সুশি কি | Sushi ki? ইতিহাস ? সুশি কত প্রকার ও কি কি ?

সুশি কি | Sushi ki ?

সুশি কি | Sushi ki ?
সুশি হচ্ছে এক প্রকার জাপানী খাবার যা ভিনেগার দেওয়া ভাত (鮨飯 সুশি-মেশি), সামুদ্রিক মাছ 'নেতা' (ネタ), সবজি ও নানারকমের ফল দিয়ে তৈরি করা হয়। এটি জাপানে ব্যাপকভাবে জনপ্রিয়। সময়ের সঙ্গে এই সুশি জাপানের সীমানা পেরিয়ে সারা বিশ্বের রসনায় গর্বভরে নিজের জায়গা করে নিয়েছে। সুশি এতটাই আন্তর্জাতিক হয়ে উঠেছে যে প্রতিবছর ১৮ জুন পালন করা হচ্ছে আন্তর্জাতিক সুশি দিবস।সুশি সাধারণত বাদামি অথবা সাদা ভাত দিয়ে তৈরি হয়। এতে একধরনের সামুদ্রিক মাছ দেওয়া হয় যা সাধারনত কাঁচা অবস্থায় থাকে; কিন্তু কখনও কখনও সুশিতে ভাজা মাছও দেওয়া হয়ে থাকে। সুশি পরিবেশন করা হয় সাধারনত আদা, মুলা, সয়া সস, ইত্যাদি দিয়ে।

সুশির স্বাদ কেমন ?

সুশির সাধারণত একটি শক্তিশালী গন্ধ থাকে তবে এটি মূলত নিরপেক্ষ, ট্যাঞ্জি এবং মিষ্টি কারণ এটি কাঁচা মাছ, ভাত এবং সবজি দিয়ে তৈরি। যেহেতু বিভিন্ন ধরণের সুশি তৈরি করতে বিভিন্ন উপাদান ব্যবহার করা হয়, স্বাদ বর্ণনা করা কঠিন হতে পারে, তবে আপনি এখনও স্বাদের সংমিশ্রণ উপভোগ করতে সক্ষম হবেন।

সুশি ইতিহাস ?

জাপানি ভাষায়, সুশি অনুবাদ করে "এটি টক।" এটি ভিনেগারে রান্না করা সুশি চালকে বোঝায়। বর্তমান সুশি খাবারটির সম্ভাব্য উৎস নারে-জুশি( 馴れ寿司, 熟寿司) নামক একধরনের খাবার, যা দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ায় তৈরি হয়। এতে নুনে জারিত মাছ এমনকী কয়েক মাস পর্যন্ত ফারমেন্টেড ভাতের মধ্যে সংরক্ষিত করা হত। ভাতের ল্যাক্টো-ফারমেন্টেশন মাছকে নষ্ট হওয়ার থেকে রক্ষা করত। কিন্তু মাছটি খাবার আগে ঐ ভাত ফেলে দিতে হত। সম্ভবত মেকং নদী্র তীর অঞ্চল এই রান্নার উৎপত্তিস্থল। এইধরনের প্রাচীন সুশি একটাসময় জাপানীদের কাছে প্রোটিনের এক গুরুত্বপূর্ণ উৎসে পরিণত হয়। সুশি শব্দটির উৎস প্রাচীন একটি জাপানী শব্দ, যার অর্থ 'টক'। এইধরনের মাছের স্বাদ খানিকটা টক টক হয় বলেই সম্ভবত এই বিশেষ রান্নার নাম 'সুশি'। তবে বর্তমান 'সুশির' সাথে এই 'নারে-জুশি'র মিল যৎসামান্যই। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে 'নারে-জুশি' রান্নাটি এখনও জাপানে চালু আছে।

এখনকার সুশির এক উল্লেখযোগ্য উপাদান ভিনেগার। যতদূর জানা যায়, জাপানের মুরোমাচি আমলে (১৩৩৬ -১৫৭৩ খ্রিঃ) নারে-জুশি'র সঙ্গে ভিনেগার যোগ করা শুরু হয়। এর ফলে একদিকে যেমন খাবারের স্বাদ বৃদ্ধি পায়, অন্যদিকে খাদ্যের সংরক্ষণও আরও দীর্ঘস্থায়ী হয়। ভাতের সাথে ভিনেগার মেশানো শুরু হতে টক স্বাদ আনার উদ্দেশ্যে ভাতের ফারমেন্টেশন ঘটানোর প্রয়োজনিয়তা কমে যেতে ধীরে ধীরে এর পরে সুশি রান্নার পদ্ধতিতে ফারমেন্টেশন ঘটানোর প্রক্রিয়াটি পরিত্যক্ত হয়। এরপরে জাপানের ওসাকা অঞ্চলে ধীরে ধীরে সুশি বানানোর পদ্ধতিতে এমন কিছু বৈশিষ্ট্য যোগ হয় যার ফলে তা আধুনিক সুশির অনেকটাই কাছাকাছি এসে পড়ে। এর মধ্যে অন্যতম হল সামুদ্রিক খাদ্য ও ভাতের মিশ্রণকে একটি কাঠের, মূলত বাঁশের খাপে চাপ দিয়ে ভরে একটা রোলের মতো আকৃতিপ্রদান করা। এইধরনের সুশি "ওশি-জুশি' নামে পরিচিত।

আজকের দিনে 'সুশি' প্রস্তুতির ক্ষেত্রে ভিনেগারে ভেজানো ভাতের উপরে যে টাটকা মাছ দেওয়ার চল, তা বাস্তবে এডো যুগের (১৬০৩ - ১৮৬৮ খ্রিঃ) আগে আরম্ভ হয়নি। বর্তমানে যে পদ্ধতিতে নিগিরিজুশি প্রস্তুত করা হয়, তা ১৮২০ - ৩০'এর দশকের তৎকালীন এডো (বর্তমান টোকিও) শহরে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। কথিত আছে, সে' সময়ে শহরের প্রখ্যাত শেফ হানায়া ইয়োহেই রিওগোকু অঞ্চলে অবস্থিত তাঁর রেস্তোরাঁতে ১৮২৪ সালে প্রথম এই খাদ্যের প্রচলন করেন।টোকিও উপসাগর বা এডো-মায়ে থেকে ধরা টাটকা মাছ দিয়ে এইধরনের সুশি বানানো হত বলে সেইসময় এর আরেক জনপ্রিয় নাম দাঁড়ায় এডোমায়েজুশি; নামটি এখনও কোথাও কোথাও সুশির একটি প্রতিশব্দ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এখানে উল্লেখ্য যে, জাপানী ভাষার রেনডাকু ব্যঞ্জনরীতি অনুসারে 'সুশি' শব্দটির সামনে যখনই কোনও উপসর্গ যুক্ত হয়, তখনই তার উচ্চারণ কিছুটা পালটে গিয়ে দাঁড়ায় '-জুশি'। যেমন - ওশি-জুশি বা নিগিরিজুশি।

সুশি কত প্রকার ও কি কি ?

সুশি সম্পর্কে একটি মহান জিনিস হল যে প্রত্যেকের জন্য একটি টাইপ আছে। অ্যাভোকাডো রোলের নিখুঁত সরলতা উপভোগ করার জন্য আপনাকে কাঁচা মাছও পছন্দ করতে হবে না। বিভিন্ন ধরনের সুশি এবং সাধারণ উপাদান সম্পর্কে জানতে পড়তে থাকুন।

1. সাশিমি

বরফের উপর সালমন সাশিমি

টেকনিক্যালি, সাশিমি এক ধরনের সুশি নয় কারণ এতে কোনো ভাত নেই। আমরা এটিকে আমাদের সুশি গাইডে অন্তর্ভুক্ত করছি কারণ এটি জাপানি খাবারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সাশিমি হল পাতলা করে কাটা মাছ বা মাংস, প্রায়শই কাঁচা পরিবেশন করা হয়। এটি যে কোনও ধরণের মাংস হতে পারে তবে মাছ এবং সামুদ্রিক খাবার হল সাশিমির সবচেয়ে সাধারণ প্রকার।

সাশিমিও রান্না করা যায়, যেমন উনাগির (গ্রিলড ঈল) ক্ষেত্রে। পঞ্জু, সয়া সস বা সয়া সসের বিকল্পের মতো এশিয়ান সসের সাথে ডাইকন মূলার বিছানায় সাশিমির টুকরো পরিবেশন করা সাধারণ । অন্য কোন টপিংস বা ফিলিংস যোগ করা হয় না কারণ সাশিমি মাছের তাজা স্বাদ হাইলাইট করার জন্য।

কাঁচা পরিবেশন করা যেকোনো সামুদ্রিক খাবারের জন্য, বিশ্বস্ত সরবরাহকারীদের কাছ থেকে আপনার মাছ সংগ্রহ করা গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের সুশি-গ্রেড ফিশ গাইডে আরও জানুন ।

সাশিমি ও সুশি পার্থক্য কি ?

সুশিতে সব সময় ভাত দেয়া হয়ে থাকে, কিন্তু যখন এটা সাশিমি তখন শুধু মাংস বা মাছের টুকরো কে বুজায়। প্রকৃতপক্কে সাশিমি "নো-রাইস সুশি" হিসাবে বিবেচনা করা যেতে পারে।

সাশিমি কত প্রকার ও কি কি ?

  • সেক - কাঁচা স্যামন
  • ইবি - রান্না করা চিংড়ি
  • আহি - কাঁচা টুনা
  • উনাগি - রান্না করা মিঠা পানির ঈল
  • হামাচি - কাঁচা হলুদ পুচ্ছ
  • ইউনি - কাঁচা সামুদ্রিক অর্চিন
  • টাকো - কাঁচা বা পোচড অক্টোপাস

2. নিগিরি সুশি

এটিতে ভাতের উপরে টপিং হিসেবে মাছ দেয়া থাকে।চপস্টিকের মধ্যে রাখা স্যামন সহ ঐতিহ্যবাহী জাপানি নিগিরি সুশি

নিগিরি হল এক ধরনের সুশি যা কাঁচা বা রান্না করা সামুদ্রিক খাবারের সাথে ভিনেগার করা চালের বালিশকে একত্রিত করে। স্বাদ এবং টেক্সচারের একটি নিখুঁত মিল তৈরি করতে এই দুটি উপাদানেরই প্রয়োজন। নিগিরি সুশিকে জাপানে একটি সরল খাবার হিসাবে বিবেচনা করা হয়, এটি পশ্চিমে এখানে উপভোগ করা জটিল সুশি রোলগুলির বিপরীতে।

নিগিরি বনাম সুশি

নিগিরি এবং সুশি (মাকি) এর মধ্যে পার্থক্য হল যে নিগিরিতে চাল একটি কামড়ের আকারের ঢিপিতে চাপা হয়, যখন মাকি সুশি একটি নলে গড়িয়ে রোলগুলিতে কাটা হয়। নিগিরিতে এক টুকরো মাছ সূক্ষ্মভাবে উপরে রাখা হয় এবং মাকি রোলগুলির ভিতরে ফিলিংস থাকে।

নিগিরির কত প্রকার ও কি কি?

  • ইবি নিগিরি - রান্না করা প্রজাপতি চিংড়ি
  • Tamago Nigiri - রান্না করা ডিমের অমলেট
  • উনাগি নিগিরি - ভাজা মিঠা পানির ঈল
  • সেক নিগিরি - কাঁচা সালমন
  • Hotate Nigiri - তাজা কাঁচা স্ক্যালপ
  • মাগুরো নিগিরি - কাঁচা টুনা

3. মাকি 

স্লেট উপর maki সুশি রোল

ভিনেগারযুক্ত চাল এবং ফিলিংস দিয়ে সামুদ্রিক শৈবালের একটি শীট স্তর দিয়ে মাকি সুশি তৈরি করা হয়। এটি দৃঢ়ভাবে পাতলা টিউবে পাকানো হয় এবং কামড়ের আকারের টুকরো টুকরো করে কাটা হয়। আপনি যখন মাকি সুশির টুকরোটি দেখবেন, তখন আপনি ভিতরে ভরাট, আঠালো চালের আবরণ এবং পাতলা সামুদ্রিক শৈবাল কাগজের আবরণ দেখতে পাবেন ( nori )।

মাকি সুশি অর্থ

জাপানি ভাষায়, মাকি মানে "রোল করা।" সমস্ত সুশি রোল যা ভিতরের অংশে ফিলিংস সহ সামুদ্রিক শৈবাল দিয়ে মোড়ানো থাকে সেগুলিকে মাকি সুশি হিসাবে বিবেচনা করা হয়।

মাকি রোল বনাম হ্যান্ড রোল

একটি মাকি রোল এবং হ্যান্ড রোল (টেমাকি) এর মধ্যে পার্থক্য হল যে মাকি সুশি দৃঢ়ভাবে পাকানো হয় এবং বেশ কয়েকটি কামড়ের আকারের টুকরো টুকরো করে কাটা হয়। একটি হ্যান্ড রোল আলগাভাবে একটি টিউব আকারে ঘূর্ণিত হয় এবং একটি পৃথক পরিবেশন হিসাবে পুরো খাওয়ার জন্য বোঝানো হয়।

মাকি রোলস কত প্রকার ও কি কি?

  • হোসো মাকি - শুধুমাত্র একটি ফিলিং সহ যে কোনও ছোট মাকি রোলকে হোসোমাকি সুশি হিসাবে বিবেচনা করা হয়।
  • কাপা মাকি - এই জনপ্রিয় মাকি রোলটি সামুদ্রিক শৈবাল, চাল এবং একটি শসা ভরাট দিয়ে তৈরি করা হয়।
  • টেক্কা মাকি - টেক্কা মাকিতে মাত্র তিনটি উপাদান রয়েছে - সামুদ্রিক শৈবাল, চাল এবং কাঁচা টুনা।
  • ফুটোমাকি - ফুটোমাকি মানে "ফ্যাট রোল" এবং এই মাকিতে বেশ কিছু ফিলিংস রয়েছে।


4. উরা মাকি

জাপানি ভাষায় উরা শব্দের অর্থ ‘উলটো’। অর্থাৎ মাকি সুশির উলটো ধরন হচ্ছে উরামাকি সুশি। এটিতে মাছের চারপাশে শৈবাল থাকে এবং তার চারপাশে থাকে ভাত

উরামাকি সুশি হল বাইরের দিকে ভাত দিয়ে ঘূর্ণিত সুশি এবং ভিতরে নরি। এই "ভিতর-আউট" রোলটি লস অ্যাঞ্জেলেসে একজন সুশি শেফ দ্বারা তৈরি করা হয়েছিল যিনি আমেরিকান গ্রাহকদের কাছে আবেদন করতে চেয়েছিলেন। মাচিতা ইচিরো লক্ষ্য করেছেন যে আমেরিকানরা ঐতিহ্যবাহী মাকি সুশিতে সামুদ্রিক শৈবাল মোড়ানো পছন্দ করে না, তাই তিনি ভিতরের দিকে সামুদ্রিক শৈবাল লুকিয়ে রেখেছিলেন।

ঐতিহ্যগত মাকি এখনও জাপানে পছন্দ করা হয়, এবং ইউরামাকি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সবচেয়ে জনপ্রিয় ধরনের সুশি। সুশি মেনুতে "স্পেশাল রোলস" হিসাবে উল্লেখ করা অনেক সুশি রোল হল উরামাকির প্রকার। আঠালো চালের সাথে লেগে থাকা তিলের বীজ দিয়ে উরামাকি ছিটিয়ে দেওয়া সাধারণ।

সুশি রোলস কত প্রকার ও কি কি?

  • ক্যালিফোর্নিয়া রোল - এই জনপ্রিয় রোলে কাঁকড়ার মাংস বা ইমিটেশন ক্র্যাব , অ্যাভোকাডো এবং শসা রয়েছে।
  • রেইনবো রোল - রংধনু রোলটি ক্যালিফোর্নিয়ার রোলের মতো, তবে টুনা, সালমন এবং হলুদ টেলের মতো কাঁচা মাছের রঙিন টুকরো দিয়ে টপিং করা হয়।
  • ড্রাগন রোল - একটি ড্রাগন রোলে শসা, গ্রিল করা ঈল এবং চিংড়ির টেম্পুরার একটি টুকরো আকৃতির আকৃতির অ্যাভোকাডো থাকে।
  • মশলাদার টুনা রোল - এই রোলের মশলাদার টুনা কাঁচা টুনাকে সূক্ষ্মভাবে কেটে শ্রীরচা এবং তিলের তেলের সাথে মিশিয়ে তৈরি করা হয়। এটি মসলাযুক্ত মেয়োর টপিং দিয়ে শেষ হয়েছে।

5. টে মাকি

কালো পটভূমিতে স্যামন, অ্যাভোকাডো এবং শসা সহ টেমাকি সুশি এটি কোণাকৃতির হয়ে থাকে

টেমাকি সুশি আমাদের তালিকার অন্যান্য ধরণের সুশি থেকে একটু আলাদা। একটি টেমাকি হ্যান্ড রোলে চাল, মাছ এবং অন্যান্য সুশি ফিলিংস দিয়ে ভরা একটি বড় সামুদ্রিক শঙ্কু থাকে। মাকি রোলসের বিপরীতে, টেমাকি সুশির সমান টুকরা তৈরি করে এমন সুনির্দিষ্ট পদ্ধতিতে রোল করা হয় না। একটি টেমাকি হ্যান্ড রোলটি একটু বেশি বিনির্মাণ করা হয় এবং এটি স্বতন্ত্র পরিবেশন হিসাবে হাতে খাওয়ার জন্য বোঝানো হয়।

সুশি Burrito কি?

সুশি বুরিটো, যাকে সুশি রিটোও বলা হয়, এটি হল টেমাকি সুশির সংমিশ্রণ যা গত দশকে এত জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। টেমাকি রোল এক হাতে ধরে রাখা যেতে পারে, একটি সুশি বুরিটো অনেক বড়। একটি ময়দার টর্টিলার পরিবর্তে, সুশিরিটোগুলি একটি বড় নরি চাদরে মোড়ানো থাকে এবং এতে চাল, মাছ এবং শাকসবজির মতো সাধারণ সুশি ফিলিংস থাকে।


6. চিরাশি

কাঠের পটভূমিতে বাটিতে চিরাশি

চিরাশি হল একটি স্বল্প পরিচিত ধরনের সুশি যাতে টপিংস দিয়ে আচ্ছাদিত সুশি চালের বিছানা থাকে। চিরাশি শব্দের অর্থ বিক্ষিপ্ত, এবং এটি সুশি চালের উপরে রাখা টপিংসকে বোঝায়। তবে শব্দটি দ্বারা বিভ্রান্ত হবেন না। পরিচ্ছন্নতা এবং নির্ভুলতা এই সুশি ডিশের উপরে টপিংগুলিকে "বিক্ষিপ্ত" করতে একটি ভূমিকা পালন করে।

চিরাশি কত প্রকার ও কি কি ?

চিরাশি সুশির বিভিন্ন বৈচিত্র রয়েছে, তবে সবচেয়ে জনপ্রিয় দুটি জাপানের টোকিও এবং ওসাকা থেকে এসেছে।

  • টোকিও স্টাইল (এডোমা চিরাশি) - চিরাশি সুশির এই শৈলীতে টুনা, স্যামন, স্ক্যালপস এবং স্কুইডের মতো কাঁচা সামুদ্রিক খাবারের টপিং রয়েছে।
  • ওসাকা স্টাইল (গোমোকু চিরাশি) - গোমোকু চিরাশি সুশি রান্না করা উপাদান দিয়ে তৈরি করা হয় এবং একটি অত্যন্ত আলংকারিক চেহারা রয়েছে। টপিং হিসাবে পদ্মমূল এবং মাছের রগ দেখতে সাধারণ ।

সুশি কি স্বাস্থ্যকর খাবার 

 এমন প্রশ্ন অনেকের মনেই উঁকি দেয়। যারা সুশি খেতে ভালোবাসেন এবং যারা এখনও সুশিতে অভ্যস্ত হয়ে উঠতে পারেননি, সবার মনেই সুশি সম্পর্কিত এই প্রশ্নটি কাজ করে। ওয়াশিংটন ডিসির ইন্টারন্যাশনাল ফুড ইনফরমেশন কাউন্সিল ফাউন্ডেশন এর নিউট্রিশন কমিউনিকেশন বিভাগের ম্যানেজার অ্যালিসা পাইক সুশি সম্পর্কে বলেন, ‘বেশ কিছু উপায়ে সুশি তৈরি করা যায়। যার মাঝে কিছু উপাদান যেমন- টুনা ও স্যালমন মাছ ব্যবহার করা হয়। যাতে প্রচুর পরিমাণ ওমেগা-৩ ও প্রোটিন থাকে। এছাড়া বেশিরভাগ সুশি রোলে ব্যবহার করা হয় ফ্রেশ শসা, যা থেকে পাওয়া যায় ভিটামিন-সি, কে ও পর্যাপ্ত আঁশ। সুশিতে ব্যবহৃত অ্যাভোকাডো থেকে মিলবে উপকারী মনোআনস্যাচুরেটেড ফ্যাট। এছাড়া মাকি সুশি রোল তৈরিতে ব্যবহৃত সিউইডে রয়েছে উচ্চমাত্রার আয়োডিন ও ফাইবার। পাশাপাশি সুশির সাথে খাওয়ার জন্য থাকা আদায় রয়েছে জিনজেরল ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। সব মিলিয়ে বলা যেতে পারে সুশি থেকে একসাথে পাওয়া যাবে ম্যাক্রোনিউট্রিয়েন্টস- কার্ব, ফ্যাট ও প্রোটিন। যা সুস্বাদের সাথে নিশ্চিতভাবে স্বাস্থ্যকরও।সুশি খুবই পুষ্টিকর, উদ্ভিজ ভিত্তিক খাবার। যা স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। এতে থাকা একইসাথে বিভিন্ন উপাদান ক্ষুধা নিবারনে চমৎকার, সাথে স্বাস্থ্য ভালো রাখতেও অবদান রাখবে।

কিভাবে সুশি বানানো বা সুশি রেসিপি ?

স্যামন ক্যালিফোর্নিয়া রোল

উপকরণ: 

পানি সোয়া এক কাপ, সুশি চাল ১ কাপ, রাইস ভিনেগার ৩ টেবিল চামচ, মিরিন ভিনেগার ২ চা-চামচ, লবণ ১ চিমটি, শসা অর্ধেকটা, স্যামন মাছ ৫০ গ্রাম, মেয়নেজ ৪ টেবিল চামচ, নরি ৪টি শিট, তিল আড়াই টেবিল চামচ, টবিকো ৪ চা-চামচ, পিকেলড জিঞ্জার পরিমাণমতো, ওয়াসাবি অল্প পরিমাণে, সয়া সস পরিমাণমতো।

প্রণালি: চুলার ওপর একটি সসপ্যানে পানি ও চাল একসঙ্গে বসান। পানি বলক না ওঠা পর্যন্ত অপেক্ষা করুন। আঁচ কমিয়ে ঢেকে দিন। চাল নরম না হওয়া পর্যন্ত চুলায় রাখুন। প্রায় ২০ মিনিটের মতো রাখতে হবে। এর মধ্যে চাল পানি শোষণ করে নেবে। চুলা থেকে সরিয়ে নিন সসপ্যান। এবার ভিনেগার, মিরিন ও লবণ ভাতে দিয়ে ভালোভাবে মেশান। কিছুটা ঠান্ডা হওয়ার জন্য ৫ মিনিট রেখে দিন। শসা লম্বা চিকন করে কেটে দিন। বাঁশের শিটের ওপর একটি নরি শিট রাখুন। কিছুটা ভাত নিয়ে নরি শিটের ওপর সমানভাবে চেপে চেপে বসান। কাজটি করার জন্য হাত ভিজিয়ে নিতে হবে। না হলে ভাত হাতে আটকে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে। চারপাশ দিয়ে এক থেকে তিন ইঞ্চির মতো জায়গা খালি রাখতে হবে। ওপর দিয়ে তিল ছড়িয়ে দিন। এবার ভাতসহ নরি শিটটি উল্টে ফেলুন। ওপরে স্যামন মাছ আর শসা রাখুন। বাঁশের চিকসহ পুরো জিনিসটি এবার রোল করুন। গড়িয়ে নেওয়ার সময় কিছুটা চাপ দিতে হবে। এতে ভেতরের উপকরণগুলো আঁটসাঁট হয়ে থাকবে। সমানভাগে কেটে দিন গোল আকার করে। ওপরে টবিকো ছড়িয়ে দিন। পিকেলড জিঞ্জার, ওয়াসাবি ও সয়া সস দিয়ে পরিবেশন করুন।


ভেজিটেবল মাকি রোল

উপকরণ:

পানি সোয়া এক কাপ, সুশি চাল ১ কাপ, রাইস ভিনেগার ৩ টেবিল চামচ, মিরিন ভিনেগার ২ চা-চামচ, লবণ ১ চিমটি, মুলা ১৫ গ্রাম, শসা অর্ধেকটা, মেয়নেজ ৪ টেবিল চামচ, নরি ৪টি শিট, তিল আড়াই টেবিল চামচ, টবিকো ৪ চা-চামচ, পিকেলড জিঞ্জার পরিমাণমতো, ওয়াসাবি অল্প পরিমাণে, সয়া সস পরিমাণমতো।

প্রণালি: চুলার ওপর একটি সসপ্যানে পানি ও চাল একসঙ্গে বসান। পানি বলক না ওঠা পর্যন্ত অপেক্ষা করুন। আঁচ কমিয়ে ঢেকে দিন। চাল নরম না হওয়া পর্যন্ত চুলায় রাখুন। প্রায় ২০ মিনিটের মতো রাখতে হবে। এর মধ্যে চাল পানি শোষণ করে নেবে। চুলা থেকে সরিয়ে নিন সসপ্যান। এবার ভিনেগার, মিরিন ও লবণ ভাতে দিয়ে ভালোভাবে মেশান। কিছুটা ঠান্ডা হওয়ার জন্য ৫ মিনিট রেখে দিন। শসা লম্বা চিকন করে কেটে দিন। মুলা পাতলা টুকরা করে কেটে শুকনা জায়গায় রাখুন। একটি বাঁশের মাদুরের ওপর নরির শিট রাখুন। কিছুটা ভাত নিয়ে নরি শিটের ওপর সমানভাবে চেপে চেপে বসান। কাজটি করার জন্য হাত ভিজিয়ে নিতে হবে। না হলে ভাত হাতে আটকে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে। চারপাশ দিয়ে এক থেকে তিন ইঞ্চির মতো জায়গা খালি রাখতে হবে। ওপর দিয়ে তিল ছড়িয়ে দিন। এবার ভাতসহ নরি শিটটি উল্টে ফেলুন। ওপরে শসা আর মুলা দিন। একটি উপকরণের ওপর আরেকটি উপকরণ রাখতে হবে, গুছিয়ে। বাঁশের চিকসহ পুরো জিনিসটি এবার রোল করুন। গড়িয়ে নেওয়ার সময় কিছুটা চাপ দিতে হবে। এতে ভেতরের উপকরণগুলো আঁটসাঁট হয়ে থাকবে। এবার বাঁশের চিকটি সরিয়ে নিন। প্লাস্টিকের কাগজটিও সাবধানে সরিয়ে নিন। ভাতের রোলটি সমান ভাগে কেটে দিন গোল আকার করে। ওপরে ক্রিম চিজ ছড়িয়ে দিন। পিকেলড জিঞ্জার, ওয়াসাবি ও সয়া সস দিয়ে পরিবেশন করুন।

Post a Comment

Previous Post Next Post