান, এবং ইউরোপে ছড়িয়ে পড়ে, যেখানে ১৭শ শতকে এটি জনপ্রিয় পানীয়ে পরিণত হয়। ইউরোপের কফি হাউসগুলো তখন বুদ্ধিবৃত্তিক আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছিল।


কফি বীজের প্রকারভেদ:

  • আরবিকা (Arabica): বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় কফি বীজ। এর স্বাদ মিষ্টি, ফুলের মতো এবং অম্লতাপূর্ণ।
  • রোবাস্টা (Robusta): আরবিকার চেয়ে ক্যাফেইনযুক্ত এবং তিক্ত স্বাদের। সাধুমাত্রা ও ইনস্ট্যান্ট কফিতে বেশি ব্যবহৃত হয়।
  • লিবারিকা (Liberica): আরবিকা ও রোবাস্টার চেয়ে কম জনপ্রিয়। এর স্বাদ মসলাদার এবং ফলের মতো।

১৫টি জনপ্রিয় কফির নাম, তাদের উপাদান, ব্যবহার, উৎস এবং জনপ্রিয়তার র‍্যাংকিং:

কফি বানানোর নিয়ম :

১. এস্প্রেসো (Espresso)

উপাদান: ফাইন গ্রাউন্ড কফি বিন ও গরম পানি । ব্যবহার: কফির শট হিসেবে সরাসরি পান, অথবা অন্যান্য কফির ভিত্তি হিসেবে (লাটে, ক্যাপুচিনো ইত্যাদি)।

উৎস: ইতালি । জনপ্রিয়তার র‍্যাংকিং: ১ । বৈশিষ্ট্য: গাঢ় এবং দ্রুত প্রস্তুত হওয়া এক শট কফি, যা খুবই শক্তিশালী

২. ক্যাপাচিনো (Cappuccino)

উপাদান: এসপ্রেসো, বাষ্পিত দুধ, দুধের ফেনা । ব্যবহার: সকালের পানীয় হিসেবে জনপ্রিয় ।

উৎস: ইতালি । জনপ্রিয়তার র‍্যাংকিং: ২। বৈশিষ্ট্য: সমান পরিমাণ এসপ্রেসো, দুধ এবং দুধের ফেনা দিয়ে তৈরি।

৩. লাটে (Latte)

উপাদান: এসপ্রেসো, প্রচুর বাষ্পিত দুধ, সামান্য ফেনা । ব্যবহার: নরম, মৃদু স্বাদের কফি

উৎস: ইতালি । জনপ্রিয়তার র‍্যাংকিং: ৩ । বৈশিষ্ট্য: মৃদু কফির স্বাদ যা দুধের কারণে ক্রিমি হয়। 

৪. আমেরিকানো (Americano)

উপাদান: এসপ্রেসো, গরম পানি । ব্যবহার: ড্রিপ কফির বিকল্প হিসেবে

উৎস: ইতালি । জনপ্রিয়তার র‍্যাংকিং: ৪ । বৈশিষ্ট্য: এসপ্রেসোতে গরম পানি মেশানো হয়, যা স্বাদে হালকা কিন্তু সুগন্ধি হয়


৫. মোচা (Mocha)

উপাদান: এসপ্রেসো, চকোলেট সিরাপ, বাষ্পিত দুধ, হুইপড ক্রিম । ব্যবহার: মিষ্টি ডেজার্ট কফি

উৎস: যুক্তরাষ্ট্র । জনপ্রিয়তার র‍্যাংকিং: ৫ । বৈশিষ্ট্য: কফি ও চকোলেটের মিষ্টি মিশ্রণ যা কফি এবং ডেজার্টের মত অনুভূতি দেয়।


৬. ম্যাচিতো (Macchiato)

উপাদান: এসপ্রেসো, সামান্য দুধের ফেনা।  ব্যবহার: শক্তিশালী কফির বিকল্প

উৎস: ইতালি। জনপ্রিয়তার র‍্যাংকিং: ৬ । বৈশিষ্ট্য: এসপ্রেসোতে সামান্য দুধ যোগ করা হয়, যা স্বাদে শক্তিশালী এবং মৃদু।

৭. আফোগাতো (Affogato)

উপাদান: এসপ্রেসো, ভ্যানিলা আইসক্রিম । ব্যবহার: ডেজার্ট হিসেবে

উৎস: ইতালি । জনপ্রিয়তার র‍্যাংকিং: ৭ । বৈশিষ্ট্য: আইসক্রিম এবং কফির চমৎকার মিশ্রণ।


৮. ফ্রাপ্পে (Frappe)

উপাদান: ইনস্ট্যান্ট কফি, ঠাণ্ডা পানি, চিনি, দুধ, বরফ । ব্যবহার: ঠাণ্ডা কফি পানীয়

উৎস: গ্রিস । জনপ্রিয়তার র‍্যাংকিং: ৮ । বৈশিষ্ট্য: ঠাণ্ডা এবং মিষ্টি, যা গ্রীষ্মকালে উপভোগ্য।


৯. কল্ড ব্রু (Cold Brew)

উপাদান: কোর্স গ্রাউন্ড কফি বিন, ঠাণ্ডা পানি । ব্যবহার: ঠাণ্ডা পানীয় হিসেবে

উৎস: যুক্তরাষ্ট্র । জনপ্রিয়তার র‍্যাংকিং: ৯ । বৈশিষ্ট্য: ঠাণ্ডা পানিতে দীর্ঘ সময় ধরে মিশিয়ে তৈরি, যা কম অ্যাসিডিক এবং মিষ্টি স্বাদ দেয়।


১০. কোর্টাডো (Cortado)

উপাদান: এসপ্রেসো, বাষ্পিত দুধ । ব্যবহার: হালকা দুধের কফি

উৎস: স্পেন । জনপ্রিয়তার র‍্যাংকিং: ১০ । বৈশিষ্ট্য: কফি ও দুধের সমান মিশ্রণ যা মৃদু এবং সুগন্ধি। 


১১. আইরিশ কফি (Irish Coffee)

উপাদান: এসপ্রেসো, আইরিশ হুইস্কি, চিনি, হুইপড ক্রিম। ব্যবহার: বিশেষ অনুষ্ঠান ও ডেজার্ট কফি

উৎস: আয়ারল্যান্ড । জনপ্রিয়তার র‍্যাংকিং: ১১ । বৈশিষ্ট্য: কফি এবং হুইস্কির মিশ্রণ যা উষ্ণ এবং তৃপ্তিদায়ক।


১২. ফ্ল্যাট হোয়াইট (Flat White)

উপাদান: এসপ্রেসো, বাষ্পিত দুধ । ব্যবহার: মৃদু কফি পানীয়

উৎস: অস্ট্রেলিয়া/নিউজিল্যান্ড । জনপ্রিয়তার র‍্যাংকিং: ১২ । বৈশিষ্ট্য: এতে দুধ বেশি থাকে কিন্তু ফেনা কম থাকে, যা লাটের চেয়ে মসৃণ স্বাদ দেয়।


১৩. রিস্ট্রেটো (Ristretto)

উপাদান: এসপ্রেসো (কম পানি ব্যবহার করে) । ব্যবহার: শক্তিশালী এবং ক্ষুদ্র পরিসরের কফি শট

উৎস: ইতালি । জনপ্রিয়তার র‍্যাংকিং: ১৩ । বৈশিষ্ট্য: এটি এসপ্রেসোর তুলনায় গাঢ় এবং সুগন্ধি।


১৪. ক্যারামেল ম্যাকিয়াটো (Caramel Macchiato)

উপাদান: এসপ্রেসো, বাষ্পিত দুধ, ক্যারামেল সিরাপ । ব্যবহার: মিষ্টি পানীয় হিসেবে

উৎস: যুক্তরাষ্ট্র । জনপ্রিয়তার র‍্যাংকিং: ১৪ । বৈশিষ্ট্য: ক্যারামেলের মিষ্টি স্বাদ সহ, এটি বিশেষ মিষ্টি পানীয় হিসেবে জনপ্রিয়।

১৫. ডপ্পিও (Doppio)

উপাদান: ডাবল শট এসপ্রেসো ব্যবহার: বেশি শক্তিশালী কফির শট

উৎস: ইতালি । জনপ্রিয়তার র‍্যাংকিং: ১৫ । বৈশিষ্ট্য: এটি এসপ্রেসোর ডাবল শট, যা স্বাদে খুব শক্তিশালী এবং তৃপ্তিদায়ক।

এই কফিগুলি সারা বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে জনপ্রিয় এবং প্রতিটি কফির স্বাদ, উপাদান ও প্রস্তুতির পদ্ধতি আলাদা।


কফির উপকারিতা ও অপকারিতা ;

কফির উপকারিতা:

১. উদ্দীপনা বৃদ্ধি:

কফিতে উপস্থিত ক্যাফেইন স্নায়ুতন্ত্রকে উদ্দীপিত করে, যা মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বাড়াতে সাহায্য করে। এটি মনোযোগ এবং কাজের দক্ষতা বৃদ্ধি করে।

২. হজমের উন্নতি:

কফির মৃদু ল্যাক্সেটিভ বৈশিষ্ট্য হজম প্রক্রিয়া উন্নত করতে সাহায্য করে। এটি পাচনতন্ত্রকে সঠিকভাবে কাজ করতে সহায়তা করে।

৩. চর্বি পোড়ানোর ক্ষমতা:

ক্যাফেইন মেটাবলিজমকে দ্রুত করে তোলে, যা শরীরের চর্বি পোড়াতে সহায়ক। কফি ব্যায়ামের আগে পান করলে ফ্যাট বার্নিং প্রক্রিয়া দ্রুত হয়।

৪. ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমানো:

গবেষণা বলছে, যারা নিয়মিত কফি পান করেন তাদের টাইপ-২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কম থাকে। কফিতে উপস্থিত অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ডায়াবেটিস প্রতিরোধে ভূমিকা রাখে।

৫. অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের উৎস:

কফি প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সরবরাহ করে, যা দেহের কোষগুলোকে ক্ষতি থেকে রক্ষা করে এবং বার্ধক্যের প্রক্রিয়া ধীর করতে সহায়তা করে।

৬. মস্তিষ্কের সুরক্ষা:

কফি আলঝাইমার এবং পারকিনসন রোগের ঝুঁকি কমাতে সহায়ক হতে পারে। নিয়মিত কফি পান মস্তিষ্কের নিউরোডিজেনারেটিভ রোগের বিরুদ্ধে প্রতিরোধক হতে পারে।

৭. ডিপ্রেশন কমাতে সহায়ক:

কফির ক্যাফেইন মানসিক অবস্থাকে উন্নত করে এবং ডিপ্রেশনের ঝুঁকি কমায়। এটি মনোবল বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে।

কফি পান করার সুবিধা যেমন অনেক, তেমনি অতিরিক্ত কফি পান কিছু ক্ষেত্রে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। অতিরিক্ত ক্যাফেইন গ্রহণে উদ্বেগ, নিদ্রাহীনতা এবং হৃদস্পন্দন বৃদ্ধি হতে পারে। তবে পরিমিত কফি পান করলে এর উপকারিতা উল্লেখযোগ্য।

Chef Jahed

https://web.facebook.com/ChefJahed.bd

Post a Comment

Previous Post Next Post