ফ্রিজ ও রেফ্রিজারেটর এর পার্থক্য এবং বিস্তারিত | Chiller Freezer Refrigerator for Chefs kitchen

রেফ্রিজারেটর ও ফ্রিজ এর পার্থক্য কি কি ?এবং বিস্তারিত !
ফ্রিজ ও রেফ্রিজারেটর


  • নরমাল চিলার বা রেফ্রিজারেশরের  তাপমাত্রা ৫ ডিগ্রী সেঃ তাপমাত্রা
  • ডিপ ফ্রিজ এর ক্ষেত্রে - ১৮ ডিগ্রী সেঃ তাপমাত্রা
খাবার পচার জন্য অন্যতম উপাদান হচ্ছে আদ্রতা,যেটা ছাড়া খাদ্য পচনকারী ব্যাকটেরিয়া বাচতে পারেনা। ফ্রিজে একদম শুষ্ক অবস্থা থাকে। ফ্রিজের ঠান্ডায় রাখলে ব্যাকটেরিয়ার বংশবৃদ্ধি থেমে যায় এবং ব্যাকটেরিয়া নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ে ফলে খাবার নষ্ট হওয়া বন্ধ হয়ে যায়। তাই খাবার পচে না।

ফ্রিজ এবং রেফ্রিজারেটর পার্থক্য কি?

ফ্রিজ ও রেফ্রিজারেটর মধ্যে প্রধান যে ভিন্নতা সেটি হলো সাধারণত ফ্রিজ বা রেফ্রিজারেটর এ একটি নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় ঠান্ডা হয়।

 কিন্তু ফ্রিজার বা ডিপ ফ্রিজে তাপমাত্রার ক্ষেত্রে কোনো সীমা নেই। এটি ধীরে ধীরে অনেক বেশি ঠাণ্ডা হয়ে যায়। যার কারণে পানি বরফে পরিণত হয়। সাধারণ রেফ্রিজারেটর এও ফ্রিজার অংশ থাকে, তবে সেটি ছোট পরিসরে।

ফ্রিজ ও রেফ্রিজারেটর ব্যবহার !

• কাঁচা ও ঝুঁকিপূর্ণ থাবার আলাদা করে রাখুন

• একটি মাত্র ফ্রিজে খাদ্য সংরক্ষণ করার ক্ষেত্রে উপরের তাকে ঝুঁকিপূর্ণ খাদ্য এবং নিচের তাকে কাঁচা খাদ্য রাখুন

• ফ্রিজের তাপমাত্রা ৫° সে. বা এর উপরে গেলে এবং গ্যাসকেট ছিঁড়ে বা ভেঙে গেলে সুপারভাইজারকে রিপোর্ট করুন

• নতুন খাদ্যপণ্য পুরাতন খাদ্যপণ্যের পিছনে সংরক্ষণ করুন।

• গরম খাবার কখনই ফ্রিজে রাখবেন না

• খোলা পাত্রে খাবার রাখবেন না- ঢাকনাযুক্ত পাত্রে রাখুন

• ফ্রিজের দরজা বন্ধ রাখুন

• ফ্রিজে অতিরিক্ত খাদ্য সংরক্ষণ করবেন না

• ঘন ঘন ফ্রিজ খুলবেন না।

খাদ্যে বিষক্রিয়া সৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়া ফ্রিজারে বংশবিস্তার করতে পারে না, কিন্তু বেঁচে থাকতে পারে।

খাদ্য প্রস্তুতকরণ

  • অপ্রয়োজনে খাদ্য নাড়াচাড়া কমাতে হবে
  • পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার সঠিক নিয়মাবলী অনুশীলন করতে হবে
  • কাঁচা ও রান্না করা খাবার আলাদা করে রাখতে হবে
  • বিপদজনক তাপমাত্রার বলয়ে খাদ্য যথাসম্ভব কম সময় রাখতে হবে।
  • যথাযথভাবে পরিষ্কারের বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে।
  • একবার ব্যবহারযোগ্য টিস্যু/ কাপড় ব্যবহার করতে হবে।

হিমায়িত খাদ্যদ্রব্য অন্যান্য খাদ্য থেকে আলাদা করে রাখুন।

বরফ গলানোর সময়:

  • বরফ গলা পানি ধরে রাখার জন্য খাদ্য প্লেট অথবা ট্রে-এর উপর রাখতে হবে 
  • ফ্রিজ বা কোন্ডরুমের নিচের তাকে রাখতে হবে

ব্যবহার করার সময়:

  • পরীক্ষা করে দেখতে হবে যাতে কোন বরফ না থাকে
  • বরফ গলানোর পরে হিমায়িত খাদ্যের প্রকারভেদে দ্রুততম সময়ের মধ্যে যথাযথভাবে রান্না করতে হবে অথবা প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানের নির্দেশনা অনুসরণ করতে হবে।

রান্না করার সময়:

  • রান্না শুরু করার আগে চুলা গরম করা
  • রান্না ততক্ষণ করতে হবে যতক্ষণ পরিষ্কার জলীয় অংশ না বেরোয়।
  • স্টাফিং (যেমন: সসেস, মিটবল ইত্যাদি) আলাদা করে রান্না করতে হবে
  • রান্নার পরপরই খেতে হবে।

শীতলীকরণের সময়:

  • ঠান্ডা করার জন্য ঠান্ডা জায়গায় রাখতে হবে
  • খাদ্যের প্রকারভেদে যেমন, দ্রুততম সময়ের মধ্যে ফ্রিজে অথবা কোল্ডরুমে রাখতে হবে। তৈজসপত্রাদি এবং খাদ্য স্পর্শক তল কাজের শেষে অবশ্যই পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ও জীবাণুমুক্ত করে রাখতে হবে।

ফ্রিজ ও রেফ্রিজারেটর কেনার আগে ও পরে করণীয়ঃ

ফ্রিজ ও রেফ্রিজারেটর ক্রয় করার আগে ও পরে যে বিষয় গুলো আপনার বিবেচনায় রাখা উচিত আমরা সে বিষয় গুলো সম্পর্কে জানবো এখন।

কম্প্রেসারঃ–

কম্প্রেসার হলো ফ্রিজ এর সবচেয়ে গুরুত্বপুর্ণ অংশ। কম্প্রেসার যতো উন্নত মাণের হবে ততোই দ্রুত ঠান্ডা হবে ফ্রিজ। যেই ফ্রিজে অত্যাধুনিক ইনভার্টার কম্প্রেসার আছে এমন ফ্রিজটিই কেনার জন্যে সর্বোত্তম। এতে করে আপনার বিদ্যুৎ সাশ্রয় হবে অনেকটাই এবং ভোল্টেজ এর উঠানামাতেও ঠিকঠাক ভাবে কুলিং করবে।

স্থায়িত্বঃ–

ফ্রিজ ক্রয় করার আগে যে বিষয়টি সবচেয়ে বেশি নজরে রাখতে হবে সেটি হচ্ছে ফ্রিজটির স্থায়িত্ব কেমন হবে আর তাই এমন ফ্রিজ ক্রয় করা উচিত যেটি ফ্রিজের স্থায়িত্ব অনেক বেশি থাকে এবং যেটি টেকসই ও অনেক মজবুত। বেশিদিন টিকবে এমন ফ্রীজ গুলোতে সমস্যা খুব কম দেখা দিবে। স্থায়িত্ব বিবেচনা করে ফ্রিজ কিনলে আপনি নিশ্চিন্তে থাকতে পারবেন আপনার পছন্দের ফ্রিজটি নিয়ে।

ডিজাইনঃ–

ফ্রিজের স্থায়িত্ব এর পরেই যেই বিষয়টি আসে সেটি হলো ফ্রিজ এর ডিজাইন। এখনকার সময়ে প্রতিটি কোম্পানি তাদের ফ্রিজ সর ডিজাইনে ব্যাপক আকর্ষন রাখে যাতে ক্রেতা ধরতে পারে দ্রুত আর এভাবেই ডিজাইনে এসেছে নান্দনিক বৈচিত্র। সুতরাং ফ্রিজ কিনবার আগে আপনি আপনার পছন্দের ডিজাইনটিকেই প্রাধান্য দিন যাতে ফ্রিজটি টেকসইয়ের পাশাপাশি দেখতেও সুন্দর হয়।


নো-ফ্রস্ট (বরফ জমে না) ফ্রিজ কীভাবে কাজ করে?

নন-ফ্রস্ট ফ্রিজ গুলোর প্রসিডিউর একটা সাইকেল ফলো করে।যেখানে মুল অংশ তিনটি।

  • ১। টাইমার
  • ২। হিটার বা তাপ উৎপন্নকারী
  • ৩। তাপ সংবেদী সেন্সর

ফ্রিজ চালু করার সাথেই ভিতরের পরিবেশ ঠান্ডা হওয়া শুরু করবে এবং টাইমারটি চালু হয়ে যাবে। ৷টাইমারটি ছয় ঘন্টা পর পর হিটারকে চালু করে দিবে তাপমাত্রা বৃদ্ধি করার জন্য।তাপমাত্রা বাড়তে থাকলে ফ্রিজের গায়ে জমা সকল বরফ পরিস্কার হয়ে যাবে,মাছ মাংশ ইত্যাদি জরুরি জিনিষগুলো শক্ত না হয়ে স্বাভাবিক অবস্থায় থাকবে।ভিতরের তাপমাত্রা যখন ৩২ ডিগ্রী ফারেনহাইট ছাড়িয়ে যেতে চাইবে ঠিক তখন তাপ সংবেদনশীল সেন্সরটি সচল হয়ে যাবে এবং হিটারকে বন্ধ করে দিবে।এবং নরমাল শীতলীকরন শুরু হবে। আবার ছয় ঘন্টা পর টাইমার হিটার কে চালু করে দিবে।এভাবে সাইকেলটি চলতে থাকলে খাবার কখনোই শক্ত হবেনা। হিটারের কয়েলগুলি ফ্রিজার এর চারপাশ দিয়ে থাকায় এটি সহজেই ফ্রিজের ভিতরের তাপমাত্রা বাড়াতে পারে। এই ধরনের ফ্রিজ ব্যবহারে সামান্য বিদ্যুত সাশ্রয় হয়।

সাধারন ফ্রিজের সাথে পার্থক্যঃ

সাধারন ফ্রস্ট ফ্রিজঃ-

১. ডিপ-এ রাখা খাবার জমে যায়|

২. খাবার ব্যবহারের আগে পানিতে ভিজিয়ে রাখতে হবে|

৩. ডিপ-এ জমা বরফ মাঝে মাঝে পরিস্কার করতে হয়|

৪. কারেন্ট চলে যাওয়ার পরেও ৫-৬ ঘন্টা খাবার ভাল থাকে|

৫. বিদ্যুৎ খরচ কিছুটা কম|

নন ফ্রস্ট ফ্রিজঃ-

১. ডিপ-এ কোন বরফ জমবে না |

২. গোশ, মাছ বের করে সাথেসাথেই ধুয়ে ব্যবহার করা যাবে |

৩. কারেন্ট চলে গেলে ১-২ ঘন্টা খাবার ভাল থাকবে |

৪. বিদ্যুৎ খরচ কিছুটা বেশি |

যেসব এলাকায় বিদ্যুৎ ঘনঘন যায় ও মাঝেমাঝে দীর্ঘসময় পরে আসে সেসব এলাকায় ফ্রস্ট ভাল হবে| আর সময় ও শ্রম বাঁচানোর জন্য নন-ফ্রস্ট ভাল |

এছারা নন ফ্রস্ট ফ্রিজগুলো সাধারন ফ্রিজের শীতলীকরন /নিম্নের প্রক্রিয়াই অনুসরন করেঃ

রেফ্রিজারেটরের চক্রে পাঁচটি মূল অংশ থাকে। তরল রেফ্রিজারেন্ট, কম্প্রেসর যেটা কিনা তরল রেফ্রিজারেন্ট এর চলাচল নিয়ন্ত্রণ করে। কন্ডেন্সর কয়েল (ফ্রিজের বাইরে থাকে) আর ইভাপোরেটর কয়েল (ফ্রিজের ভেতরে থাকে)। এই সবগুলো মিলে একসাথে কাজ করেই আপনার খাবার ঠাণ্ডা রাখে।

কম্প্রেসরের মধ্যে রেফ্রিজারেন্ট(এমোনিয়া) গ্যাস থাকে, কম্প্রেসর তার ভেতরের চাপ বৃদ্ধি করে এবং এই গ্যাসকে ফ্রিজের বাইরের কয়েলের মধ্যে পাঠিয়ে দেয়। এই গরম গ্যাস কিন্তু বাইরে এসেই উচ্চচাপীয় নীলাভ তরল হয়ে যায়। এই তরল একটি ভালভ এর মধ্য দিয়ে যায়। ভালভ টিকে একটি গর্তের সাথে তুলনা করা যায় যার একপাশে উচ্চচাপের তরল আর অন্যপাশে নিম্নচাপের পরিবেশ।

এই তরল এমোনিয়া ফ্রিজের মধ্যকার কয়েলে এসে ফুটন্ত অবস্থায় গ্যাসীয় হয়ে যায় আর ফ্রিজের ভেতরের তাপমাত্রা কমে -২৭ ডিগ্রী ফারেনহাইটে পৌঁছে যায়। তরল এমোনিয়া গ্যাসীয় হবার সময় ফ্রিজের ভেতরের তাপ শোষণ করে তাই এই তাপমাত্রা কমে আর খাবার ঠাণ্ডা হয়ে যায়।

বিশুদ্ধ এমোনিয়া মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর তাই রেফ্রিজারেটরে সিএফসি নামে বিশেষ এক ধরনের রেফ্রিজারেন্ট ব্যবহার করা হয়। এর স্ফুটনাংক আর অন্যান্য ধর্ম প্রায় এমোনিয়ার মতন-ই। ফ্রিজের ভেতর সাধারণ তাপমাত্রার যেকোন খাবার রাখার সাথেই সাথেই সিএফসি তা থেকে তাপ শোষণ করে এবং নিজে গ্যাসীয় হয়ে যায়। ডীপ ফ্রিজার এর ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট গ্যাস বাষ্পীভূত হতে আরও অধিক তাপমাত্রা লাগে তাই এখানে খাবারের তাপমাত্রা আরও অনেক বেশি কমে যায়।

আপনি যদি সময় বাঁচানোর জন্য বেশি করে রান্না করে ফ্রিজে রেখে দেন‚ তাহলে জেনে রাখুন আপনি আপনার শরীরের ক্ষতি করছেন ।আর ফ্রিজ থেকে বের করেই যদি তা খেতে শুরু করে দেন তাহলে অনাহারে থাকলে যা ক্ষতি হয় তার থেকেও অনেক বেশি ক্ষতি করছেন শরীরের | জানেন কি ফ্রিজে রাখা ঠান্ডা খাবার থেকে Food-Borne ডিসিজ হতে পারে আপনার?

ক্রস-কন্টামিনেশন এড়িয়ে চলুন :

ক্রস-কন্টামিনেশন বলতে মূলত একাধিক খাবারের ক্ষুদ্র খাদ্যকণা ও জীবাণু মিশে যাওয়া বোঝায়। সাবধান না হলে রেফ্রিজারেটরের বদ্ধ পরিবেশে যা ঘটা খুবই স্বাভাবিক। যেমন অনেকেই কাঁচা মাংস খোলা অবস্থায় রেফ্রিজারেটরে রেখে দেন, যার ফলে মাংসের ক্ষুদ্রকণা রেফ্রিজারেটরের ভেতরে থাকা অন্য খাবারে মিশে যায়। রেফ্রিজারেটরে সংরক্ষিত খাবারের এমন দূষণ ক্ষেত্রবিশেষে গুরুতর স্বাস্থ্যঝুঁকির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। ক্রস-কন্টামিনেশন এড়াতে কাঁচা মাংস, মাছ এবং কাঁচা সবজি ও ফলমূল প্রতিটি আলাদাভাবে নিরাপদে বক্সে বা ব্যাগে মুড়িয়ে রাখুন। পানীয় এবং পচনশীল খাবার কুলারে আলাদাভাবে প্যাক করুন। দুগ্ধজাত খাবার রাখার সময় ভালোভাবে সিল করা হয়েছে কি না তা নিশ্চিত করুন, কারণ এ খাবারগুলোতে জীবাণু খুব দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে পারে।

ফ্রিজে খাবার মান নষ্ট হয় কি ?

আসলে সংসারে নিত্য প্রয়োজনীয় ফ্রিজটি আছে আপনার দৈনন্দিন জীবনকে সহজ করে তুলতে। তার মানে কিন্তু এই নয় যে পুষ্টিহীন, মানহীন খাবার খেয়েই জীবনধারণ করতে হবে। আপনার অবশ্যই জানতে হবে কোন খাবার কত দিন রাখতে পারবেন ফ্রিজে। সে অনুযায়ীই ফ্রিজ ব্যবহার করুন।

ব্যস্ত জীবনে রোজ তিনবেলা রান্না করে টাটকা খাবার সাজিয়ে দেবেন বাড়ির সবার সামনে এত সময় অনেকেরই থাকেনা । তাই একরকম বাধ্য হয়েই আমাদের অনেককেই নির্ভর করতে হয় ফ্রিজের ওপর। কিন্তু এভাবে ফ্রিজে রেখে খাবার খাওয়া কি ঠিক? কোন খাবার কীভাবে সংরক্ষণ করা যেতে পারে? সে বিষয়ে ধারনা না রেখে শুধু শুধু নিজের এবং প্রিয় পরিবারের ক্ষতি থেকে বাঁচতে হলে জানতে হবে আপনাকে ।

ফ্রিজে কাঁচা খাবার সংরক্ষণের পদ্ধতি এক রকম আবার রান্না করা খাবার সংরক্ষণের পদ্ধতি আরেক রকম। এ দুই ধরনের খাবার ফ্রিজে আলাদা করে রাখা উচিত।আবার খুব বেশি খাবার একসঙ্গে না রেখে প্রয়োজন অনুযায়ী ছোট ছোট ভাগে ভাগ করে রাখতে পারেন। একসঙ্গে যদি বেশি খাবার রেখে দেন, তাহলে বের করে রান্নার আগে কাঁচা মাছ বা মাংস পুরোটাই আপনাকে ভিজিয়ে রাখতে হবে। আবার রান্না করা খাবার পুরোটাই জ্বাল দিতে হবে। এতে করে খাবারের পুষ্টি ও স্বাদ দুটোই নষ্ট হয়।অবশ্যই ফ্রিজের তাপমাত্রার দিকে খেয়াল রাখবেন। প্রয়োজন অনুযায়ী কমাবেন এবং বাড়িয়ে দেবেন।ফ্রিজে খাবার যদি আপনি বাক্সে করে রাখতে অভ্যস্ত হন, তাহলে বাক্সগুলোর মাঝে কিছুটা জায়গা ফাঁকা রাখবেন। তাহলে ভেতরে বাতাস চলাচল করতে পারবে।অনেকে মাসের পর মাস ডিপ ফ্রিজে মৌসুমি ফলমূল রেখে দেন। সে ক্ষেত্রে অবশ্যই সংরক্ষণের নিয়মাবলি মেনে তারপর রাখতে হবে। তবে বেশি দিন রাখার ফলে ফলের স্বাদ এতটাই নষ্ট হয়ে যায় যে, পরে আর রস করে ছাড়া মুখে তোলাই দায় হয়ে যায়।খাবার রাখার নিয়মকানুন নাহয় মানলেন। স্বাদের ক্ষেত্রেও না হয় ছাড় দেওয়া হলো। কিন্তু পুষ্টিমান? সেটা তো মাথায় রাখতেই হবে। কেননা, খাবারে যদি পুষ্টি না থাকে, তবে আর থাকল কী?


সব থেকে আদর্শ হয় যদি রান্না করার তিন ঘন্টার মধ্যে তা খেয়ে ফেলতে পারেন | এটা অনেকের পক্ষেই সম্ভব নয় | তাই খাবার আগে সব সময় খাবার গরম করে খান | খুব ভালভাবে রান্না করলেও কিছুক্ষণ পর থেকে খাবারকে আর ডিগ্রেডেশন আর ব্যাকটেরিয়ার হাত থেকে বাঁচানো যায় না | এমনকী সঠিক ভাবে খাবার ফ্রিজে ভরে রাখলেও তার মধ্যে ব্যাকটেরিয়া কাজ শুরু করে দেয়।

আমরা অনেকেই ভাবি ফ্রিজে খাবার ঢুকিয়ে রাখা মানে তা ঠিক থাকবে। তবে মনে রাখুন ঠান্ডার কারণে ব্যাকটেরিয়া ধীরে ধীরে কাজ করে ‚ কিন্তু করে।

তাই ফ্রিজ থেকে খাবার বের করে তা অবশ্যই গরম করে নিয়ে তবেই খানখাবার গরম করার আগে এই বিষয়গুলো অবশ্যই মনে রাখবেন।

১) উচ্চ তাপমাত্রায় খাবার কখনো গরম করবেন না | এতে খাবারের নিউটিয়েন্টস‚ ভিটামিন এবং মিনারেল নষ্ট হয়ে যায় | তার বদলে অল্প আঁচে খাবার গরম করুন | এর ফলে খাবারে যে ব্যাকটেরিয়া তৈরি হয়ে তাও খানিকটা মরে যায় |

২) খাবার গরম না করে স্টিমিং করে নিন | অল্প জল খাবারের ওপর ছিটিয়ে লো ফ্লেমের ওপর খাবারের পাত্র বসিয়ে রাখুন | মাইক্রো ওয়েভে খাবার গরম করলেও এই ভাবেই করুন |

৩) ডাল‚ সুপ বা ঝোল গরম করার সময় সেটা একবার ফুটিয়ে নিন | মাইক্রো ওয়েভ ওভেনে মাঝে মাঝে খাবার হাতা দিয়ে নাড়িয়ে দিন |

৪) পাঁউরুটি‚ পিজা বা ভাজা ফ্রিজে রাখলে তা নেতিয়ে যায় | তাই ফ্রিজ থেকে বের করে কিছুক্ষণ রুম টেম্পরেচারে রেখে তাওয়ায় গরম করুন | মাইক্রো না করাই ভাল কারণ এরে ফলে তা আরো শক্ত হয়ে যাবে |

৫) দুদিনের বেশি যে খাবার ফ্রিজে রাখা আছে তা খাবেন না |

বিশেষজ্ঞদের মতে , ফ্রিজে মাংস দুই থেকে সর্বোচ্চ তিন মাস পর্যন্ত সংরক্ষণ করা ভালো, এর বেশি নয় । আর মাছ রাখা যেতে পারে সর্বোচ্চ ১৫ দিন। তবে মাছের মাথাগুলো আরও দ্রুত রান্না করে ফেলা ভালো। স্বাভাবিক তাপমাত্রায় রাখলে যেমন কিছু খাবারে ব্যাকটেরিয়া জন্ম নেয়, তেমনি কিছু কিছু ব্যাকটেরিয়া জন্ম নেয় ঠান্ডা জায়গায়। আবার কোনো খাবার যদি আপনি জীবাণুসহ ফ্রিজে রাখেন, তাহলে ওই জীবাণুও খাবারে থেকেই যায়। তাই ফ্রিজে রাখার আগেই দেখে নেবেন খাবারটা ঠিক আছে কি না। তা ছাড়া ফ্রিজে রাখার পর যদি কখনো কোনো খাবারের বর্ণ, গন্ধ ও স্বাদ পরিবর্তন হয়ে যায়, তাহলে সেটা আর না খাওয়ার পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের


পুষ্টি বিদদের মতে ফ্রিজে খাবার মান ?

পুষ্টিবিদদের মতে, প্রতিটি খাবার স্বাভাবিক থাকার একটি নির্দিষ্ট সময় আছে। এরপর খাবার নষ্ট হয়ে যায়। এর মধ্যে বাসা বাঁধে নানা রকম ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়া। কোন খাবার দুইদিন, কোন খাবার এক সপ্তাহ আবার কোন খাবার মাস খানিক ভালো থাকে ফ্রিজে। চলুন জেনে নেওয়া যাক কোন খাবার কতদিন ভালো থাকে ফ্রিজে।

মাছ-মাংস :

সাধারণত ফ্রিজে আমরা মাংস রাখি দিনের পর দিন। কখনো কখনো সেটা কয়েক মাস। তবে পুষ্টিবিদদের মতে মাংস ফ্রিজে সর্বোচ্চ দুইদিন রাখা যেতে পারে। আর ডিপ ফ্রিজে সেটি সর্বোচ্চ দুই থেকে আড়াই মাস। রান্না করা মাংস ফ্রিজে রাখলে ৪-৫ দিন ভালো থাকে। মাছের ক্ষেত্রেও একই নিয়ম খাটে।

ডিম :

কাঁচা ডিম ফ্রিজে বেশিদিন রাখা যায়। ভালোমানের কাঁচা ডিম ফ্রিজে রাখা যায় দুই মাসের মতো। যদি ডিম সেদ্ধ করে রাখতে চান ফ্রিজে সেক্ষেত্রে এক সপ্তাহের বেশি রাখা উচিৎ নয়। তবে ডীপ ফ্রিজে কাঁচা ডিম রাখলে ডিমের গুণগত মান নষ্ট হয়ে যায়।

ফলমূল :

বিভিন্ন রকম ফলমূল ভিন্ন ভিন্ন মেয়াদে রাখা যায় ফ্রিজে। বিশেষ করে বিদেশি ফলের মধ্যে স্ট্রবেরি রাখা যায় এক সপ্তাএর মতো। আপেল রাখা যায় মাস দুয়েক। আঙুর ১০-১২ দিন। আর দেশি ফলের মধ্যে লিচু দুই সপ্তাহ। আম এক মাস। কলা ৯ দিন। কমলালেবু আড়াই মাস। লেবু মাস খানিক ভালো থাকে ফ্রিজে।

শাক সবজি :

শাক সবজি আস্ত থাকলে ৪ থেকে ৫ দিন রাখা যায় ফ্রিজে। এরমধ্যে সশা ভালো থাকে এক সপ্তাহের কিছু বেশি। লেটুস পাতা দিন দশেক ভালো রাখা যায়। টমেটো ১৫ দিন। আলু রাখা যায় মাস চারেক। এছাড়া ঢেঁড়স, শিম, করলা এবং পেঁপের মতো সবজিও রাখা যায় ৭ থেকে ১০ দিন।।

পরিচ্ছন্নতার সেরা উপায় ডিপ ক্লিন !

পুরোনো বাসি খাদ্যকণা রেফ্রিজারেটরের ভেতরের পরিবেশকে অস্বাস্থ্যকর করে তোলে। এজন্য প্রয়োজন ডিপ-ক্লিনিং! রেফ্রিজারেটর ডিপ-ক্লিন করার জন্য প্রথমেই রেফ্রিজারেটরটির বিদ্যুত্ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে নিন। হাতে একজোড়া রাবারের গ্লাভস পরে নিন এবং রেফ্রিজারেটরের ভেতরে রাখা সবকিছু বের করে নিন। এবারে বাসি ও গন্ধযুক্ত খাবারগুলো একটি ব্যাগে নিয়ে ফেলে দিন। এবারে একটি নরম কাপড়ে কুসুম গরম সাবান পানি ভিজিয়ে রেফ্রিজারেটরের প্রতিটি কোণে সময় নিয়ে আস্তে আস্তে পরিষ্কার করুন। তেল-চিটচিটে দাগ ও জমে থাকা ময়লার স্যাঁতসেঁতে গন্ধ থেকে মুক্তি পেতে লেবু ছোট ছোট টুকরো করে কেটে ফ্রিজের প্রতিটি কম্পার্টমেন্টে রাখতে পারেন।

ফ্রিজ সঠিকভাবে রক্ষণাবেক্ষণের জন্য প্রয়োজনীয় কিছু টিপস্-

১. রেফ্রিজারেটরের দরজা দ্রুত বন্ধ করতে হবে। বেশিক্ষণ খোলা রাখবেন না।

২. রেফ্রিজারেটরের দরজার সিল পরীক্ষা করুন।

৩. দ্রুত খাবার ঠান্ডা ও হিমায়িত করতে আবহাওয়ার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে সঠিক তাপমাত্রা সেট করুন।

৪. রেফ্রিজারেটরে রাখা খাবারগুলো সঠিকভাবে সাজিয়ে রাখুন।

৫. রেফ্রিজারেটরের ভেতরের ভেন্টগুলোকে ব্লক করবেন না। তাহলে বিদ্যুৎ বিল বেশি আসবে।

৬. বেশি বরফ জমলে সেগুলো ডিফ্রস্ট করে তারপর খাবার রাখুন পুনরায়।

৭. রেফ্রিজারেটর কখনো দেওয়ালের খুব কাছাকাছি রাখবেন না।

৮. মাসে অন্তত ২-৩ বার রেফ্রিজারেটর পরিষ্কার করুন।

৯. ঘরে রেফ্রিজারেটর বসানোর সময় সঠিক নির্দেশিকা অনুসরণ করুন।

১০. রেফ্রিজারেটরের কনডেন্সার কয়েল পরিষ্কার করুন।

Post a Comment

Previous Post Next Post