আরবীয় কুইজিন | মধ্যপ্রাচ্যের বিখ্যাত খাবার ও ইতিহাস | Arab Cuisine Bangla Knowledge for Chef

আরবের কুইজিন !

মধ্য প্রাচ্যের মুসলিম প্রধান দেশগুলো আরব বিশ্ব নামে পরিচিত। আরাবিক বা আরবিয়ান কুইজিন হচ্ছে আরবের রান্না যা আরব বিশ্বের মাগরেব থেকে মাশরিক পর্যন্ত ও আরব উপদ্বীপের বিভিন্ন আঞ্চলিক রন্ধনশৈলীর সমন্বয়ে গঠিত। এর অন্তর্গত রন্ধনশৈলী গুলো শতাব্দী প্রাচীন এবং মশলা, গুল্ম ও খাদ্য ব্যবসা সংস্কৃতির উপর উল্লেখযোগ্য প্রভাব রেখেছে। তিনটি প্রধান অঞ্চল মাঘরেব, মাশরিক  এবং আরব উপদ্বীপের রান্নায় অনেক সাদৃশ্য থাকলেও তাদের প্রত্যেকের নিজস্ব রন্ধন ঐতিহ্য রয়েছে। মুসলিম প্রধান অঞ্চল হওয়ার আরবের প্রতিটি দেশের খাবারই একদম হালাল, ফলে বর্তমানে আরবের খাবার পুরো পৃথিবী জুড়ে বেশ খ্যাতি কুড়িয়েছে। এসকল রান্নার উপর আবহাওয়া, চাষাবাদের সম্ভাব্যতা, ব্যবসার সম্ভাব্যতা ইত্যাদি বিষয় প্রত্যক্ষ প্রভাব রেখেছে। মাঘরেব এবং লেভান্ট অঞ্চলের রন্ধনশৈলীর বয়স তুলনামূলকভাবে কম যা গত শতাব্দীতে গড়ে উঠেছে। খালেজ অঞ্চলের রন্ধনপ্রণালী অনেক প্রাচীন। এই রন্ধনপ্রণালীগুলি শতাব্দীর পুরানো এবং উপাদান, মশলা, ভেষজ এবং পণ্যের ব্যবসার সংস্কৃতিকে প্রতিফলিত করে। অঞ্চলগুলির অনেক মিল রয়েছে, তবে অনন্য ঐতিহ্যও রয়েছে। রন্ধনপ্রণালীকে গ্রামীণ এবং প্রত্যন্ত অঞ্চলে ভাগ করা যায়। জলবায়ু, চাষাবাদ এবং পারস্পরিক বাণিজ্য দ্বারাও এসব প্রভাবিত হয়েছে। সৌদি আরব, কাতার, কুয়েত, আরব আমিরাত ইত্যাদি দেশের খাবার এই অঞ্চলের আবহাওয়া ও জলবায়ু অন্যান্য অঞ্চলের থেকে ব্যতিক্রম বলে এখানকার সংস্কৃতিতেও আছে আলাদা বৈচিত্র্য। খাদ্যাভ্যাসে আছে বিভিন্ন বৈচিত্র্যতা যা আরবের সংস্কৃতিকে করে তুলেছে আরও প্রভাবশালী। 

লেভান্টাইন এর অন্তর্ভুক্ত কুইজিন গুলো হলো :
সিরিয়ান  কুইজিন,লেবানিজ  কুইজিন, জর্ডানীয় এবং ফিলিস্তিনি কুইজিন আরব উপদ্বীপ বাহরাইনি কুইজিন,আমিরাতি কুইজিন,কুয়েতি কুইজিন,ওমানি কুইজিন,কাতারি কুইজিন,সৌদি আরবের কুইজিন এবং ইয়েমেনি কুইজিন।


মাগরেব এর অন্তর্ভুক্ত কুইজিন গুলো হলো :
লিবিয়ান কুইজিন, আলজেরীয় কুইজিন, মরোক্কান কুইজিন, তিউনিশীয় কুইজিন, পশ্চিমা সাহারান কুইজিন এবং মৌরিতানীয় কুইজিন।



মধ্যযুগীয় কুইজিন এর ইতিহাস :

রুটি

সাদা রুটি বড়জিদজ উচ্চ মানের গমের আটা দিয়ে তৈরি করা হয়েছিল, রাকাক রুটির মতো কিন্তু ঘন, গাঁজন করা ময়দা সাধারণত খামির এবং "বেকারের বোরাক্স" (বুরাক) দিয়ে খামির করা হত এবং একটি তন্দুরে বেক করা হত। এই রুটি বর্ণনা করে একটি কাব্যিক শ্লোক

সস

ঐতিহাসিক আরবি রান্নার বই থেকে সস এর অসংখ্য রেসিপি টিকে আছে। ইবনে সায়ার আল-ওয়াররাক রচিত দশম শতাব্দীর কিতাব আল-তাবিখ বিভিন্ন উৎসের জন্য ভুনা মাছের সাথে পরিবেশন করার জন্য বেশ কয়েকটি রেসিপি দেয়।

ইব্রাহীম ইবন আল-মাহদির কাছে দুটি সিবাগ রেসিপি দেওয়া হয়, একটি সরিষার সসে রু, ক্যারাওয়ে, থাইম, হিং এবং ক্যাসিয়া যোগ করে তৈরি করা হয় এবং অন্যটি রসুন, আখরোট, সরিষা, ভিনেগার এবং মশলা দিয়ে ভিনেগার-ভেজানো কিশমিশ দিয়ে তৈরি করা হয়। যেমন হিং এবং মৌরি।

সপ্তম আব্বাসীয় খলিফা আল-মামুনের রেসিপি সংগ্রহ থেকে আসে একটি সিবাঘ যা ঘোল, আখরোট, রসুন, জলপাই তেল এবং মুরি দিয়ে তৈরি করা হয়।

আদা, ডালিম, স্পাইকেনার্ড এবং লবঙ্গের মতো মশলা দিয়ে প্রস্তুত পোল্ট্রি খাবারের জন্য অনুরূপ রেসিপি রয়েছে।

মিষ্টি

"রাজাদের খাবার" এবং "সমস্ত মিষ্টির সর্বোচ্চ বিচারক" হিসাবে বর্ণনা করা হয়েছে, লাউজিনাজ একটি বাদাম-ভিত্তিক মিষ্টান্ন যা আন্দালুসীয় প্রভাব থেকে 13 শতকের মধ্যে মধ্যযুগীয় ইউরোপীয় খাবারে প্রবেশ করেছিল, ক্রুসেডারদের এবং রান্নার বইগুলির ল্যাটিন অনুবাদগুলি ফিরিয়ে দিয়েছিল। মধ্যযুগীয় গ্রন্থ থেকে জানা খাবারের দুটি সংস্করণ রয়েছে 

লাউজিনাজ মুঘররাক বা "ভেজা লাউজিনাজ" অটোমান খাবার বাকলাভা-এর পূর্ববর্তী সংস্করণ বলে মনে করা হয়। এটি তৈরি করা হয়েছিল পাতলা বাদাম (এবং কখনও কখনও অন্যান্য বাদাম যেমন পেস্তা বা আখরোটের মতো), গোলাপ জল এবং কখনও কখনও মাস্টিক, অ্যাম্বারগ্রিস বা কস্তুরীর মতো বিলাসবহুল স্বাদের মিশ্রণে ভরাট করে।

লাউজিনাজ ইয়াবিস তৈরি করা হতো বাদাম দিয়ে ফুটন্ত মধু বা চিনিতে রান্না করা হয় যতক্ষণ না ট্যাফির মতো সামঞ্জস্য না হয়। কাঁচা সংস্করণটি, সামঞ্জস্যপূর্ণভাবে মার্জিপানের কাছাকাছি, বাদামকে চিনির সাথে মিশিয়ে এবং কর্পূর, কস্তুরী এবং গোলাপ জলের সাথে স্বাদযুক্ত করে তৈরি করা হয়েছিল। সমাপ্ত মিষ্টান্ন প্রাণী বা অন্যান্য আকারে ঢালাই করা হয়েছিল, বা বর্গাকার এবং ত্রিভুজগুলিতে কাটা হয়েছিল।

শাকসবজি

শাকসবজির মধ্যে রয়েছে লিক, এন্ডাইভ, মেলিলট, মেথি, ওকড়া, পেঁয়াজ, পার্সলেন, ইহুদির মালো এবং মূলা। সিদ্ধ অ্যাসপারাগাস জলপাই তেল এবং মুরি দিয়ে পরিবেশন করা হয়। রান্নার জলকে মধু দিয়ে মিষ্টি করা যেতে পারে এবং ধনেপাতা, রুই, মৌরি এবং কালো মরিচ দিয়ে পানীয় করা যেতে পারে এবং মধু দিয়ে নিজে থেকে পানীয় হিসাবে ব্যবহার করা যেতে পারে বা ওয়াইনে যোগ করা যেতে পারে।

কিছু শাকসবজি কাঁচা খাওয়া হয়, তবে নিম্নলিখিতগুলি সাধারণত সেদ্ধ করা হয়: অ্যাসপারাগাস, ফুলকপি, সাদা সয়া বিন, লিকস, ওরাচ, বিভিন্ন ধরণের মাশরুম যা ঘুশিনা নামে পরিচিত চার্ড, বাঁধাকপি, গাজর, শালগম, তাজা মৌরি এবং বেগুন।

কিছু উদ্ভিজ্জ খাবার ঠান্ডা পরিবেশন করা হয়। এই জাতীয় খাবারের একটি উদাহরণ হল বেগুন ভাজা পেঁয়াজ, তাজা ভেষজ এবং জলপাই তেল দিয়ে সাজানো গাঁজনযুক্ত সস, ভিনেগার এবং ক্যারাওয়ে। বেশ কয়েকটি ঠান্ডা বেগুনের খাবার রয়েছে যা একই রকম, কিছু ধূমপান করা বেগুন দিয়ে তৈরি, আখরোট বা বাদামের মতো বাদাম যোগ করে এবং কখনও কখনও জাফরান, ক্যাসিয়া এবং গালাঙ্গালের মতো বিভিন্ন মশলা যোগ করে।

আরবের কুইজিনের ইতিহাস ও খাদ্যাভ্যাস :

বিভিন্নরকম আরবীয় সালাদঃ আরবীয় সালাদ, ফাত্তুস, ফিলিস্তিনি সালাদ, মাতবুখা, তাব্বুলেহ, রাহেব।
আরব রন্ধনশৈলী বিশেষ ধরনের অনেক সময় মৌলিক খাবার ও মশলা ব্যবহার করে। এরকম কিছু খাবার হচ্ছেঃ

মাংস: ভেড়া এবং মুরগীর মাংস সব থেকে বেশি ব্যবহৃত হয়। পাশাপাশি গরু-ছাগলের মাংসের প্রচলন আছে। কিছু কিছু অঞ্চলে অন্যান্য পাখিজাতীয় প্রাণীর মাংস খাওয়া হয়। ভূমধ্যসাগর, আটলান্টিক সাগর ও লোহিত সাগর উপকূলের আরব অধিবাসীরা মাছ খেয়ে থাকে। ইসলামী আইনের কারণে মুসলমানদের জন্য শূকরের মাংস হারাম। ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক উভয় কারণে আরবীয় মুসলমানেরা পোর্ক বর্জন করলেও খ্রিস্টান আরবেরা শুকরের মাংস খেয়ে থাকে। বিশেষ করে লেবানন খ্রিস্টানদের কাছে হ্যাম খুবই জনপ্রিয়

দুগ্ধজাত পণ্যঃ দুগ্ধজাত পণ্যের বিস্তৃত ব্যবহার হয় বিশেষ করে দই, পনির, মাখন ইত্যাদি।
গুল্ম ও মশলা: মশলা ব্যবহারের পরিমাণ ও ধরন অঞ্চল থেকে অঞ্চলে আলাদা হয়। জিরা, জাফরান, গোলমরিচ, হলুদ, মৌরি ইত্যাদি মশলার ব্যবহার হয়। বারাহাত, র‌্যাস এল হ্যানৌত, যা'আতার, হ্যারিসা ইত্যাদি মিশ্র মশলার ব্যবহার আছে।

পানীয়: শীতল পানির তুলনায় গরম পানীয় পরিবেশনের হার বেশি। মধ্য প্রাচ্যের দেশগুলোতে কফি এবং মাঘরেব অঞ্চলে চা পরিবেশন সবার শীর্ষে। জর্দান, সিরিয়ার কিছু অংশে, মরোক্কো এবং আলজেরিয়ায় চা গুরুত্বপূর্ণ পানীয়। অন্যান্য আরবীয় পানীয়ের মধ্যে আছে আন্দালুসিয় হর্তাচাতা এবং মাগরেবী এভাক্যাডো স্মুদি।

শস্য: চাল প্রধান খাদ্য এবং অধিকাংশ খাবারে ব্যবহৃত হয়। রুটি তৈরীর প্রধান উপকরণ গম। সুজির ব্যবহারও অধিক পরিমাণে হয়।

ডাল: সব ধরনের ডাল ব্যবহার হয়।
সবজি: আরব ভূখন্ডে সব্জির ব্যবহার তুলনামূলকভাবে কিছুটা কম। এখানে গাজর, বেগুন, ঢেঁড়স, পেঁয়াজ, জলপাই ইত্যাদি সব্জির ব্যবহার হয়।
ফল: আরব রন্ধনশৈলীতে ব্যবহৃত ফলের মধ্যে আছে বেদানা, খেঁজুর, কমলা, ডুমুর, লেবু, তরমুজ, আঙুর, পিচফল ইত্যাদি।

বেদুইনদের খাদ্যাভ্যাস :

আরব উপদ্বীপ, মধ্যপ্রাচ্য এবং উত্তর আফ্রিকার বেদুইনেরা প্রধানত খাবার হিসেবে খেঁজুর, শুকনো ফল, বাদাম, গম, বার্লি, চাল এবং মাংস খেয়ে থাকে। বড় আকারের প্রাণী যেমন গরু, ভেড়া, ছাগল, উট ইত্যাদি মাংসের সাধারণ উৎস। তারা দুধ, পণির, দধি, ঘি ইত্যাদিও খেয়ে থাকে। তারা বিভিন্ন প্রকার শুকনো ডাউল ব্যবহার করে থাকে যেমন ছোলা ও মসুর। মিষ্টি কুমড়োর মত সব্জির ব্যবহার আছে বেদুইনদের মাঝে। তারা বিভিন্ন রকম চা খেয়ে থাকে যেমন ভারবেনা চা, আরবীয় চা, মাঘরেবি মিন্ট চা বা আরবীয় কফি ইত্যাদি। তরতাজা হওয়ার জন্যে প্রতিদিন পানীয় পানের বিরতি এদের প্রিয় ঐতিহ্য। এরা খব্জ নামের রুটি খেয়ে থাকে যা খালেজ অঞ্চলের পাশাপাশি মাগরেব অঞ্চলেও জনপ্রিয়। বেদুইনেরা মার্কা, ঝোল, তাজিনেস ইত্যাদি ঐতিহ্যবাহী খাবার তৈরী করে থাকে। সকালের নাস্তায় এরা ভাজা ডাল, রুটি, বাদাম, শুকনো ফল, দই, পনির এবং চা অথবা কফি খেয়ে থাকে। এরা হালকা খাবার হিসেবে বাদাম এবং শুকনো ফল খেয়ে থাকে।

আরবের কুইজিন খাবার: 

সৌদি আরব – এর বিখ্যাত খাবার

১. Basbousa বাসবোসা
আরব খাবার
সৌদি আরব সহ মধ্য প্রাচ্যের বেশিরভাগ মুসলিক দেশগুলোতে বাসবোসা একটি জনপ্রিয় মুখরোচক খাবার। বাসবোসা মূলত এক ধরনের কেক।বাসবোসা তৈরির জন্য দই, দুধ, চিনি, ডিম, ভ্যানিলা এসেন্স সহ আরও গুরুত্বপূর্ণ উপাদান ব্লেন্ডারে মিক্স করে নেয়া হয় প্রথমে।তারপর সবগুলো উপাদান মাপমতো পাত্রে ঢেলে ওভেনে বেক করে নামিয়ে নেয়া হয়। উপরে পছন্দ মতো সিরাপ দিয়ে ডেকোরেশন করে পরিবেশন করা হয় সুস্বাদু বাসবোসা।

২. Baklava বাকলাভা
বাকলভা
সৌদি আরবসহ অন্যান্য আরব দেশগুলোতে জনপ্রিয় ভিন্নধর্মী ডেজার্ট আইটেম। বর্তমানে সুস্বাদু এই খাবারটি নিজের জায়গা দখল করে নিয়েছে বাঙালির প্লেটেও। বাকলাভা তৈরি করা হয় মূলত বাটার, সল্ট, ফিলো শিট, ও চিনির সিরা বা মধু দিয়ে। ফিলো শিট সঠিক ভাবে সেট করে প্রথমে বেকিং করে নিয়ে তার ওপরে বাটার ব্রাশ করে আবারও কয়েকটি সিট দিয়ে পুরোপুরি বেকিং করে নিজের পছন্দ মতো কেটে নিতে হবে। তাপর চিনির সিরা বা মধু দিয়ে কোট করে পরিবেশেন করা হয় মজাদার বাকলাভা।

৩. Mandi মেন্দি
আরব বিশ্বের বিরিয়ানি জাতীয় খাবারের মধ্যে মেন্দি খুবই ঐতিহ্যবাহী একটি খাবার। সৌদি আরব ও ইয়েমেনে রাতের আয়েশি খাবার হিসেবে মেন্দি পরিবেশন করা হয়। মেন্দি রান্নার মূল উপকরণ চাল, মাংস এবং মেন্দি পাউডার। মেন্দি পাউডার টাই মূলত এই খাবারের মূল টেক্সচার ধরে রাখে। মেন্দি পাউডার হলো বিভিন্ন শুকনো মসলা দিয়ে তৈরি করা এক প্রকার গুড়ো মসলা। রায়তার সাথে আরবের অথেনটিক মেন্দি হলে মেনুতে আর কি চাই!

৪. Sambusak সামবোসা হালওয়া
সৌদি আরবের উল্লেখযোগ্য মিষ্টি জাতীয় খাবার সামবোসা হালওয়া। সামবোসা হালওয়া দেখতে আমাদের দেশীয় সমুচার মতো ত্রিকোনাকার। উপরের কোটিং হয় ময়দা দিয়ে এবং ভেতরে থাকে সুস্বাদু পুর। সামবোসা হালওয়ার পুর তৈরিতে ব্যবহার করা হয় চিনি, জাফরান গুঁড়ো, এলাচি ও পেস্তা বাদাম। বিকেলের মুখরোচক খাবার হিসেবে সামবোসা হালওয়া খাওয়ার প্রচলন অনেক আগে থেকেই।

৫. Mahalabia মাহালাবিয়া
মাহালাবিয়া খাবার
সৌদি সহ অন্যান্য আরব দেশগুলোতে জনপ্রিয় ডেজার্ট আইটেম মাহালাবিয়া। মাহালাবিয়ার স্বাদ অনেকটা আমাদের দেশের পুডিং এর মতো। গরুর দুধ, পাউডার দুধ, কনডেস্ট মিল্ক, চিনি ও কর্নফ্লায়ার একসাথে জাল করে মাহালাবিয়ার বেইজটা তৈরি করা হয়। ট্রান্সপারেন্ট গ্লাসে ঢেলে ঠান্ডা করে তার উপরে রোজ সিরাপ ও বাদাম গুঁড়ো দিয়ে পরিবেশন করা হয় মজাদার ডেজার্ট মাহালাবিয়া।

৬. Tharid তাহরিদ
তাহরিদ এক ধরনের পাতলা রুটি। আরবরা বিশেষ পদ্ধতিতে অথেনটিক কৌশলে এই রুটি তৈরি করে। তাহরিদ রুটি খাওয়া হয় মাংস দিয়ে। ঝোল ঝোল মাংস রান্না করে রুটির উপরে দিয়ে পরিবেশন করা হয়। সৌদি আরবের বহুল প্রচলিত ও জনপ্রিয় খাবার তাহরিদ রুটি ও ঝোল সহ মাংস।

৭. Bamia বামিয়েহ
ভেড়ার মাংস দিয়ে রান্না করা সৌদি আরবের খুবই জনপ্রিয় একটি খাবার বামিয়েহ। এই রান্নার মূল উপকরণ ভেড়ার মাংস। বিভিন্ন ধরনের মসলা দিয়ে বামিয়েহ রান্না করা হয়। তবে প্রধান যে মসলা গুলো খাবারের স্বাদ আনে তা হলো রসুন, হলুদ ও টমোটো। পেয়াজ ভেজে সব মসলা ও ভেড়ার মাংস কষিয়ে সিদ্ধ হওয়া পর্যন্ত রান্না করা হয়।

৮. Khubus খবুজ
খবুজ এক ধরনের রুটি, দেখতে অনেকটা বাংলাদেশের তুন্দল রুটির মতো। সকালের নাশতা হিসেবে সৌদি আরবের হোটেল গুলোতে খবুজ রুটি বিক্রি করা হয়। এই রুটির দামও তুলনামূলক অনেক কম বলে সবার কাছে বেশ জনপ্রিয়। ডাল, মুরগির মাংস বা অন্যান্য তরকারির সাথে খবুজ রুটি খাওয়া হয়।

৯. Tamiya Mushakkal তামিয়া মোশাক্কেল
তামিয়া মোশাক্কেল সৌদি আরবের স্ট্রিট ফুড গুলোর মধ্যে অন্যতম। এটি একধরনের মিক্সড স্যান্ডুইচ। খবুজ রুটি অর্ধেক করে তার ভেতরে বিভিন্ন উপকরণ ঢুকিয়ে তামিয়া মোশাক্কেল তৈরি করা হয়। ভেতরে দেয়া উপকরণ গুলো হলো: পিস কাটা ডিম, শসা, টমোটো, ফ্রেঞ্চ ফ্রাই, পিয়াজু, সস ও মেয়োনিজ।

১০. Kabsa খাবসা
সৌদি আরবের সবথেকে জনপ্রিয় ঐতিহ্যবাহী খাবার খাবসা। এটা অনেকটা চিকেন বিরিয়ানির মতো। আস্থ মুরগি বা একটু বড় সাইজের করে কাটা মুরগি সব ধরনের মসলায় রান্না করে সেখান থেকে মাংস উঠিয়ে নেয়া হয়। মসলার মধ্যে বাসমতী চাল রান্না করে বড় থালায় পোলাও নিয়ে মাঝখানে মাংস দিয়ে পরিবেশন করা হয় বিখ্যাত খাবসা।

ফিলিস্তিন এর বিখ্যাত খাবার :

১.  Musakhanমুসাখান
ফিলিস্তিনের ঐতিহ্যবাহী খাবার মুসাখান। মুসাখান রান্নার বিশেষত্ব হলো এতে ব্যবহৃত অলিভ অয়েল। রান্নায় অলিভ অয়েল ব্যবহার করা ফিলিস্তিনিদের একটি সাধারণ বিষয়। তবে মুসাখান এই অলিভ অয়েলের জন্যই বহুল জনপ্রিয়। বেশি করে পিয়াজ, অন্যান্য মসলা ও অলিভ অয়েল দিয়ে মুরগির মাংস রান্না করা হয় এবং এই খাবারটি টেবুনের রুটির সাথে পরিবেশন করা হয়।

২. Maqluba মাকলুবেহ
ফিলিস্তিনি খাবার
ফিলিস্তিনের প্রথম জাতীয় খাবার মাকলুবেহ। এই খাবারের পুষ্টি উপাদানের থেকেও সাংস্কৃতিক সমৃদ্ধির জন্য এটি বেশি জনপ্রিয়। তাছাড়া মাকলুবেহ তৈরির উপকরণ গুলো বেশ সহজলভ্য ও তুলনামূলক সাশ্রয়ী হওয়ার ফলেও এটি জনপ্রিয়তা পেয়েছে। মাকলুবেহ তৈরি হয় চাল, মুরগির মাংস ও সবজি দিয়ে। প্রতিটি উপাদান ভেজে ও ভাত রান্না করে স্তরে স্তরে সাজিয়ে মাকলুবেহ পরিবেশন করা হয়। শুক্রবার সাধারণত ফিলিস্তিনের বেশিরভাগ বাড়িতেই এই খাবারটি খাওয়া হয়।

৩. Sumagiyya সুমাগিয়াহ
সুমাগিয়াহ ফিলিস্তিনের একটি আদিবাসী খাবার। সময়ের সাথে সাথে এই খাবারটি বিলুপ্তির পথে। তবে এখনও বিয়ে বাড়িতে মেহেন্দির রাতে বা ঈদের সময় সুমাগিয়াহ খাওয়ার প্রচন রয়েছে। কাঁচা মরিচ, পেয়াজ, আচার এবং অলিভ অয়েল দিয়ে খাবারটি পরিবেশন করা হয়।

৪. Maftoul  মাফতউল
মাফতউল ফিলিস্তিনের বহুল প্রচলিত ও জনপ্রিয় স্যুপ জাতীয় খাবার। মাফতউল এতো জনপ্রিয় খাবার হওয়ার কারণ হলো এটি তৈরিতে বিশেষ নিয়মমাফিক কোনো উপকরণ ব্যবহার করতে হয় না। ফ্রিজে থাকা যে কোনো সবজি দিয়েই এটি রান্না করা যায়। মুরগির সাথে কুমড়া, পেয়াজ, টমেটো বা যে কোনো সবজি দিয়ে মাফতউল রান্না করা হয়।

৫. Mafroukeh মাফরাকেহ
মাফরাকেহ ফিলিস্তিনের খুবই সাধারণ একটি খাবার। এই খাবারটি তৈরির মূল উপকরণ ডিম এবং আলু। আলু কিউব করে কেটে তার সাথে বিভিন্ন মসলা, অলিভ অয়েল ও ডিম দিয়ে রান্না করা হয়। ভাত বা রুটির সাথে সাধারণত মাফরাকেহ পরিবেশন করা হয়।

৬. Fatayer ফাতায়ের
ফিলিস্তিনের অন্যতম জনপ্রিয় মুখরোচক খাবার ফাতায়ের। এই খাবারটি তৈরি করার জন্য ব্যবহার করা হয় পালং শাক, মাংস ও অন্যান্য মসলা। পাতলা শিট তৈরি করে তার মধ্যে সব উপকরণের তৈরি পুর ব্যবহার করে উপরে অলিভ অয়েল দিয়ে ব্রাশ করা হয়। তারপর উপরে সাদা তিল দিয়ে ডেকোরেশন করে বেক করা হয়। ফাতায়ের সাধারণ চিলি সস বা মেয়োনিজ এর সাথে পরিবেশন করা হয়।

কাতার -এর বিখ্যাত খাবার :

১. Majboos মাজবুস
কাতারের ঐতিহ্যবাহী ও জনপ্রিয় খাবার মাজবুস। সুগন্ধি চাল ও মাংস দিয়ে এই খাবারটি তৈরি করা হয়। ভেড়া, উট কিংবা অন্যান্য হালাল প্রানীর মাংস মাজবুস রান্নায় ব্যবহার করা হয়। এই খাবারটি এতোটাই জনপ্রিয় যে কাতারের প্রায় প্রতিটা রেস্টুরেন্টেই এটি পাওয়া যায়। তবে তাদের নিজস্ব বৈচিত্র্যের কারনে একেক রেস্টুরেন্টে খাবারটির স্বাদও একেক রকম হয়।

২. Balaleet ব্যালালেত

ব্যালালেত কাতারের বেশ জনপ্রিয় একটি ডেজার্ট আইটেম। খুবই মিষ্টি স্বাদের খাবারটি তৈরিতে গোলাপ সিরাপ, এলাচ ও জাফরান ব্যবহার করা হয় বলে এটি রাজকীয় স্বাদের হয়। এই খাবারটি সাধারণত সকালের নাশতায় প্রাধান্য পায় এবং এটি ঠান্ডা ও গরম উভয় অবস্থাতেই খাওয়া যায়।

৩. Umm ali উম্ম আলি
উম্ম আলি কাতারের আরেকটি জনপ্রিয় ডেজার্ট আইটেম। এই খাবারটির উৎপত্তি মিশরে হলেও বর্তমানে কাতারে এটি জনপ্রিয়তার শীর্ষে। উম্ম আলি পুডিং টাইপের খাবার কিন্তু উপরের অংশটা বেশ ক্রিসপি। কনডেস্ট মিল্ক, বাদাম কুচি ও কিসমিস এর সমন্বয়ে উম্ম আলি তৈরি করা হয়। কাতারের স্থানীয় লোকজনের থেকে শুরু করে ঘুরতে যাওয়া ট্যুরিস্ট সবার কাছেই এই খাবারটি বেশ জনপ্রিয়।

৪. Tharid থারিদ
থারিদ মাংস ও সবজি দিয়ে রান্না করা ভাড়ি মসলাযুক্ত এক ধরনের খাবার। রিগ্যাগ নামক খাস্তা ফ্ল্যাটব্রেডের সাথে থারিদ পরিবেশন করা হয়। রমজান মাসের কাতার বাসীর ইফতারে সবথেকে বেশি প্রাধান্য পায় এই খাবারটি। মুহাম্মদ (স.) – এর সবথেকে প্রিয় খাবারগুলোর মধ্যে থারিদ উল্লেখযোগ্য, তাই ইফতারে এই খাবারটি বেশ জনপ্রিয়। বিভিন্ন রেস্টুরেন্টে মাংস ছাড়াও থারিদ পাওয়া যায়। তাই যারা মাংস খায় না তারাও এটা ট্রাই করে দেখতে পারবে।

৫. Sambusa সাম্বুসা
এটি বাংলাদেশ ও ভারতের জনপ্রিয় খাবার সমুচা এর একটি অভিনব সংস্করণ। কাতারের সাম্বুচা তৈরি করা হয় মাংস, সবজি এবং চিজ দিয়ে। ডিপ ফ্রাই হওয়ার ফলে উপরের অংশটাও বেশ ক্রিসপি হয়। বিকেলের হালকা নাশতা নিসেবে কাতারের সাম্বুসা বেশ প্রচলিত খাবার।

৬. Luqaimat লুকাইমাত
লুকাইমাত
কাতারের খুব জনপ্রিয় ডেজার্ট আইটেম লুকাইমাত যা খেতে অনেকটা ডোনাটের মতো। তবে এটি গোলাকৃতির হয় এবং উপরের অংশটা বেশ ক্রিসপি। লুকাইমাত তৈরি করা হয় ময়দা, এলাচ, চিনি ও জাফরান ব্যবহার করে। ডিফ ফ্রাই করা হয় বলে উপরের অংশটা মচমচে এবং ভেতরে হয় বেশ মোলায়েম। কাতারে সাধারণত ইফতারের ডেজার্ট আইটেম হিসেবে লুকাইমাত রাখা হয়। এটি মধু কিংবা রসে ভিজিয়ে পরিবেশন করা হয়।

৭. Khubz bread খবুজ
খবুজ হলো এরাবিয়ান বিশেষ এক ধরনের রুটি। কাতার সহ আরব বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বেশ জনপ্রিয়। খবুজ বা খাবুজ সাধারণত হুমুস, চাটনি বা বিভিন্ন ধরনের মসলাযুক্ত খাবারের সাথে পরিবেশন করা হয়। সাধারণ মানুষের বাড়িক থেকে শুরু করে স্বনামধন্য রেস্টুরেন্ট সব জায়গাতেই এই রুটি একটি বহুল প্রচলিত আইটেম। খবুজ সাধারণত গরম গরম খেতেই বেশ ভালো লাগে তবে ঠান্ডা খাবুজ এরও আলাদা স্বাদ রয়েছে। এই রুটি তৈরির মূল উপকরণ ময়দা।

৮. Harees  হারিস
কাতারের আরেকটি ঐতিহ্যবাহী ও জনপ্রিয় খাবার হারিস। ভাঙা গম ও মাংসের সমন্বয়ে এই খাবারটি রান্না করা হয়। ভাঙা গম বেশ অনেক সময় জ্বাল করে তার মধ্যে মাংস দিয়ে ও ভাড়ি মসলা যুক্ত করে হারিস প্রস্তুত করা হয়। সাধারণ বিভিন্ন উৎসব অনুষ্ঠানে হারিস খাওয়ার প্রচলন রয়েছে। বিশেষ করে বিয়ের অনুষ্ঠানে স্পেশাল আইটেম হিসেবে হারিস থাকবেই।

৯. Kunafa কুনাফা
কুনাফা একধরনের মিষ্ট পেস্ট্রি যা টক পনিরের সাথে পরিবেশন করা হয়।কাতার বাসীদের সকালের নাশতায় বেশিরভাগ সময় কুনাফা পরিবেশন করতে দেখা যায়। তাছাড়া স্ট্রিট ফুড হিসেবেও এটি বেশ জনপ্রিয়। পরিবেশনের আগে পেস্ট্রিকে পুরোপুরি সিরায় ভিজিয়ে রাখা হয়।

১০. Madrouba মাদরুবা
মাদরুবা অনেকটা হারিসের মতো। মাদরুবা তৈরি করা হয় চাল, দুধ, পনির, মাংস, মটরশুঁটি এবং বিভিন্ন ধরনের মসলার সমন্বয়ে। সবগুলো উপাদান বিশেষ পদ্ধতিতে পুরোপুরি সিদ্ধ না হওয়া পর্যন্ত রান্না করা হয়। কাতারের বিভিন্ন জায়গায় মাদরুবা রান্নার আলাদা আলাদা পদ্ধতি রয়েছে ফলে স্থানভেদে একই খাবারের বৈচিত্র্যময় স্বাদ পাওয়া যায়।

কুয়েত -এর বিখ্যাত খাবার

১. jareesh জিরেশ
কুয়েতের ঐতিহ্যবাহী খাবার জিরেশ। এই খাবারটি কাতারেও বেশ জনপ্রিয় এবং অনেকটা কাতারের জনপ্রিয় খাবার হারিস এর মতো। সাধারণত রমজান মাসে জিরেশ খাওয়ার প্রচলন সবথেকে বেশি। মুরগি, ভেড়া কিংবা উটের মাংসের সাথে ভাঙা গম ও মসুর ডাল দিয়ে জিরেশ রান্না করা হয়। পরিবেশনের সময় লেবু, এমেটো, কিসমিস ও গরম মসলা দিয়ে ডেকোরেট করা হয়।

২. Majboos Laham  মাচবুস লাহাম
মাচবুস লাহামকে কুয়েতের জাতীয় খাবার বলে অভিহিত করা হয়। কুয়েতের স্থানীয়দের হাতে মাচবুস লাহাম রান্নার অথেনটিক স্বাদ পাওয়া যায়। এই খাবারটি মূলত বাসমতী চাল, মাংস এবং বিভিন্ন মসলার সমন্বয়ে রান্না করা হয়। মাংস ও ভাত আলাদা আলাদা রান্না করে স্তরে স্তরে সাজানো হয় এবং সেই সাথে দেয়া হয় ভাজা পেয়াজ ও কিসমিস। মাচবুস লাহাম সাধারণ ডাককুস বা ডাকুস এর সাথে পরিবেশন করা হয় যা টমোটো দিয়ে তৈরি বিশেষ এক খাবার।

৩. Mutabbaq  Samak মুতাব্বাক সামক
মুতাব্বাক সামক মাছ ও ভাতের সংমিশ্রণে তৈরি ঐতিহ্যবাহী খাবার। মুতাব্বাক সামক তৈরির মূল উপকরণ জুবাইদি যা কাতারের জাতীয় মাছ। মাছের সাথে মাখন ও বিভিন্ন মসলা মেরিনেট করে ব্রাউন কালার করে ভেজে নেয়া হয়। তারপর চাল, মাছ ও মসলার সমন্বয়ে রান্না করা হয় মুতাব্বাক সামক। সাধারণত টমোটো গ্রেভি বা টমোটো সস এর সাথে সুস্বাদু এই খাবারটি পরিবেশন করা হয়।

৪. Kozi কুওজি
কুওজি কুয়েতের জনপ্রিয় একটি ঐতিহ্যবাহী খাবার। বিয়ের অনুষ্ঠান থেকে শুরু করে যে কোনো উৎসব অনুষ্ঠানে এই খাবারটি পরিবেশন করা হয়। কুওজি রান্না করা হয় মূলত ভেড়ার মাংস ও সুগন্ধি চাল দিয়ে। বিভিন্ন ধরনের মসলার সংমিশ্রণে মাংস রান্না করে তার সাথে রান্না করা ভাত দিয়ে বড় থালায় সাজানো হয় এবং তা কিছুক্ষণের জন্য দমে রাখা হয়। এরপর একত্রিত হয়ে সবাই কুওজি এর স্বাদ উপভোগ করে। এই খাবারটি উৎসবমুখর পরিবেশকে আরও বেশি আনন্দ করে তোলে।

৫. Margoog মারগুগ
কুয়েতের জনপ্রিয় মুখরোচক খাবার মারগুগ। এটি মূলত একটি স্যান্ডুইচ। ভেড়ার মাংস, সবজি, পাস্তা ও মশলা একত্রিত করে রান্না করা হয়। এবং রান্না করা গ্রেভি ফ্লাটব্রেড এর উপর ঢেলে স্যান্ডুইচ তৈরি করা হয়। যদিও অন্যান্য মাংস দিয়েও মারগুগ তৈরি করা যায় তবে ভেড়ার মাংসের তৈরি মারগুগ -এ অথেনটিক স্বাদ পাওয়া যায়।

৬. Mandi Laham মান্ডি লাহাম
মাংসের তৈরি খাবারের কথা বলতে গেলে মান্ডি লাহাম কুয়েতের আরও একটি জনপ্রিয় ঐতিহ্যবাহী খাবার। এটি মূলত ভেড়া বা মুরগির মাংস দিয়ে রান্না করা হয়। মাংস ও মসলা একসাথে ভালোভাবে রান্না করা হয় এবং মাংসটা একদমই রসালো রাখা হয়। রান্না করা মাংসের ঝোলে বা আলাদা ভাবে মসলা দিয়ে চাল ঝরঝরে করে সিদ্ধ করা হয়। এরপর মাংস ও মসলায় রান্না করা ভাত একসাথে পরিবেশন করা হয়। এটি কুয়েতের একদমই অথেনটিক একটি খাবার।

৭. Tashreeb তাশরীব
তাশরীব কুয়েতের বহুল প্রচলিত ও জনপ্রিয় একটি খাবার যা শীতকালে বা শরৎকালে সবথেকে বেশি খাওয়া হয়। তাশরীব মানে ভিজিয়ে রাখা, মুলত মাংসের ঝোলে ভিজিয়ে রাখা রুটিকেই তাশরীব বলা হয়। মাংস, বিভিন্ন ধরনের মসলা ও ছোলা দিয়ে গ্রেভি রান্না করা হয়। তারপর রান্না করা মাংসের ঝোলে পাউরুটি ভিজিয়ে তৈরি করা হয় সুস্বাদু খাবার তাশরীব।

৮. Fatayer ফাতায়ের
ফাতায়ের হলো জনপ্রিয় একটি স্যান্ডুইচ জাতীয় খাবার যা রুটি দিয়ে তৈরি।রুটির ভেতরের পুর হিসেবে বিভিন্ন উপাদান ব্যবহার করা হয়। উপাদানের ভিন্নতার কারনে এই খাবারটি চার ধরনের ফ্লেভারে বিভক্ত এবং আলাদা আলাদা ফ্লেভারের জন্য আলাদা আলাদা নামও রয়েছে খাবারটির। চারটি ভিন্ন স্বাদের ফাতায়ের-এর নাম হলো: ফাতেয়ের লহমে, ফাতেয়ের জিবনা, ফাতেয়ের লেবান এবং ফাতেয়ের জা’তার। ধারাবাহিক ভাবে আলাদা আলাদা ফাতায়ের তৈরিতে মাংসের কিমা, পনির, তিল, অলিভ অয়েল এবং সবজি ব্যবহার করা হয়।

আরব-আমিরাত এর বিখ্যাত খাবার :

১. Shawarma শর্মা
আরব-আমিরাত এর জনপ্রিয় মুখরোচক খাবার শর্মা। এটি মূলত ভেড়া বা মুরগির মাংস, সবজি ও ফ্লাটব্রেড এর সাহায্যে তৈরি করা হয়। মাংশ ও সবজি রান্না করে তার সাথে সস, মেয়োনিজ এবং চিজ মিক্স করে রুটির সাথে রোল করে শর্মা তৈরি করা হয়। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশেই এই খাবারটি প্রচলিত আছে, তবে এর অথেনটিক স্বাদ আরব বিশ্বের রন্ধন শৈলীতেই পাওয়া যাবে।

২. Manakish মানাকিশ
আরব-আমিরাতে সকাল অথবা বিকেলে হালকা খাবার হিসেবে মানাকিশ খাওয়া হয়। এটি মূলত চিজ ও রুটি দিয়ে তৈরি খুব সাধারণ একটি খাবার। ফ্লাটব্রেড এর উপর বেশি করে চিজ দিয়ে হাই হিটে বেক করে মানাকিশ বানানো হয়। কেউ কেউ আবার উপরে সবজি বা মাংস দিয়েও ডেকোরেট করে, যা অনেকটা পিজ্জা এর মত।

৩.Fattoush ফ্যাটুশ
ফ্যাটুশ একটি সালাদ জাতীয় খাবার। সব ধরনের ফ্রেশ সবজি দিয়ে খাবারটি তৈরি করা হয় বলে এটি খুব স্বাস্থ্যকর। ফ্যাটুশ তৈরিতে ব্যবহার করা হয় মুলা, লেটুস, পুদিনা পাতা ও শসা। পরিবেশনের সময় এর সাথে পেয়াজ ও লেবুর রস যুক্ত করা হয়। ফ্যাটুশ সাধারণত লেভানটাইন রুটির সাথে পরিবেশন করা হয়।

৪.Shirin Polo শিরিন পোলাও
আরব আমিরাত এর বিখ্যাত ও ঐতিহ্যবাহী মিষ্টান্ন জাতীয় খাবার শিরিন পোলাও। এই খাবারটি ঝরঝরে মিষ্টি জাতীয় পোলাও যা অনেকটা বাংলাদেশের প্রচলিত জর্দার মতো। বিয়ের অনুষ্ঠানে বা যে কোনো সামাজিক অনুষ্ঠানে শিরিন পোলাও একটি বাধ্যতামূলক আইটেম হিসেবে বিবেচনা করা হয়। সুগন্ধি চাল, বাদাম, গাজর কুচি ও মিছরিযুক্ত সাইট্রাস্ট জেস্ট দিয়ে শিরিন পোলাও রান্না করা হয়।

৫. Balaleet বেলালাত
সংযুক্ত আরব আমিরাত এর সাধারণ একটি সকালের খাবার বেলালাত। এটি একই সাথে মিষ্টি এবং নোনতা স্বাদযুক্ত। ভার্মিসেলি (নুডলস) এর সাথে গোলাপজল, জাফরান ও গরম মসলা মিশিয়ে প্রথমে মিষ্টি করে রান্না করা হয়। সবশেষে প্লেটে রান্না করা ভার্মিসেলি নিয়ে তার ওপরে পাতলা অমলেট বসিয়ে বেলালাত পরিবেশন করা হয়।

সিরিয়ার বিখ্যাত খাবার 

১. Yabrak ইয়াবরাক
ইয়ারবাক সিরিয়ার সবথেকে জনপ্রিয় ঐতিহ্যবাহী খাবার। এই খাবারটি পরিবেশনের সাথে সাথে সিরিয়ার প্রাচীন ঐতিহ্য ফুটে ওঠে। শাক,লতাপাতা, চাল এবং মাংস দিয়ে ইয়াবরাক রান্না করা হয়। শাক লতাপাতায় পেচানো ভাপানো ভাতের ওপর মসলাযুক্ত রান্না করা মাংস দিয়ে ইয়াবরাক পরিবেশন করা হয়।

২.Syrian Kebab কাবাব
সিরিয়ান কাবাব বলতে মূলত গ্রিল করা মাংসকে বোঝানো হয়। প্রায় ২০ টিরও বেশি স্বাদের কাবাব এই অঞ্চলে খাওয়ার প্রচলন আছে। তবে ভেড়ার মাংস দিয়ে গ্রিল করা কাবাব সবথেকে বেশি প্রচলিত এবং জনপ্রিয়। বিশেষ করে গ্রীষ্মের সময় ভেড়ার মাংস গ্রিল করে স্মোকি ফ্লেভারের বিশেষ এই কাবাবটি খাওয়া হয়। ভাজা সবজি ও বিভিন্ন ধরনের সস দিয়ে এই কাবাব পরিবেশন করা হয়।

৩. Halawet al jibn হালাওয়েত এল-জিবন
সিরিয়ার বেশ জনপ্রিয় একটি ডেজার্ট আইটেম হালাওয়েত এল-জিবন। এই খাবারটি অনেকটা বাংলাদেশের জনপ্রিয় সুজির বরফির মতো। হালাওয়েত এল-জিবন তৈরির জন্য সুজি, চিনি, পনির এবং রোজ সিরাপ ব্যবহার করা হয়। সবগুলো উপাদান রান্না করে সেট করা হয় এবং সেগুলোকে ছোট ছোট টুকরো করে কেটে উপরে বাদাম ও কিসমিস দিয়ে পরিবেশন করা হয়।

৪.Mansaf Al Melehi  মানসাফ আল-মেলিহী
সিরিয়ার সাধারণ মানুষের খাদ্য তালিকার মধ্যে সবথেকে স্পেশাল আইটেম হলো মানসাফ আল-মেলিহী। বিশেষ কোনো অনুষ্ঠানে এবং ছুটির দিনে এই খাবারটি রান্না করা হয়। ভেড়ার মাংস, দই এবং ঘি এ ভেজানো গম দিয়ে বিশেষ পদ্ধতিতে মানসাফ আল-মেলিহী রান্না করা হয়।গারম গরম মানসাফ আল-মেলিহী সবজির সাথেও পরিবেশন করা হয়।

৫. Tabbouleh তাবউলি
তাবউলি এক ধরনের এরাবিক সালাদ যা কিনা সিরিয়া এবং লেবাননে সবথেকে বেশি জনপ্রিয়। অতিথি আপ্যায়নের সময় সব ধরনের খাবারের সাথে তাবউলি একটি কমন আইটেম হিসেবে থাকে। টমোটো, পেয়াজে ভেজানো বুলগোর গম, অলিভ অয়েল মিশ্রিত করে তাবউলি প্রস্তুত করা হয়। কোনো কোনো জায়গায় এই খাবারটির সাথে শসাও ব্যবহার করা হয়।

৬.Al Ejjeh maj আল-জাজ মাজ
আল-জাজ মাজ সিরিয়ার খুব জনপ্রিয় এবং সাধারণ একটি খাবার। এই খাবারটি তৈরির মূল উপকরণ ডিম, টমোটো এবং পেয়াজ। কিউব করে কাটা পেয়াজ ও টমোটো ঘি এ ভেজে তার সাথে মসলা যুক্ত কটে ডিম ভেঙে দেয়া হয়। ডিম সিদ্ধ হলে একটু ঝোল ঝোল রেখেই নামিয়ে ফেলা হয় চুলা থেকে। আল-জাজ মাজ সাধারণত রুটির সাথে পরিবেশন করা হয়।

৭.Balah el Sham বালাহ আল-শাম
সিরিয়া সহ আরব বিশ্বের প্রায় প্রতিটি দেশেরই জনপ্রিয় মিষ্টান্ন জাতীয় খাবার বালাহ আল-শাম। এই খাবারটি দেখতে অনেকটা খেজুরের মতো এবং খেতেও খেজুরের মতোই মিষ্টি। বাটার, চিনি, ময়দা, ডিম এবং তেল ব্যবহার করে বালাহ আল-শাম তৈরি করা হয়। চিনি, ময়দা, তেল ও বাটার জ্বাল করে ডো তৈরি করা হয়। তারপর সেই ডো এর সাথে ডিম এড করে ভালোভাবে মথে ছোট ছোট খেজুরের আকৃতির তৈরি করা হয়। সেগুলোকে তেলে ভেজে চিনির সিরায় ডুবিয়ে তৈরি করা হয় সুস্বাদু বালাহ আল-শাম।

ইয়েমেন এর বিখ্যাত খাবার :

১.Fahsa ফাহসা
ইয়েমেন এর খুবই জনপ্রিয় খাবার ফাহসা। এই খাবারটি তৈরির মূল উপকরণ ভেড়ার মাংস। উচ্চ তাপে পাথরের পাত্রে ভেড়ার মাংস রান্না করা হয়। রান্না করা মাংস ইয়েমেনি রুটি এবং বিশেষ এক প্রকার সস দিয়ে পরিবেশন করা হয় যার নাম সাহাউইক।

২. Sahawiq সাহাভিক
ইয়েমেন এর খুবই জনপ্রিয় খাবার সাহাভিক। এটি মূলত মসলাযুক্ত সুস্বাদু এক ধরনের সস। লাল মরিচ দিয়ে লাল সাহাভিক, সবুজ মরিচ দিয়ে সবুজ সাহাভিক এবং টমেটো দিয়ে ব্রাউন সাহাভিক তৈরি করা হয়। তবে ব্রাউন সাহাভিক এর সাথে নির্দিষ্ট মাত্রায় সবুজ মরিচ মিক্স করা হয়। সাহাভিক সাধারণত রুটির সাথে খাওয়া হয়। পরিবেশনের সময় কেউ কেউ দই বা টুনা ফ্লেক্সের সাথে সাহাভিক মিক্স করে নেয়।

৩. Saltha সালতাহ
ইয়েমেন এর প্রধান খাবার হিসেবে যে খাবারটিকে বিবেচনা করা হয় তা হলো সালতাহ। সালতাহ মূলত ঝোল জাতীয় খাবার। সালতাহ তৈরিতে মাংস, আলু, চাল, ডিম, সাহাভিক সস, সবজি ও বিভিন্ন ধরনের মসলা ব্যবহার করা হয়। ইয়েমেনে দুপুরের খাবার হিসেবে সালতাহ সবথেকে বেশি প্রাধান্য পায়। বাড়িতে তৈরির পাশাপাশি বিভিন্ন রেস্টুরেন্টে সালতাহ তৈরি ও পরিবেশন করা হয়। আর সালতাহ তৈরির জন্যই এসব রেস্টুরেন্ট গুলো বেশ জনপ্রিয়।

৪. Sayadieh সায়াদিয়াহ
ইয়েমেন এর এডেন সিটির সবথেকে জনপ্রিয় ও স্পেশাল খাবার সায়াদিয়াহ। সায়াদিয়াহ শব্দটি আরবি সাইদ শব্দ থেকে এসেছে যার অর্থ সামুদ্রিক খাবার। সামুদ্রিক মাছ ও চালের সমন্বয়ে সায়াদিয়াহ রান্না করা হয়। সায়াদিয়াহর বিশেষত্ব হলো এতে ব্যবহৃত মসলা যা এই খাবারে রাজকীয় স্বাদ নিয়ে আসে। সাধারণত ছুটির দিনগুলোতে এই খাবারটি স্পেশাল আইটেম হিসেবে রান্না করা হয়।

৫. Bint Al Sahn  বিন তে আসান
প্রসঙ্গ যখন আসে ইয়েমেন এর মিষ্টান্ন জাতীয় খাবার সম্পর্কে, তাহলে প্রথমেই মাথায় আসে বিনতে আসান এর কথা। এটি ইয়েমেন এর সবথেকে বেশি জনপ্রিয় একটি মিষ্টি পেস্ট্রি জাতীয় খাবার। ঘি, মধু তিল এবং কালোজিরার টপিং এ প্রস্তুতকৃত এই পেস্ট্রি যে কারো কাছেই গ্রহনযোগ্যতা পাবে। সাধারণত সকালের নাশতায় এক কাপ চায়ের সাথে এক পিস বিনতে আসান দিয়ে অনেকেই ব্রেকফাস্ট সেরে ফেলে।

৬. Asida অসিদা  
ইয়েমেন সহ আরবের প্রায় সব দেশেরই একটি সাধারণ খাবার অসিদা। ময়দা, পানি এবং লাবান এর সমন্বয়ে গোলাকৃতির অসিদা তৈরি করা হয়। খাওয়ার সময় উপরে গরম গরম ঝোল দিয়ে পরিবেশন করা হয়। অসিদা সাধারণত চামুচ দিয়ে না খেয়ে হাত দিয়ে খাওয়া হয়। এটাই অসিদা খাওয়ার অথেনটিক স্টাইল।

আরব বিশ্বের খাবার বর্তমানে বাংলাদেশে খাদ্যাভ্যাসে যুক্ত হচ্ছে। কেননা প্রতিটি খাবারই খুব সুস্বাদু এবং হালাল উপাদানের সমন্বয়ে তৈরি করা হয়।

Post a Comment

Previous Post Next Post