পুষ্টি | Nutrition কাকে বলে ও কি কি? পুষ্টি এর গুরুত্ব ?

পুষ্টি কাকে বলে ও কি কি? পুষ্টি এর গুরুত্ব ?

খাদ্যের পুষ্টি বা নিউট্রিশন সম্পর্কে না জেনে কুনোদিন নিজেকে শেফ বলে দাবি করবেন না।  একজন ভালো শেফ এর এসব বিষয় গুলো জানা থাকা লাগবেই। পুষ্টি হলো পরিবেশ থেকে প্রয়োজনীয় খাদ্যবস্তু আহরণ করে খাদ্যবস্তুকে পরিপাক ও শোষণ করা এবং আত্তীকরন দ্বারা দেহের শক্তির চাহিদা পূরণ , রোগ প্রতিরোধ , বৃদ্ধি ও ক্ষয়পূরণ করা ৷ অর্থ্যাৎ দেহ সুস্থ ও সবল রাখার প্রক্রিয়াকে পুষ্টি বলে৷ অপরদিকে খাদ্যের যেসব জৈব অথবা অজৈব উপাদান জীবের জীবনীশক্তির যোগান দেয় , তাদের একসঙ্গে পরিপেষক বলে ৷ যেমন :- গ্লুকোজ , খনিজ লবণ  ভিটামিন ইত্যাদি ৷


পুষ্টি | Nutrition কাকে বলে ও কি কি? পুষ্টি এর গুরুত্ব ?
পুষ্টি | Nutrition কাকে বলে ও কি কি ?


পুষ্টি | Nutrition:

জীবের একটি জৈবিক প্রক্রিয়া হল পুষ্টি। যে প্রক্রিয়ার জীবের আহার্য খাদ্যবস্তু দেহে প্রবেশের পর পরিপাকের মাধ্যমে ভেঙ্গে সরল উপাদানে পরিণত হয় এবং দেহের প্রয়োজনীয় অংশ শোষিত হয়ে দেহের ক্ষয়পূরণ , বৃদ্ধিসাধন, শক্তি উৎপাদন ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে তাকে পুষ্টি (Nutrition) বলা হয়। আর যে তন্ত্রের মাধ্যমে জীবদেহের পুষ্টি ক্রিয়া সম্পন্ন হয় তাকে পৌষ্টিকতন্ত্র বলা হয়। সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ জীব হিসেবে আমাদের পৌষ্টিক তন্ত্র মুখগহ্বর, গলবিল, অন্ননালী, পাকস্থলি, ক্ষুদ্রান্ত, বৃহদান্ত, পায়ু, যকৃত এবং এনজাইম গ্রন্থি ইত্যাদির সমন্বয়ে গঠিত। প্রয়োজনের তুলনায় আহার্য বস্তু অর্থাৎ খাদ্যের উপাদানগুলির মোট পরিমাণ যদি কম হয়, তবে শরীর দুর্বল হয়ে পড়বে এবং কর্মক্ষমতা হ্রাস পাবে। এই অবস্থাকে পুষ্টির অভাব বা Subnutrition বলে। সুতরাং পুষ্টি বলতে শুধু খাদ্যের উপাদানকে না বোঝে উপাদানগুলোর সঠিক অনুপাতে খাদ্যে বিদ্যমান থাকাকে বোঝায়।


খাদ্যের কাজ | Function of Food

খাদ্য আমাদের দেহে শুধুমাত্র ক্ষুধা নিবৃত্ত করে এমনটি ভাবা ঠিক নয়। খাদ্য দেহে নানবিধ কার্য সম্পাদন করে থাকে। আধুনিক পুষ্টিবিজ্ঞান এবং গার্হস্থ্য অর্থণীতিবিদগণ মানবদেহে খাদ্যের নিম্নোক্ত কার্যাবলী সম্পাদন করে বলে অভিমত প্রকাশ করেছেন। যেমন :

১। খাদ্য দেহের ক্ষয়পূরণ ও বৃদ্ধি সাধন করে থাকে।

২। খাদ্য দেহের তাপ ও কর্মশক্তি উৎপাদন করে।

৩। খাদ্য দেহে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।

৪। খাদ্য দেহের অভ্যন্তরীণ কার্যসমূহ নিয়ন্ত্রণ করে।

৫। খাদ্য দেহকে সুস্থ্য, স্বাভাবিক ও কর্মক্ষম রাখে।

৬। খাদ্য দেহে পরিপোষণ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।


পুষ্টির প্রকারভেদ?

পুষ্টি কত প্রকার বলতে এখানে বুঝানো হয়েছে খাদ্যে বিদ্যমান পুষ্টি পদার্থের কথা যা ইংরেজিতে আমরা nutrient বলি। খাদ্যে পুষ্টি উপাদানের পরিমানের উপর ভিত্তি করে একে দুই ভাগে ভাগ করা হয়। যথা-

Macronutrients: যে নিউট্রিয়েন্ট আকারে বড়।

Micronutrients : এই নিউট্রিয়েন্ট আকারে ছোট।


এরা মানুষ ও জীবন্ত প্রাণির খাদ্যের মুল উপাদান যা বেচে থাকার শক্তি ও পুষ্টি অর্জনের জন্য অধিক পরিমানে খেতে হয়। এদের উদাহারণ হচ্ছে কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন ও ফ্যাট জাতিয় খাদ্য।

  • একজন প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষের দৈনিক চাহিদা পূরণের জন্য প্রায় ২৫০০-৩০০০ কিলোক্যালরি শক্তির সমপরিমাণ খাদ্য প্রয়োজন।
  • প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের দৈনিক ৩০০-৫০০ গ্রাম শর্করা প্রয়োজন (যারা দৈনিক হালকা ব্যায়াম করেন)।
  • প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের দৈনিক ৩৩-৬৬ গ্রাম আমিষ প্রয়োজন।
  • একজন স্বাভাবিক মানুষের দৈনিক ৫০-৬০ গ্রাম চর্বির প্রয়োজন হয়।
  • একজন পূর্ণ বয়স্ক মানুষের প্রতিদিন মোট ২.৫-৩ লিটার পানি পান করা উচিত।

খাদ্যের উপাদান কয়টি ও কি কি ?

আমরা যে সব বস্তু আহার করি তাকে আহার্য সামগ্রী বলে। কিন্তু সব আহার্য সামগ্রীই খাদ্য নয়। যেমন, থোড় সেলুলোজ দিয়ে গঠিত হওয়ায় আমাদের পরিপাক নালীতে পাচিত হয় না। ফলে পুষ্টি সহায়ক নয়। সেই সব আহার্য সামগ্রীকেই খাদ্য বলা যাবে, যা দেহের পুষ্টি ও বৃদ্ধি সহায়ক এবং তাপশক্তি উৎপাদনে সহায়তা করে।

জীবদেহে শক্তির উৎস হল খাদ্য। সালোকসংশ্লেষ প্রক্রিয়াকালে সৌরশক্তি খাদ্যের মধ্যে স্থৈতিক শক্তিরুপে আবদ্ধ হয়। জীবকোষে শ্বসনের সময় স্থৈতিক শক্তি তাপ শক্তি বা গতিশক্তি রুপে মুক্ত হয়, জীবদেহের যাবতীয় বিপাক ক্রিয়া, যেমন : শ্বসন, রেচন,পুষ্টি ইত্যাদি এবং শারীরবৃত্তীয় ক্রিয়াকলাপ, যেমন-বৃদ্ধি, চলন-গমন, জনন ইত্যাদি নিয়ন্ত্রিত হয়। সুতরাং প্রানধারনের জন্য প্রত্যেক জীবকেই খাদ্য গ্রহণ করতে হয়। তাই, যে সব আহার্য সামগ্রী গ্রহন করলে জীবদেহের বৃদ্ধি, পুষ্টি, শক্তি উৎপাদন ও ক্ষয়পূরন হয়, তাকেই খাদ্য বলে।


খাদ্যের প্রকারভেদ :

জীবদেহে খাদ্যের কার্যকারিতা অনুযায়ী খাদ্য কে দু'ভাগে ভাগ করা হয়, যেমন-

দেহ-পরিপোষক খাদ্য : যে সব খাদ্য দেহের গঠন, বৃদ্ধি ও শক্তি উৎপাদনে সহায়কারী, তাদের দেহ-পরিপোষক খাদ্য বলে। যেমন : শর্করা বা কার্বোহাইড্রেট, আমিষ বা প্রোটিন এবং স্নেহপদার্থ বা ফ্যাট বা লিপিড।

দেহ-সংরক্ষক খাদ্য : যে সব খাদ্য দেহকে রোগ সংক্রমণের হাত থেকে রক্ষা করে, শক্তি উৎপাদনে সহায়ক নয়, তাদের দেহ-সংরক্ষক খাদ্য বলে। যেমন : খাদ্যপ্রাণ বা ভিটামিন, খনিজ পদার্থ বা মিনারালস।

খাদ্যের উপাদান !

খাদ্যে ছ'টি উপাদান থাকে, যথা-

(a) আমিষ ( Protein): দেহের বৃদ্ধিসাধন এবং ক্ষয়পূরণ করে।

(b) শর্করা (Carbohydrate): দেহে শক্তি উৎপাদনে সহায়তা করে।

(c) স্নেহ ও চর্বিজাতীয় খাদ্য (Fats): দেহে তাপ এবং শক্তি উৎপাদন করে।

(d) খাদ্যপ্রাণ বা ভিটামিন (Vitamins): রোগ প্রতিরোধ শক্তি বাড়ায় এবং বিভিন্ন রাসায়নিক বিক্রিয়ায় উদ্দীপনা যোগায়।

(e) খনিজ লবণ (Mineral salts): বিভিন্ন জৈবিক কাজে অংশ নেয়।

(f) পানি (Water): দেহে পানি এবং তাপের সমতা রক্ষা করে, এছাড়া কোষের কার্যাদি নিয়ন্ত্রণ করে এবং কোষ ও তার অঙ্গাণুগুলোকে ধারণ করে।

উল্লেখ করা খাদ্য উপাদানের বাইরে আরও একটি উপাদান রয়েছে, যেটি কোনো পুষ্টি না জোগালেও একটি গুরুত্বপূর্ণ খাদ্য উপাদান।


১।   শর্করা বা কার্বোহাইড্রেট | Carbohydrates:

কার্বোহাইড্রেট বা শর্করা জাতীয় খাদ্য বাছাই করার ক্ষেত্রে কোন বিষয়টিকে সবচেয়ে বেশি গুরত্ব দেয়া উচিত? কারণ, কিছু শর্করা স্বাস্থ্যকর উৎস থেকে আসে আবার কিছু অস্বাস্থ্যসম্মত উৎস হতে আসে।

আপনার খাদ্যে শর্করার পরিমান কম-বেশি হলে শরীরের উপর যতটুকু প্রভাব পড়ে তার চেয়ে বেশি প্রভাব পড়ে আপনি কোন ধরণের কার্বোহাড্রেট খাদ্য তালিকায় অন্তর্ভূক্ত করছেন তার উপর।

যেমন, whole grain বা পুরো শষ্য দানার শর্করা স্বাস্থ্যকর খাদ্য হিসাবে বিশেষজ্ঞ মহলে স্বীকৃত। যার উদাহারণ- ব্রাউন আটা, ব্রাউন চাউল ইত্যাদি।

অপরদিকে, পরিশোধিত শর্করা যেমন সাদা আটা বা সাদা চাউল স্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। কারণ, পরিশোধিত খাদ্য খুব দ্রুত আমাদের পরিপাক তন্ত্রে হজম হয়ে রক্তে মিশে যায় এবং রক্তের গ্লুকোজ লেভেল বাড়িয়ে দেয়। ফলে শরীরে প্রয়োজনের তুলনায় ক্যালরি গ্রহনের মাত্রা বেড়ে যায় যা ওজন বৃদ্ধিসহ নানা জটিলতার জন্ম দেয়। এজন্য, স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য মুল বিষয় হল ভাল এবং স্বাস্থ্যকর উৎস হতে কার্বোহাইড্রেট বাছাই করা।

কার্বোহাইড্রেট কি | Carbohydrates?

কার্বোহাইড্রেট হল আপনার শরীরের শক্তি সরবরাহের প্রধান উৎস। আমরা যে খাদ্য গ্রুপের কথা জানি সেই খাদ্য গ্রুপের এটি প্রধান অঙ্গ। কার্বোহাইড্রেট নাম হওয়ার পিছনে কারণ হচ্ছে – এরা কার্বন, হাইড্রোজেন ও অক্সিজেন নামের তিনটি মুল উপাদান নিয়ে গঠিত।

কার্বোহাইড্রেট মুলত উদ্ভিদজাত উৎস হতে উৎপাদিত হয়। তবে, এরা খাদ্যে বিভিন্ন অবস্থায়  বিদ্যমান থাকে। তার মধ্যে প্রধানত: আপনি তিন ভাবে পেতে পারেন, যেমন- সুগার, স্টার্চ এবং ফাইবার।

কার্বোহাইড্রেট তিনটি ম্যাক্রো নিউট্রিয়েন্টের একটি। অপর দু’টির নাম প্রোটিন ও ফ্যাট। ম্যাক্রো নিউট্রিয়েন্টের মানে হল বড় ধরণের পুষ্টি উপাদান যা দেহ তৈরি করতে পারেনা, বাইরে থেকে খাদ্যের মাধ্যমে অধিক পরিমানে শরীরে সরবরাহ করতে হয়।

দৈনিক কতটুকু কার্বোহাইড্রেট খাওয়া উচিত?

আপনার দৈহিক কাজ-কর্ম সম্পাদনের জন্য যে শক্তির প্রয়োজন হয়, কার্বোহাইড্রেট তার প্রধান যোগান দাতা। একটু আগেই বলা হয়েছে, এটি প্রোটিন ও ফ্যাট এর মত একটি ম্যাক্রো নিউট্রিয়েন্ট যা অধিক পরিমানে বাহির থেকে খাদ্য হিসাবে খেতে হয়।

এবারে, আপনাকে জানতে হবে- আপনার দৈহিক ওজন, উচ্চতা ও সেক্স অনুযায়ি দৈনিক কতটুকু ক্যালরি প্রয়োজন হয় তার হিসাব। এই হিসাব বের করার সহজ একটি টুল আছে যা USDA স্বীকৃত। সেখান থেকে আপনার দৈনিক ক্যালরির পরিমান বের করে নিতে পারেন।

আরেকটি বিষয় জেনে রাখা ভাল – প্রতি গ্রাম শর্করা ও প্রোটিন চার ক্যালরি করে শক্তি সরবরাহ করে। প্রতি গ্রাম ফ্যাটও নয় ক্যালরি শক্তি প্রদান করে।

আপনার দৈনিক কতটুকু শর্করা খাওয়া উচিত 

পুষ্টিবিদগণের সুপারিশ মতে – মানুষের তার দৈহিক ওজন, শারিরিক পরিশ্রম ও লিঙ্গ ভেদে একজন ব্যক্তির দৈনিক যে পরিমান ক্যালরির প্রয়োজন হয় তার ৪৫-৬৫% ক্যালরি কার্বোহাইড্রেট উৎস থেকে গ্রহন করা যেতে পারে।

যুক্তরাষ্ট্রের খাদ্য ও ঔষধ প্রশাসন, FDA এর সুপারিশ অনুযায়ি আপনি যদি প্রতিদিন ২০০০ ক্যালরির খাদ্য গ্রহন করেন, তাহলে সেখানে কার্বোহাইড্রেট থাকতে হবে ২৭৫ গ্রাম। যার মধ্যে ফাইবার, সুগার, অ্যাডেড সুগারসহ খাবার টেবিলে কার্বোহাইড্রেট জাতিয় যে সব খাদ্য দেয়া হয় সবগুলি অন্তর্ভূক্ত।


কার্বোহাইড্রেট কত প্রকার ?

রাসায়নিক গঠনের উপর ভিত্তি করে এরা মুলত: তিন প্রকার, যেমন-

মনোস্যাকারাইডস: এটি একক সুগার মলিকুল নিয়ে গঠিত যারা সমস্ত শর্করার বিল্ডিং ব্লক হিসাবে গন্য হয়। যেমন, গ্লুকোজ, ফ্রুকটোজ এবং গ্যালাকটোজ। এরা মধু, শুকনো ফল যেমন আঙ্গুর, খেজুর, কিচমিচ ও প্রক্রিয়াজাত খাদ্যে যেমন কোমল পানিয় – ইত্যাদিতে পাওয়া যায়।

ডাইস্যাকারাইডস: এরা এমন ধরণের সুগার যা দু’টি একক সুগার মলিকুল নিয়ে তৈরি হয়। যেমন ল্যাকটোজ যা দুধে পাওয়া যায় যেখানে একটি গ্লুকোজ ও একটি গ্যালাকটোজ থাকে।

আরেকটি উদাহারণ হল সুক্রোজ যা টেবিল সুগার হিসাবে পরিচিত। সুক্রোজ আখ থেকে উৎপন্ন হয়। এটি গ্লুকোজ ও ফ্রুকটোজ নিয়ে গঠিত।

পলিস্যাকারাইডস: মনো স্যাকারাইড ও ডাই স্যাকারাইডের দীর্ঘ চেইন দিয়ে পলি স্যাকারাইড তৈরি হয়। এদের কোন কোনটির খুব জটিল গঠন থাকে। এদের উদাহারণ – স্টার্চ, সেলুলোজ, পেকটিন ও ফাইবার। এরা পাচক রস ও এনজাইম দ্বারা সম্পূর্ণরুপে হজম হতে পারে না।

আবার, কার্বোহাইড্রেট কি অবস্থায় বিদ্যমান – তার উপর ভিত্তি করে তিন ভাগে ভাগ করা যায়, যেমন-

সুগার

এরা সরল শর্করা। মনো স্যাকারাইড এবং ডাই স্যাকারাইড এই শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত। এরা খাদ্যের স্বাদ বর্ধনের জন্য প্রক্রিয়াজাত খাদ্যে যোগ করা হয়। প্রকৃতিগতভাবেও কোন কোন খাদ্যে এদের পাওয়া যায়। যেমন, ফলমুল, শাক-সবজি ও দুধ।

স্টার্চ

এটি কমপ্লেক্স বা জটিল কার্বোহাইড্রেট যারা প্রচুর পরিমানে সিম্পল সুগার দিয়ে তৈরি হয়। এই সুগার মলিকুল একটি অপরটির সাথে চেইন আকারে আবদ্ধ থাকে। স্টার্চ জাতীয় কার্বোহাইড্রেট খাওয়ার পর তা থেকে শক্তি উৎপাদনের লক্ষ্যে হজম প্রক্রিয়ায় এটি ভেঙ্গে গিয়ে সরল সুগারে পরিণত হয়। এই সরল সুগার রক্তে শোষিত হতে পারে যা দেহের শক্তি উৎপাদন কাজে ব্যবহৃত হয়।

সিরিয়াল জাতিয় উদ্ভিদ, সুনির্দিষ্ট কিছু সবজি, গোল আলু, মিষ্টি আলু, peas ও corn ইত্যাদি খাদ্যে স্টার্চ পাওয়া যায়।

ফাইবার

এরাও জটিল কার্বোহাইড্রেটের মধ্যে অন্তর্ভূক্ত। আমাদের দেহ এটিকে পুরোপুরিভাবে হজম প্রক্রিয়ায় ভেঙ্গে ফেলতে পারে না। কাজেই, ফাইবার সমৃদ্ধ শর্করা খেলে পেট ভরে থাকার এক অনুভূতি সৃষ্টি করে। ফলে, দেরিতে ক্ষুধা লাগে ও খাদ্য গ্রহনের হার কমে যায়। ইহা, স্বাস্থ্যের জন্য খুব উপকারি। কেননা, এর মাধ্যমে ক্যালরি গ্রহনের মাত্রা সীমিত করা যায়।

এছাড়া, পরিপাক তন্ত্রের কোষ্ঠকাঠিন্য দুর করতেও এদের ভূমিকা রয়েছে। এই জাতিয় খাদ্য খেয়ে আপনি আপনার রক্তের গ্লুকোজ ও ট্রাইগ্লিসারাইড লেভেল নিয়ন্ত্রণে রাখাতে পারেন।

কোন কোন খাদ্যে কার্বোহাইড্রেট থাকে?

  • দানাদার বা grains, যেমন- চাউল, গম, ভুট্টা, নুডলস, পাস্তা, সিরিয়ালস, বার্লি ইত্যাদি।
  • ফলমুল, যেমন – আপেল, কলা, বেরিস, আম, তরমুজ, কমলা লেবু।
  • দুগ্ধজাত পণ্য, যেমন দুধ, দই, মিষ্টান্ন সামগ্রি।
  • লিগিউমস যেমন, শীমের বিচি, লেনটিলস (lentils), peas।
  • স্ন্যাক জাতিয় খাদ্য – যেমন ফাস্ট ফুড, মিষ্টি, কেক, ক্যান্ডি, desserts প্রভৃতি।
  • ফলের রস বা জুস, সোডা, এনার্জি ড্রিংকস যেখানে সুগার যোগ করা থাকে
  • স্টার্চি শাক সবজি, যেমন- গোল আলু, মিষ্টি আলু, কর্ন (corn), peas ইত্যাদি।

কি ধরণের কার্বোহাইড্রেট খাওয়া উচিত?

আপনার শরীরে শক্তির প্রয়োজন মিটাতে কার্বোহাইড্রেটের প্রয়োজনীয়তা অনশ্চিকার্য। তবে, গুরত্বপূর্ণ হলে আপনার বাছাই প্রক্রিয়- কোন ধরণের শর্করা আপনি বেছে নিবেন? কারন-

স্বাস্থ্যকর খাদ্যের গুনাগুন বিবেচনায় নিয়ে দুই ভাবে কার্বোহাইড্রেট জাতিয় খাদ্য বাজারে বিদ্যমান আছে। একটি- স্বাস্থ্যকর শর্করা এবং অপরটি অস্বাস্থ্যকর।

স্বাস্থ্য সুরক্ষায় স্বাস্থ্যকর শর্করা খাওয়ার উপর সকলেই একমত। কিন্তু আপনাকে জানতে হবে, কোন ধরণের খাদ্য খেলে স্বাস্থ্যকর কার্বোহাইড্রেট পাবেন আর কোন ধরণের খাদ্যে অস্বাস্থ্যকর বা খারাপ কার্বোহাইড্রেট পাবেন। তাহলে, চলুন জেনে নেই।

স্বাস্থ্যকর কার্বোহাইড্রেটের বৈশিষ্ট:

পুরো শষ্য দানা দিয়ে তৈরি দানাদার খাদ্য, যেমন, গম ও ভুট্টার পুরো শষ্য দানা দিয়ে আটা তৈরি করলে তা বাদামি রঙের হবে। চাউলের বেলাতেও তাই।

এতে পর্যাপ্ত প্রাকৃতিক ভিটামিন ও খনিজ লবনের সাথে সাথে আপনি ফাইবার পাচ্ছেন যা স্বাস্থ্যসম্ম খাদ্যের জন্য খুব গুরত্বপূর্ণ।

কোন খাদ্য whole grain দিয়ে তৈরি কিনা তা বুঝার জন্য আপনি খাদ্যটির লেবেল পরীক্ষা করুন এবং সেখানে তার উপাদনগুলি দেখুন- প্রত্যেক উপাদান ঠিক মত আছে কিনা।

পরিশোধিত ও অধিক প্রক্রিয়াজাত নয়, এমন খাদ্য।

স্বাস্থ্যকর খাদ্যের উদাহারণ- প্রক্রিয়াজাত নয় অথবা সামান্য প্রক্রিয়াজাত এমন পুরো শষ্য থেকে তৈরি দানাদার খাদ্য (whole grain), শাক সবজি, ফলমুল, বিভিন্ন প্রকারের শিম (beans) ইত্যাদি যারা শক্তিসহ বিভিন্ন প্রয়োজনিয় ভিটামিন, খণিজ লবন, ফাইবার, ফাইটো নিউট্রিয়েন্টস ইত্যাদি সরবরাহের সাথে সাথে স্বাস্থ্য।

অস্বাস্থ্যকর কার্বোহাইড্রেট এর বৈশিষ্ট:

  • এরা refined বা পরিশোধিত এবং অধিক পর্যায়ে প্রক্রিয়াজতকরণ খাদ্য।
  • পরিশোধিত হওয়ার কারণে এখানে ফাইবার, ভিটামিন ও খনিজ লবনের উপস্থিতি খুব কম।
  • এখানে সাধারণ সুগার এর পরিমান বেশি থাকে।
  • খাদ্যের স্বাদ বৃদ্ধির জন্য প্রক্রিয়াজাতকরণের অংশ হিসাবে সুগার এবং অন্যান্য কেমিক্যালস যোগ করা হয় যা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর।
  • এরা খুব সহজেই পরিপাক তন্ত্রে হজম হয়ে দ্রুত রক্তে মিশে যায় রক্তের গ্লুকোজ লেভেল বাড়িয়ে দেয়। ফলে, ডায়াবেটিস, ওবেসিটি বা দৈহিক ওজন বৃদ্ধি, ট্রাইগ্লিসারাইড এমন কি হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়া ঝুঁকি তৈরি করে।
  • এই জাতিয় খাদ্যের খুব ভাল উদাহারণ – সাদা আটার রুটি, সাদা চালের ভাত, বিভিন্ন ফাস্ট ফুড খাদ্য সামগ্রি, কোমল পানিয়, এনার্জি ড্রিংকস, ফলের জুস, মিষ্টান্ন খাদ্য ইত্যাদি।

কার্বোহাইড্রেটের উপকারিতা কি?

সঠিক শর্করা বাছাই করে খাদ্য তালিকায় অন্তর্ভূক্ত করার মধ্যে যথেষ্ট উপকারিতা নিহিত আছে। ভাল শর্করা আপনার দেহের প্রয়োজনিয় শক্তি সরবরাহ ছাড়াও অন্যান্য বিষয়েও গুরত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এমন কয়েকটি বিষয় নিচে উল্লেখ করা হল-


১. মানসিক স্বাস্থ্য: শর্করা আপনার মানসিক স্বাস্থ্য ধরে রাখার কাজে সহায়তা করে। ২০০৯ সালে JAMA জার্নালে প্রকাশিত এক গবেষণার ফলাফলে জানা যায় যে, অধিক চর্বি ও কম কার্বোহাইড্রেট বিশিষ্ট খাদ্য এক বছর ব্যাপি যাদের দেয়া হয়েছিল তাদের মাঝে অধিক পরিমানে বিষন্নতা, অবসাদগ্রস্থতা ও রাগান্বিত ভাব লক্ষ করা গিয়েছে। অপরদিকে, যাদের খাদ্যে কম ফ্যাট ও অধিক শর্করা দেওয়া হয়েছিল, তাদের স্বাভাবিক অবস্থায় পাওয়া গিয়েছিল।

এজন্য, বিজ্ঞানিগণের ধারণা শর্করা মস্তিষ্কের সেরোটনিন উৎপাদনে সহায়ক ভূমিকা পালন করে।

২. স্মৃতি শক্তি: শর্করা আমাদের স্মৃতি শক্তি বাড়াতেও সহায়তা করে। যা ২০০৮ সালে Tufts University কর্তৃক পরিচালিত এক গবেষণায় দেখা গিয়েছে।

৩. ওজন কমানো: ওজন কমানোর ক্ষেত্রে কার্বোহাইড্রেটের ভূমিকা আছে যদি আপনি সঠিক বা স্বাস্থ্যসম্মত শর্করা বেছে নিতে পারেন। সঠিক বা স্বাস্থ্যসম্মত শর্করা সম্পর্কে উপরে আলোচনা হয়েছে।

৪. হৃদযন্ত্রের স্বাস্থ্য: ফাইবার জাতিয় শর্করা কোলেস্টেরল কমাতে সহায়তা করে যা হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কমিয়ে দেয়।


২। আমিষ বা প্রোটিন :

প্রোটিন জাতীয় খাবার  সুষম খাদ্য এবং ৫ টি খাদ্য গ্রুপের অন্যতম অপরিহার্য একিট খাদ্য ও পুষ্টি উপাদান।  দৈনিক কি পরিমান প্রোটিন প্রয়োজন হয় তা নির্ভর করবে আপনার বয়স, লিঙ্গ এবং দৈহিক কেমন পরিশ্রম করেন- তার উপর।

প্রোটিনের অভাবের কারণে নানা রকম স্বাস্থ্যগত জটিলতার সৃষ্টি হতে পারে। আমাদের শরীরের ক্ষয়প্রাপ্ত কোষ পুরর্গঠন ও নতুন কোষ তৈরিসহ বিভিন্ন হরমোন এবং এনজাইম উৎপাদনে প্রোটিনের ভূমিকা রয়েছে। প্রোটিন জাতীয় খাদ্য শক্তি বা ক্যালরির একটি ভাল উৎসও বটে। আলোচ্য পোষ্টে প্রোটিন কি, প্রোটিন কিভাবে তৈরি হয়, প্রোটিন কত প্রকার, প্রোটিন জাতীয় খাবার এর উৎস, দৈনিক কি পরিমান প্রোটিন খেতে হয়, প্রোটিনের পুষ্টিমান কিভাবে নিরুপন করা হয়, ইত্যাদি বিষয়ের উপর তথ্য তুলে ধরা হবে। চলুন, দেখে নেই।

প্রোটিন কি?

প্রোটিন খুব গুরত্বপূর্ণ একটি পুষ্টি উপাদানের নাম যা আমাদের দেহের স্বাভাবিক বৃদ্ধি ও ক্ষয়পূরণের জন্য প্রয়োজন হয়। বিভিন্ন ধরণের প্রাণিজ ও উদ্ভিদজাত খাদ্যে প্রোটিন থাকে। প্রত্যেক মানুষের প্রোটিন জাতীয় খাদ্য গ্রহনের দৈনিক চাহিদা আছে যা নির্ভর করে তার বয়স, দৈহিক ওজন, লিঙ্গ এবং স্বাস্থ্যগত অবস্থার উপর।

আমাদের সকলের জন্যই প্রোটিনের এই দৈনিক চাহিদা পূরণ করা জরুরী। নয়ত, শরীর-স্বাস্থ্যের বিভিন্ন রকম অসুবিধা বা সমস্যা দেখা দিতে পারে। আমাদের শরীরের প্রত্যেক কোষ থেকে শুরু করে সর্বত্রই প্রোটিনের উপস্থিতি রয়েছে। বিশেষ করে দেহের মাংস পেশী, bone, ত্বক, চুল প্রভৃতি অঙ্গ প্রত্যঙ্গ প্রোটিনের উপস্থিতি বিদ্যমান। আপনি যেমন তেমন হিসাবে আপনাকে তুলে ধরার জন্য এবং আপনার নিজস্ব বৈশিষ্ট বাচিয়ে রাখার জন্য কম পক্ষে ১০০০০ রকমের প্রোটিনের ভূমিকা রয়েছে।


প্রোটিন কিভাবে তৈরি হয়?

প্রোটিনের ক্ষুদ্রতর একক এমাইনো এসিড। প্রোটিন বড় আকারের কমপ্লেক্স মলিকুল যা শত-সহশ্র এমাইনো এসিড দিয়ে গঠিত। এক কথায় প্রোটিনের বিল্ডিং ব্লক হল এমাইনো এসিড। এই এমাইনো এসিডগুলো একটি অপরটির সাথে চেইনের মত আবদ্ধ থাকে। রাসায়নিকভাবে এমাইনো এসিডে কার্বন, হাইড্রোজেন, নাইট্রোজেন, অক্সিজেন এবং সালফার থাকে। এমাইনো এসিডের সংখ্যা প্রায় ২০টি। বিশ ধরণের এমাইনো এসিড দিয়ে প্রোটিন তৈরি হয়। এর মধ্যে ১১টি অপ্রয়োজনীয় (non essential) এবং ৯টি প্রয়োজনীয় (essential) এমাইনো এসিড।


যে সব এমাইনো এসিড আমাদের শরীরের ভিতর তৈরি হতে পারে না, বাহিরের খাদ্য থেকে সংগ্রহ করতে হয়, তাহকে প্রয়োজনিয় এমাইনো এসিড বলে।

যে ধারাবাহিক ক্রম অনুসারে এমাইনো এসিডগুলো একটি অপরটির সাথে যুক্ত হয়ে প্রোটিন গঠন করে তাই উক্ত প্রোটিনের গঠন ও কার্যাবলি সুনির্দিষ্টভাবে প্রকাশ করে।


প্রোটিন কত প্রকার?

উৎসের উপর ভিত্তি করে প্রোটিন জাতীয় খাবার দুই প্রকার-

  • প্রাণিজ প্রোটিন : যেমন – ডিম, দুধ, মাংস
  • উদ্ভিদজাত প্রোটিন: যেমন- ‍soy, pea, বাদামি চাল, chick pea ইত্যাদি।

আবার, এমাইনো এসিডের উপস্থিতির উপর ভিত্তি করে প্রোটিন দুই প্রকার-

  • সম্পূর্ণ বা complete প্রোটিন : এখানে প্রয়োজনীয় সব রকমের এমাইনো এসিড উপস্থিত থাকে।
  • অসম্পূর্ণ বা incomplete প্রোটিন : এখানে প্রয়োজনীয় সব ৯টি এমাইনো এসিড উপস্থিত থাকে না।

প্রোটিন জাতীয় খাবার এর উৎস কি?

প্রাণি এবং উদ্ভিদ এই দুই উৎস থেকে প্রোটিন পাওয়া যায়। যে সব খাদ্যে মানসম্পন্ন প্রোটিন পাওয়া যায় তা নিম্নরুপ- মাছ,সামুদ্রিক খাদ্য, Lean meats: যে সব মাংসে ফ্যাটের পরিমান কম থাকে সেগুলো lean meat হিসাবে পরিচিত। পোল্ট্রি, টার্কি,ডিম,দুধ এবং দুগ্ধজাত খাদ্য, লিগিউমস এর মধ্যে beans এবং peas জাতীয় উদ্ভিদ। বাদাম বা nuts, Soy products

প্রাণিজ খাদ্যে উদ্ভিদজাত খাদ্যের তুলনায় অধিক পরিমানে প্রোটিন থাকে। তাই, আপনি যদি উভয় উৎস থেকেই প্রোটিন জাতীয় খাদ্য খেতে পারেন, তাহলে ভাল হয়।

প্রোটিনের পুষ্টিমান কিভাবে নিরুপন করা হয়?

কোন প্রোটিন জাতীয় খাবার এর মধ্যে সবগুলো প্রয়োজনিয় এমাইনো এসিড রয়েছে কিনা তার মাধ্যমে পরিমাপ করা হয় এর পুষ্টমান। বিভিন্ন প্রোটিন জাতীয় খাদ্যে বিভিন্ন পরিমানে এমাইনো এসিড থাকে। যেমন-

১. প্রাণিজ প্রোটিন যেমন মুরগির মাংস, গরুর মাংস, মাছ ও দুগ্ধজাত খাদ্য পণ্যে সবগুলি প্রয়োজনীয় এমাইনো এসিড থাকে। এজন্য, এদের পরিপূর্ণ প্রোটিন বা আদর্শ প্রোটিন বা উচ্চ মান সম্পন্ন জাতীয় খাদ্য বলা হয়।

২. Soy products, ‍amaranth যা এক ধরণের সবুজ শাকঁ এর বীজ, কুইনোয়া (quinoa) – এই জাতীয় উদ্ভিজাত প্রোটিনের মধ্যে প্রয়োজনীয় সব এমাইনো এসিড থাকে।

৩. অন্যানা্য উদ্ভিদজাত খাদ্য যেমন শীমের বীজ, মুসুর ডাল, বাদাম, ছোলা ইত্যাদির ভিতর কমপক্ষে একটি প্রয়োজনীয় এমাইনো এসিড অনুপস্থিত থাকে। ফলে এরা অসম্পূর্ণ প্রোটিন।

এজন্য, যার কড়া বা শুদ্ধ নিরামিষ ভোজী তাদের দেহের প্রয়োজনীয় সব এমাইনো এসিডের ঘাটতি পূরণের জন্য বিভিন্ন উদ্ভিদজাত উৎস থেকে প্রোটিন জাতীয় খাদ্য সংগ্রহ করতে হবে।

যদি আপনি নিরামিষ ভোজী হয়ে থাকেন এবং প্রোটিনের হরেক রকমের উদ্ভিদজাত উৎস থেকে খাদ্য খেতে পারেন, তাহলে ধরে নেয়া যায়, আপনার প্রোটিনের কোন ঘাটতি দেখা দিবে না।

যেমন, আপনি যদি এমন কোন খাবার খান যা cereals এবং legumes এর সংমিশ্রণে প্রস্তুত করা থাকে, তাহলে মাছ-মাংসের মত প্রোটিনের পুষ্টিমান সেখানে পাবেন। অর্থাৎ, প্রয়োজনীয় ৯টি এমাইনো এসিডের মিশ্রণ সেখানে পাওয়া যাবে।


দৈনিক কি পরিমান প্রোটিন খেতে হয়?

বিশেষজ্ঞ মহলের পরামর্শ অনুযায়ী, আপনার শারীরিক অবস্থার উপর ভিত্তি করে দৈনিক যত ক্যালরির প্রয়োজন হবে, তার ১০-৩৫% ক্যালরি প্রোটিন জাতীয় খাবার থেকে সংগ্রহ করা উচিত।

USDA এর তথ্য মতে, আমাদের বয়স, সেক্স এবং দৈনিক কি পরিমান দৈহিক কাজ কর্ম করা হয় তার উপর দৈনিক প্রোটিন গ্রহণের পরিমান নির্ভর করে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের National Academy of Medicine কর্তৃক সুপারিশকৃত দৈনিক প্রোটিন গ্রহনের পরিমান হল ০.৮ গ্রাম প্রতি কেজি দৈহিক ওজন অনুসারে। তাতে, ৬০ কেজি ওজনের কোন মানুষের জন্য দৈনিক প্রায় ৫০ গ্রাম প্রোটিনের প্রয়োজন হয়।

প্রোটিনের অভাবে কি হয়?

পরিতাপের বিষয় হল, বিশ্বব্যাপী লক্ষ লক্ষ মানুষ খাদ্য নিরাপত্তার অভাবে দৈনিক ন্যুনতম প্রোটিন থেকে বঞ্চিত। তবে, উন্নত বিশ্বের মানুষ তাদের চাহিদা অনুযায়ী প্রোটিন জাতীয় খাদ্য খেতে পারছে বলে বিভিন্ন উৎস থেকে জানা যায়।

যাহোক, প্রোটিনের অভাবে যে সব স্বাস্থ্য জটিলতা তৈরি হয়, তা নিম্নরুপ –

  1. অপুষ্টি;
  2. দৈহিক বৃদ্ধি ব্যহত হয়ে যাওয়া বিশেষ করে শৈশব বয়সে;
  3. রোগ প্রতিরোধ কমে যাওয়া;
  4. ক্ষুধামন্দা;
  5. মাংস পেশীর শক্তি কমে যাওয়া;
  6. Edema বা চামড়ার নিচে পানি জমা
  7. হরমোনের ভারসাম্যহীনতা, ইত্যাদি।


#৩স্নেহপদার্থ বা ফ্যাট :

ফ্যাট জাতীয় খাবার আমাদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য খুবই প্রয়োজন। ফ্যাট ০৪টি ম্যাক্রো নিউট্রিয়েন্ট এর একটি। অপর তিনটি হল পানি, কার্বোহাড্রেট ও প্রোটিন। এই নিউট্রিয়েন্ট অধিক পরিমানে খাদ্যের সাথে খেতে হয় বিধায় এদের ম্যাক্রো নিউট্রিয়েন্ট বলে। পুষ্টি উপাদানের অপর দুই উপাদান ভিটামিন ও খনিজ লবন দেহে স্বল্প মাত্রায় প্রয়োজন হয়, তাই এরা মাইক্রো নিউট্রিয়েন্ট নামে পরিচিত।

পুষ্টির ছয়টি উপাদানের মধ্যে গুরত্বপূর্ণ এক উপাদানের নাম ফ্যাট। ফ্যাট অন্যান্য ম্যাক্রো নিউট্রিয়েন্টের মধ্যে সুষম খাদ্যের ফরমুলায় তুলনামুলক কম পরিমানে খেতে হয়।

ফ্যাট জাতীয় খাদ্যের মধ্যে ভাল-মন্দ আছে। আপনি যদি অজ্ঞতাবশত: ধারাবাহিকভাবে স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর এমন ফ্যাট খেতে থাকেন, তাহলে আপনার হৃদরোগ, স্ট্রোক থেকে শুরু করে অনেক জটিল রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যাবে।

তাই, আলোচ্য পোষ্টে ফ্যাট কি, ফ্যাট কত প্রকার, কোনটি ভাল আর কোনটি খারাপ, দৈনিক কতটুকু ফ্যাট খেতে হয়, আপনার দৈনিক যত ক্যালরির প্রয়োজন তার কমপক্ষে কতটুকু ফ্যাট জাতীয় খাবার থেকে হওয়া উচিত – ইত্যাদি বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হবে। চলুন, শুরু করা যাক।

ফ্যাট কি ?

উপরের আলোচনা থেকে ফ্যাট কি, সে সম্পর্কে ইতোমধ্যে একটি প্রাথমিক ধারণা পেয়ে গেছেন।

ফ্যাট হল এক ধরণের পুষ্টি উপাদান যা খাদ্যের মাধ্যমে আমরা পেয়ে থাকি। খাদ্যের সাথে ফ্যাট জাতীয় পুষ্টি উপাদান গ্রহণের প্রয়োজন রয়েছে। তবে, একই সাথে অতিরিক্ত ফ্যাট আবার স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর – এটিও মনে রাখতে হবে।

আপনি যে ফ্যাট খেয়ে থাকেন, তা আপনার শরীরে শক্তি সরবরাহ করে। দৈহিক ব্যায়ামের সময় বা অন্য কোনভাবে শারীরিক পরিশ্রমের সময়, আপনি যে কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবার খান তা থেকে উৎপাদিত ক্যালরি আপনার দেহ ব্যবহার করে।

কিন্তু, এই দৈহিক কর্মকান্ডের ২০ মিনিট পর থেকে আংশিকভাবে আপনার দেহ ফ্যাট থেকে উৎপাদিত ক্যালরি খরচ করা শুরু করে।

এছাড়া, আপনার ত্বক ও চুলের স্বাস্থ্য সুরক্ষার কাজেও ফ্যাট ভূমিকা রাখে।

খাদ্যের সাথে আপনি যে ফ্যাট গ্রহন করেন তা আপনাকে প্রয়োজনীয় ফ্যাটি এসিড যেমন লিনোলিক এসিড ও লিনোলেনিক এসিড সরবরাহ করে। যা আপনার মস্তিষ্ক গঠন, প্রদাহ দমন এবং রক্ত জমাট বাধতে সহায়তা করে।

ফ্যাট জাতীয় খাবার কেন প্রয়োজন?

নিম্নলিখিত ক্ষেত্রে দেহে ফ্যাটের প্রয়োজন –

  1. শক্তি সরবরাহ করে।
  2. প্রয়োজনীয় ফ্যাটি এসিডের উৎস যা আমাদের শরীরে তৈরি করতে পারে না।
  3. কোষ প্রাচীরের উপাদান হিসাবে বিদ্যমান থাকে।
  4. ভিটামিন-এ, ভিটামিন-ডি, ভিটামিন-ই এবং ভিটামিন-কে শরীরে শোষন হতে ফ্যাট এর প্রয়োজন হয়। এজন্য এদের ফ্যাট সলিউবল ভিটামিন বলে।
  5. দেহকে উত্তাপ রাখতে কাজ করে।

যেকোন ফ্যাট আমাদের শরীরের কোষে ব্যবহৃত হতে না পারলে বা শক্তিতে পরিণত হলে; তা পুনরায় এমন ফ্যাটে পরিণত হয় যা শরীরের জমা থাকে। এভাবে, দেহের প্রয়োজনের চেয়ে অতিরিক্ত কার্বোহাইড্রেট এবং প্রোটিন শরীরের ফ্যাটে রুপান্তর হয়।

সমস্ত ফ্যাট অধিক পরিমানে ক্যালরি সমৃদ্ধ। ফ্যাট জাতীয় খাবার এর মধ্যে এক গ্রাম ফ্যাট, সম্পৃক্ত বা অসম্পৃক্ত যাই হোক না কেন, ৯ ক্যালরি শক্তি সরবরাহ করে। যেখানে, প্রতি গ্রাম কার্বোহাইড্রেট ও প্রোটিন থেকে সরবরাহকৃত শক্তি ৪ ক্যালরি মাত্র।


ফ্যাট কত প্রকার?

আনস্যাচুরেটেড ফ্যাট

আনস্যাচুরেটেড বা অসম্পৃক্ত ফ্যাট ঘরের তাপমাত্রায় তরল। এরা উপকারি ফ্যাট হিসাবে বিবেচিত। কারণ, এটি রক্তের কোলেস্টেরল মাত্রা স্বাভাবিক রাখতে সহায়তা করে। প্রদাহ দুর করতে কাজ করে, হৃদ স্পন্দন স্বাভাবিক রাখে। এর বাইরেও এদের অনেক উপকারিতা রয়েছে।

আনস্যাচুরেটেড ফ্যাট প্রধানত: উদ্ভিদজাত খাদ্য পণ্য যেমন ভেজিটেবিল ওয়েল, বাদাম ও বিভিন্ন প্রকার বীজ যা খাদ্য হিসাবে ব্যবহৃত হয় – ইত্যাদির ভিতর পাওয়া যায়।


আনস্যাচুরেটেড ফ্যাট দু’ ধরণের হয়ে থাকে–

১. মনো আনস্যাচুরেটেড ফ্যাট: খাদ্যে বিদ্যমান ফ্যাটের মধ্যে এই ধরণের ফ্যাট স্বাস্থ্যের জন্য উপকারি বলে স্বীকৃত। ঘরের তাপমাত্রায় এরা তরল থাকে কিন্তু ঠান্ডা করা হলে জমাট বেধে যায়। রাসায়নিক ভাবে, এ ধরণের ফ্যাট মলিকুলে কার্বন বন্ধনের একটি বন্ধন খালি থাকে। তাই তাদের মনো আনস্যাচুরেটেড ফ্যাট বলে।

২. পলি আনস্যাচুরেটেড ফ্যাট: রাসায়নিকভাবে, যে সব ফ্যাট মলিকুলে কার্বনের একধিক বন্ধন মুক্ত থাকে তারা পলি আন স্যাচুরেটেড ফ্যাট। এই সব ফ্যাটও স্বাস্থ্যের জন্য উপকারি।

এই ধরণের ফ্যাটও রুম টেম্পারেচারে তরল অবস্থায় বিদ্যমান থাকে।


স্যাচুরেটেড ফ্যাট

স্যাচুরেটেড ফ্যাট স্বাভাবিক তাপমাত্রায় সলিড অবস্থায় থাকে। এজন্য এদের মাঝে মাঝে সলিড ফ্যাটও বলা হয়। এই ধরণের ফ্যাটে কার্বনের মুল কাঠামোর প্রতিটি বন্ধনই হাইড্রোজেন পরমানু দ্বারা যুক্ত থাকে।

আপনি যদি দীর্ঘ সময় ধরে স্যাচুরেটেড ফ্যাট খেতে থাকেন, তাহলে এক পর্যায়ে আপনার নানা রকম স্বাস্থ্য ঝুঁকি তৈরি হতে পারে। বিশেষ করে, আপনার রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা বেড়ে যেতে পারে। ফলে, হৃদরোগসহ অন্যান্য জটিল রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকবে।

সব ধরণের খাদ্যেই স্যাচুরেটেড ফ্যাট থাকে। এমনকি, স্বাস্থ্যকর খাদ্য যেমন, মুরগির মাংস, বাদাম – এদের মাঝেও উপস্থিত থাকে। যদিও তা গরুর মাংস, পনির, আইসক্রিম – ইত্যাদির তুলনায় অনেক কম।

স্যাচুরেটেড ফ্যাট প্রধানত প্রাণিজাত খাদ্যে অধিক পরিমানে পাওয়া যায়। তবে, কিছু কিছু উদ্ভিদজাত খাদ্যেও এদের ভাল রকম উপস্থিতি লক্ষ করা যায়, যেমন- নারিকেল, নারিকেল তৈল, পাল্ম তৈল ইত্যাদি।


ট্র্যানস ফ্যাট

ফ্যাট জাতীয় খাবার এর মধ্যে কৃত্রিম ভাবে উৎপাদিত ফ্যাটকে ট্র্যানস ফ্যাট বলে। তরল ভেজিটেবিল তৈল- এ হাইড্রোজেন যোগ করে তা অধিক সলিড করা হয়। এভাবে যে ফ্যাট তৈরি হয় তার নামই ট্র্যানস ফ্যাট। ট্র্যানস ফ্যাটের অপর নাম আংশিক হাইড্রোজেনেটেড তৈল। আবার অনেক খাদ্য প্রস্তুতকারক এমন আছে যারা খাদ্যের মেয়াদ কাল বৃদ্ধির জন্য খাদ্যের সাথে হাইড্রোজেনেটেড তৈল যোগ করে।

ট্র্যানস ফ্যাট স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। এরা আমাদের খারাপ কোলেস্টেরল (LDL) বাড়িয়ে দেয় এবং ভাল কোলেস্টেরল (HDL) কমিয়ে দেয়। ট্র্যানস ফ্যাট খাওয়ার সর্বনিম্ন বলে কোন মাত্রা নেই। তাই, এটি পুরোপুরিভাবে পরিহার করা বাঞ্চনীয়।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয় – প্রতি বছর ৫০০,০০০ জন লোকের হৃদরোগে মৃত্যু বরণের সাথে ট্র্যানস ফ্যাটে যোগ সুত্র রয়েছে।


ফ্যাট জাতীয় খাবার এর উৎস

মনো আনস্যাচুরেটেড ফ্যাট এর উৎস নিম্নলিখিত খাদ্যে ইহা পাওয়া যায়-

  • জলপাই বা olive
  • চিনা বাদাম বা peanuts, কাজু বাদাম বা almond, hazelnuts, pecans
  • কুমড়া ও তিলের বীজ, ইত্যাদি।

পলি আনস্যাচুরেটেড ফ্যাটের উৎস নিচের খাদ্যগুলিতে এই ফ্যাট পাওয়া যায়-

সানফ্লাওয়ার, corn, সয়াবিন, তিষি বা flaxseed,আখরোট বা walnuts,তিষির বীজ

ওমেগা-৩ ফ্যাট যা মাছে পাওয়া যায়

ওমেগা-৬ ফ্যাট যা সানফ্লাওয়ার, সয়াবিন তৈল এবং কিছু বাদামে পাওয়া যায়,Canola oil


স্যাচুরেটেড ফ্যাট এর উৎস

প্রাণিজ উৎস

দুগ্ধজাত খাদ্য যেমন সম্পূর্ণ ফ্যাটযুক্ত দুধ, মাখন, ক্রিম, পনির

মাংস যেমন গরুর মাংস, খাসির মাংস, ভেড়ার মাংস, মুরগির মাংস ও প্রক্রিয়াজাত মাংস

উদ্ভিদ জাত উৎস

পাল্ম তৈল,নারিকেল, নারিকেলের দুধ ও ক্রিম , Cooking margarine , প্রক্রিয়াজাত খাদ্য


ফ্যাটি স্ন্যাকস জাতীয় খাদ্য

চিপস, পিজা, হামবার্গার,কেক এবং উচ্চ ফ্যাট বিশিষ্ট muffins, Pastries এবং pies

ট্র্যানস ফ্যাটের উৎস

ভাজা খাদ্য,প্রক্রিয়াজাত খাদ্য যেমন পিজা, cookies এবং crackers,ফাস্ট ফুড,প্যাকেটজাত খাদ্য, ইত্যাদি।

দৈনিক কতটুকু ফ্যাট খাওয়া প্রয়োজন?

ফ্যাট জাতীয় খাবার বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনা মোতাবেক খাওয়া উচিত –

ট্র্যানস ফ্যাট সম্পূর্ণরুপে বর্জন করুন।

আপনার জন্য দৈনিক যে পরিমান ক্যালরি গ্রহন করা প্রয়োজন তার সর্বোচ্চ ৩০% ক্যালরি ফ্যাট জাতীয় খাদ্য থেকে গ্রহণ করুন।

সর্বোচ্চ ১০% স্যাচুরেটেড ফ্যাট এবং ২০% গ্রহন করুন আনস্যাচুরেটেড ফ্যাট গ্রহণ করুন।

#৪খাদ্যপ্রাণ বা ভিটামিন :

ভিটামিন কি?
এটি কত প্রকার এবং কি কি? 
আমার লিখা অন্য আরেকটি পোস্টে পাবেন 
দয়া করে পড়ে নিবেন 
যদি আপনি খাবার পুষ্টি সম্পর্কে ভালো করে জানতে চান। 

জানতে এই লিংকে ক্লিক করুন 

https://www.bangladeshichefs.com/2024/03/what-is-vitamin-and-their-types.html

যে বিশেষ জৈব পরিপোষক সাধারণ খাদ্যে অতি অল্প পরিমাণে থেকে দেহের স্বআভাবিক পুষ্টি ও বৃদ্ধিতে সহায়তা করে এবং রোগপ্রতিরোধ শক্তি বৃদ্ধি করে, তাকে ভিটামিন বলে।

শ্রেণীবিভাগ : দ্রাব্যতা অনুসারে ভিটামিনগুলিকে দুভাগে ভাগ করা হয়। যথা:

  • ১. তেল বা স্নেহপদার্থে দ্রবনীয় ভিটামিন : যে সব ভিটামিন তেল বা স্নেহপদার্থে দ্রবীভূত হয়, তাদের স্নেহপদার্থে দ্রবনীয় ভিটামিন বলে। যথা: A, D, E, K ।
  • ২. জলে দ্রবনীয় ভিটামিন : যে সব ভিটামিন জলে দ্রবীত হয়, তাদের জলে দ্রবনীয় ভিটামিন বলে।। যথা: B, C এবং P ।

উৎস : ভিটামিন দুধ, ডিম, মাছ, মাংস, প্রানীদের যকৃৎ, মাছের যকৃৎ নিঃসৃত তেল, মাখন, উদ্ভিজ্জ তেল, বাদাম, ঢেঁকিছাটা চাল, লাল আটা, ছোলা, মুগ, বীট, গাজর, মটরশুঁটি, পালংশাক, টমেটো, বাঁধাকপি, ফুলকপি, লেবু, আম, আমলকি, আপেল ইত্যাদিতে পাওয়া যায়। ভিটামিনের এই সব উৎসের মধ্যে দুধ, ডিম, পালংশাক, টমেটো, মটরশুঁটি, কলা, আপেল ইত্যাদিতে বেশীর ভাগ ভিটামিন পাওয়া যায়। ভিটামিন A এবং D এর উৎস মোটামুটি এক, যেমন : কড্, হ্যালিবাট যকৃত নিঃসৃত তেল (লিভার অয়েল), মাখন, দুধ, ডিম,গাজর, বাঁধাকপি, ইত্যাদি। নারিকেল, সরষে, রেড়ী বীজ, তুলা বীজ ইত্যাদিতে উদ্ভিজ্জ ফ্যাট এবং মাখন, ঘি, চর্বি ইত্যাদিতে প্রাণিজ ফ্যাট থাকে। সাধারন উত্তাপে যে সমস্ত ফ্যাট তরল অবস্থায় থাকে, তাদের তেল বলে।

পুষ্টিগত গুরুত্ব বা কাজ :

  • তাপ শক্তি উৎপন্ন করা ফ্যাট জাতীয় খাদ্যে প্রধান কাজ।
  • ফ্যাট প্রাণিদেহের তাপ নিয়ন্ত্রনে রাখে।
  • ফ্যাট মেদরুপে ভবিষ্যতের খাদ্যের উৎস হিসাবে সঞ্চিত থাকে।
  • ফ্যাট A, D, E, K ভিটামিনকে দ্রবীভূত রাখে এবং এদের শোষণে সাহায্য করে।
  • ফ্যাট যকৃৎ থেকে পিত্তরস এবং অগ্ন্যাশয় থেকে অগ্ন্যাশয় রস নিঃসরণে সাহায্য করে।
  • স্নেহপদার্থ মলাশয় ও পায়ু পিচ্ছিল করে মল নিঃসরণে সহায়তা করে।
  • কোলেস্টেরল নামক ফ্যাট থেকে ভিটামিন-ডি, ইস্ট্রোজেন, টেস্টোস্টেরন নামক হরমোন উৎপন্ন হয়।

এই প্রসঙ্গে উল্লেখ করা যায় যে, ১ গ্রাম অণু ফ্যাট দহন হলে ৯.৩ কেসিএল তাপ শক্তি উৎপন্ন হয়। একজন প্রাপ্তবয়স্ক লোকের প্রত্যহ প্রায় ৫০ গ্রাম স্নেহপদার্থ প্রয়োজন।

ভিটামিন কি? এটি কত প্রকার এবং কি কি? 

জানতে এই লিংকে ক্লিক করুন https://www.bangladeshichefs.com/2024/03/what-is-vitamin-and-their-types.html

#৫খনিজ লবণ

মিনারেল কি? 
মিনারেল বা Mineral হলো খাদ্যের সেই মৌলিক উপাদান যা আমাদের খাবারে উপস্থিত থাকে এবং নানা রকম শরীরবৃত্তীয় কাজে আমাদেরকে সাহায্য করে। অনেক সময় ভিটামিন ও mineral শব্দ দুইটি একে অপরের পরিপূরক হিসেবে ব্যবহার করা হলেও এরা আসলে এক না। 

Mineral হলো প্রধানত অজৈব উপাদান। আমাদের শরীর নানা রকম কাজে নানা রকমের মিনারেলস ব্যবহার করে থাকে। এই উপাদান সমূহ আমাদের সার্বিক পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয়।

আমাদের শরীরে নানা অনুপাতে এই সকল উপাদানগুলো প্রয়োজন হয়। এই সকল উপাদানের অভাবে আমাদের শরীরে নানা রকম অভাবজনিত লক্ষণ দেখা দেয়। আমরা এই সকল উপাদান পেতে পারি mineral এ পরিপূর্ণ খাবার থেকে। 

খাদ্যে মিনারেলস এর প্রকারভেদ:
আমাদের শরীরে নানা রকমের উপাদান আলাদা আলাদা পরিমাণে প্রয়োজন হয়। কিছু কিছু উপাদান খুব অল্প পরিমাণে প্রয়োজন হয় আবার কিছু কিছু উপাদান প্রয়োজন হয় অনেক পরিমাণে।

তাই আমাদের এই অত্যাবশ্যকীয়  Mineral গুলোকে প্রয়োজনীয়তা অনুসারে ভাগ করা হয় প্রধানত দুই ভাগে: 
  • ম্যাক্রোমিনারেলস
  • মাইক্রোমিনারেলস
১. ম্যাক্রোমিনারেলস
এই উপাদান সমূহ আমাদের শরীরে অনেক বেশি পরিমাণে প্রয়োজন হয়। এইজন্য এদেরকে আমাদের শরীরের মুখ্য উপাদান কিংবা Major Elementsও বলে। এই সকল উপাদানের মাঝে রয়েছে সোডিয়াম, পটাসিয়াম, ক্যালসিয়াম, ক্লোরাইড, ম্যাগনেসিয়াম, ফসফরাস ও সালফার। আমাদের শরীর এই সকল উপাদান তৈরি করতে পারে না। তাই নানা রকমের খাদ্য থেকেই এর ঘাটতি মেটাতে হয়। 

এই সকল উপাদানের ঘাটতি আমাদের স্বাস্থ্যকে তীব্র ঝুঁকির দিকে নিয়ে যায়। যেমনঃ ক্যালসিয়াম আমাদের হাড়ের গঠনের সাথে সম্পর্কিত। তাই এই উপাদানের অভাবে হাড়ের গঠন বাধাগ্রস্ত হয়। 

আবার আয়োডিনের অভাবে গলগণ্ড রোগ হতে পারে। 

২. মাইক্রোমিনারেলস বা ট্রেস মিনারেলস
এই ধরণের উপাদান আমাদের শরীরে সারা জীবনেই খুব কম পরিমাণে প্রয়োজন হয়। এজন্য এদেরকে গৌণ উপাদান কিংবা ট্রেস মিনারেলসও বলা হয়। এই সকল উপাদানের মাঝে রয়েছে আয়রন, কপার, আয়োডিন, নিকেল, জিংক, মলিবডেনাম, সেলেনিয়াম, ফ্লোরাইড, কোবাল্ট, ম্যাঙ্গানিজ। 

এই সকল উপাদান অত্যধিক পরিমাণে গ্রহণ করা হলে Mineral Toxicity দেখা দিতে পারে। যারা একটানা নানা রকমের ডায়েটেরি সাপ্লিমেন্টস সেবন করে যাচ্ছেন তাদের মাঝে সেলেনিয়াম টক্সিসিটির মাত্রা অনেক। 

এই সকল উপাদানের অভাবে আমাদের শরীরে নানা রকম অভাবজনিত লক্ষণ দেখা দেয়। একে Mineral Deficiency বলে। 

মিনারেলস এর কাজ !

প্রতিটা মিনারেলই আমাদের শরীরে আলাদা আলাদা নানা রকমের কাজে নিয়োজিত। নিচে আলাদা আলাদা  Minerals এর কাজ উল্লেখ করা হলো: 

ক্যালসিয়াম:
রক্ত জমাট বাঁধতে সাহায্য করে।
পেশীর সংকোচন ও স্নায়ুর সঞ্চালনে সাহায্য করে।
হাড়ের গঠন ও একে শক্তিশালী করতে প্রয়ো।

ক্লোরাইড:
রক্তের ঘনত্ব, রক্ত চাপ ও শরীরের অন্যান্য তরল উপাদানের pH লেভেল নিয়ন্ত্রণ করে। 
কপার:

লোহিত রক্ত কণিকা তৈরিতে
স্নায়ুর স্বাস্থ্য নিশ্চিতকরণে

আয়োডিন:
থাইরোয়েড গ্লান্ডকে স্বাভাবিক রাখে।
মস্তিষ্কের কর্মকাণ্ড পরিচালনায় সাহায্য করে।
কোষের স্বাভাবিক বৃদ্ধি ও কার্যকলাপ নিয়ন্ত্রণ করে।

 ম্যাগনেসিয়াম:
শক্ত হাড় গঠনে সাহায্য করে।
শক্তি উৎপাদনে ভূমিকা রাখে।
পেশী ও স্নায়ুর সঠিক ও স্বাভাবিক সঞ্চালনে সাহায্য করে।

আয়রন:
সারাদেহে অক্সিজেন সরবরাহে সাহায্য করে।
শক্তি উৎপাদন ও সঞ্চয়ে ভূমিকা রয়েছে।

ম্যাঙ্গানিজ: 
পানির ভারসাম্য বজায় রাখে।
নার্ভ ইমপালসকে পরিবহনে সাহায্য করে।

সোডিয়াম:
কোষের অসমোটিক ব্যালেন্স রক্ষা করতে সাহায্য করে। 
রক্তের ঘনত্ব ধরে রাখে এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে।
সালফার:

প্রোটিন সিনথেসিস এ সাহায্য করে।
কোষকে ক্ষতি থেকে রক্ষা করে।

ফসফরাস:
শরীরকে শক্তি সঞ্চয় ও তা ব্যবহারে সাহায্য করে। 
ক্যালসিয়ামের সাথে হাড় গঠনে সাহায্য করে।

পটাশিয়াম: 
পেশীর সংকোচনে সাহায্য করে ও নার্ভ ইমপালস পরিবহনে সহায়তা করে।
শরীরের তরলের ভারসাম্য রক্ষা করে।
স্নায়ুতন্ত্রের স্বাভাবিক কর্মকাণ্ড পরিচালনায় সাহায্য করে। 

সেলেনিয়াম:
রোগপ্রতিরোধ ব্যবস্থায় এর অবদান রয়েছে।
এন্টি অক্সিডেন্ট ডিফেন্স সিস্টেম পরিচালনায় সহায়তা করে। 

মলিবডেনাম: 
কিছু অতি প্রয়োজনীয় এনজাইমকে সচল করতে।
জেনেটিক মেটারিয়াল রিপেয়ার করে। 

জিংক: 
ক্ষত পূরণে সাহায্য করে।
রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে।
শক্ত হাড়্ গঠণে সাহায্য করে।
কোষের বিভাজনে এর অনেক গুরুত্ব রয়েছে। 

নিকেল: 
খাবারের পুষ্টি শোষণে সাহায্য করে।
লোহিত রক্ত কণিকার কাজে সহায়তা করে। 

মিনারেলস এর উৎস
  • ক্যালসিয়াম: কাঠবাদাম, গাজর, দুধ, ব্রকলি, পেঁপে, রসুন
  • ক্লোরাইড: লবণ, দুধ, কলিজা, বাদাম, সয়াসস
  • কপার: চিংড়ি, বাদাম, ইস্ট
  • আয়োডিন: সামুদ্রিক খাদ্য, আয়োডিনযুক্ত লবণ 
  • ম্যাগনেসিয়াম: মধু, কাঠবাদাম, সামুদ্রিক মাছ, আনারস, নানা পদের শাক
  • আয়রন: কলা, মিষ্টি আলু, ডিম, মাংস, নানা পদের শাক
  • ম্যাঙ্গানিজ: সিরিয়াল, হোল গ্রেইন, বাদাম, তেল, নানা রকমের শাক
  • সোডিয়াম: লবণ, পনির, দুধ, সয়াসস
  • সালফার: পনির, দুধ, বাদাম, শালগম, পেঁয়াজ, মাছ, বাঁধাকপি, ফুলকপি, শসা, ব্রকলি
  • ফসফরাস: মাশরুম, কাজু বাদাম, কাঠ বাদাম, মাছ, শিম, গাজর। 
  • পটাশিয়াম: পালং শাক, আপে, কমলা, কলা, টমেটো, লেবু, আনারস, মাশরুম, ডুমুর ইত্যাদি 
  • মলিবডেনাম: বাদাম, শাক-সবজি, সিরিয়াল
  • সেলেনিয়াম: সামুদ্রিক খাবার, কলিজা 
  • জিংক: গরুর মাংস, চিনা বাদাম, কাঠ বাদাম, মুরগীর মাংস, ডাল 
  • নিকেল: কোকো, সয়াবিন, কাঠবাদাম, চিনা বাদাম 

মিনারেল টক্সিসিটি
অনেক সময় দেখা যায়, আমরা অতিরিক্ত পরিমাণে কোনও একটি উপাদান গ্রহণ করে ফেলি। এই অতিরিক্ত গ্রহণ, কম পরিমাণ গ্রহণ অপেক্ষা কোনও অংশে কম ক্ষতিকর না। এই পরিস্থিতিকে মিনারেল টক্সিসিটি বলে। যেমনঃ ক্যালসিয়ামের পরিমাণ বেড়ে গেলে কিডনিতে পাথর হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে, সোডিয়ামের পরিমাণের উপরে নির্ভর করে রক্তচাপের মাত্রা কিংবা অতিরিক্ত জিংক গ্রহণ ডায়রিয়া, কিডনি নষ্ট হয়ে যাওয়ার মতো মারাত্মক সমস্যা জন্ম দিতে পারে। 

পরিশেষে, সুষম খাবার আমাদেরকে এই সকল উপাদানের ঘাটতি থেকে বাঁচিয়ে রাখতে পারে। তবে কোনো সমস্যা মনে হলে অবশ্যই আমাদের ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া কোনো প্রকারের সাপ্লিমেন্ট নেওয়া উচিত না আর মন চাইলেই প্রেসক্রিপশনের চাইতে অধিক মেয়াদে এই সকল সাপ্লিমেট সেবন করাও উচিত না। কারণ আমাদের খাবার থেকেই আমরা এই উপাদানসমূহকে প্রয়োজনীয় মাত্রায় পেতে পারি।

#৬পানি:

পানি খাদ্যের একটি উপাদান। মানবদেহের জন্য পানি অপরিহার্য। দেহের গঠন এবং অভ্যন্তরীণ কাজ পানি ছাড়া চলতে পারে না। আমাদের দৈহিক ওজনের ৬০-৭০% পানি। আমাদের রক্ত মাংস, স্নায়ু, দাঁত, হাড় ইত্যাদি প্রতিটি অঙ্গ গঠনের জন্য পানি প্রয়োজন। দেহকোষ গঠন ও কোষের যাবতীয় শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়াগুলো পানি ছাড়া কোনোভাবেই সম্ভব নয়।

পুষ্টি তথ্য

এক কাপ (8 তরল আউন্স বা 237 গ্রাম) জল 0 ক্যালোরি, 0 গ্রাম প্রোটিন, 0 গ্রাম কার্বোহাইড্রেট এবং 0 গ্রাম চর্বি ও  9.5 মিলিগ্রাম সোডিয়াম : সরবরাহ করে। জল হাইড্রেশনের একটি চমৎকার উৎস এবং এতে ক্যালসিয়াম, ফ্লোরাইড, আয়রন, পটাসিয়াম বা সোডিয়াম সহ অসংখ্য খনিজ থাকতে পারে। পুষ্টি তথ্য USDA দ্বারা প্রদান করা হয়. 

শর্করা

পানীয় জলে কোন কার্বোহাইড্রেট, চিনি, ফাইবার বা স্টার্চ থাকে না যদি না এটি রসের মতো স্বাদ যোগ করে।

ভিটামিন এবং খনিজ

কিছু জলে ক্যালসিয়াম, ফ্লোরাইড, আয়রন, পটাসিয়াম বা সোডিয়ামের মতো খনিজ পদার্থ থাকে যা উৎসের উপর নির্ভর করে এবং এটি ফিল্টার বা পাতিত কিনা । কিছু স্বাদযুক্ত বা বর্ধিত জল পণ্য যোগ করা ভিটামিন বা ইলেক্ট্রোলাইট ধারণ করে।

স্বাস্থ্য সুবিধাসমুহ

প্রতিদিন প্রচুর পরিমাণে জল পান করা নিশ্চিত করবে যে আপনি প্রয়োজনীয় শরীরের কার্যকারিতার জন্য পর্যাপ্ত জল পান । পানীয় জল শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে এবং আপনি যখন গরম পরিবেশে থাকেন তখন আপনাকে ঠান্ডা রাখতে সাহায্য করে।

ন্যাশনাল একাডেমি অফ সায়েন্সেস, ইঞ্জিনিয়ারিং এবং মেডিসিনের হেলথ অ্যান্ড মেডিসিন ডিভিশন সুপারিশ করে যে প্রাপ্তবয়স্ক মহিলারা প্রতিদিন প্রায় 91 আউন্স জল (2.7 লিটার বা 11.5 কাপ) পান করে এবং পুরুষরা প্রায় 125 আউন্স (3.7 লিটার বা 15.5 কাপ) পান। এতে আপনি যে পানীয় পান এবং আপনি যে খাবার খান তা সহ জলের সমস্ত উত্স অন্তর্ভুক্ত করে।

ডিহাইড্রেশন প্রতিরোধ করে !

কিছু গবেষণা ইঙ্গিত দেয় যে এমনকি হালকা মাত্রার ডিহাইড্রেশনও শারীরিক ক্রিয়াকলাপকে ব্যাহত করতে পারে, বা অন্তত আপনাকে এমন মনে করতে পারে যে এটি করার জন্য আপনার পক্ষ থেকে আরও প্রচেষ্টার প্রয়োজন। ডিহাইড্রেশন কখনও কখনও মাথাব্যথাও শুরু করতে পারে।

বেশিরভাগ সময়, এবং যতক্ষণ আপনি সুস্থ থাকেন, তৃষ্ণা আপনার পথপ্রদর্শক হতে পারে, তাই আপনি যদি তৃষ্ণার্ত হন তবে আপনার আরও জল পান করা উচিত। এটা সম্ভব যে তৃষ্ণা মেকানিজম কিছু বয়স্ক লোকে বা কঠোর ব্যায়ামের সময় কাজ করে না। 

আপনার আরও জলের প্রয়োজন হবে এবং আপনি যদি গরম তাপমাত্রায় থাকেন বা আপনি শারীরিকভাবে সক্রিয় থাকেন, যেমন কঠোর ব্যায়াম বা শ্রম-নিবিড় কাজের সময় আপনার তৃষ্ণার্ত হওয়ার আগে পান করা উচিত। যারা গর্ভবতী বা স্তন্যপায়ী তাদেরও অতিরিক্ত পানি প্রয়োজন।


শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে !

শরীরে পানির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কাজ হল তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করা। উদাহরণস্বরূপ, খুব গরম হলে ঘাম শরীরকে ঠান্ডা করার একটি কার্যকর উপায়।


মেজাজ উন্নত করতে পারে !

ডিহাইড্রেশনের হালকা মাত্রা আপনার জ্ঞানীয় ফাংশন এবং মেজাজকেও প্রভাবিত করতে পারে, তাই পর্যাপ্ত জল পান করা আপনার মস্তিষ্কের কার্যকারিতার জন্যও ভাল। একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে মাত্র 2% দ্বারা ডিহাইড্রেটেড হওয়ার ফলে কিছু জ্ঞানীয় ফাংশন ব্যাহত হয়।


বর্জ্য দূর করে !

কিডনি প্রস্রাব তৈরির জন্য পানি ব্যবহার করে, যা শরীরকে বিষাক্ত পদার্থ থেকে মুক্তি দিতে সাহায্য করে। হাইড্রেটেড থাকা কিডনিকে আরও দক্ষতার সাথে কাজ করতে সহায়তা করে।


হজমশক্তির উন্নতি ঘটায় !

গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল ট্র্যাক্টের কার্যকারিতার জন্যও জল গুরুত্বপূর্ণ; হজমের ক্ষরণ তৈরি করতে পাকস্থলীর পানি প্রয়োজন। অপর্যাপ্ত হাইড্রেশনও কোষ্ঠকাঠিন্যের কারণ হতে পারে।

ব্যায়াম-প্ররোচিত হাঁপানি কমায় !

শক্তিশালী ক্লিনিকাল প্রমাণ দেখায় যে কম তরল গ্রহণ ব্যায়াম-প্ররোচিত হাঁপানির সাথে জড়িত, যেখানে শারীরিক কার্যকলাপ হাঁপানির লক্ষণগুলিকে ট্রিগার করে, যেমন শ্বাসকষ্ট এবং শ্বাসকষ্ট।

ওজন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে !

যেহেতু পানি ক্যালোরি-মুক্ত, তাই উচ্চ-ক্যালোরিযুক্ত পানীয়ের পরিবর্তে পানি পান করলে তা ওজন কমাতে বা বজায় রাখতে সাহায্য করে। এটি আপনাকে পূর্ণ বোধ করতে সাহায্য করতে পারে যাতে আপনি কম ক্যালোরি গ্রহণ করেন।

এলার্জি !

জলের অ্যালার্জি খুব বিরল, তবে এটি সম্ভব। এই অবস্থাকে অ্যাকোয়াজেনিক urticaria বলা হয়। এটিতে আক্রান্ত ব্যক্তিরা জল পান করার সময় বা এর সংস্পর্শে আসার সময় চুলকায় আমবাত তৈরি করে। যেহেতু জল জীবনের জন্য স্পষ্টতই অপরিহার্য, তাই এই অবস্থা পরিচালনা করার জন্য চিকিত্সা প্রয়োজন।

Post a Comment

Previous Post Next Post