Food Allergens Chef Knowledge in Bangla
খাবারে অ্যালার্জি কি? |
খাবারে অ্যালার্জি কি?
খাবারের অ্যালার্জি হলো যখন বিভিন্ন ধরনের খাবারের কারণে শরীরে ইমিউন সিস্টেম বা রোগ প্রতিরোধক্ষমতা কমে গিয়ে কিছু প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। সাধারণত খাবার খাওয়ার পর শরীরে অ্যান্টিবডি তৈরি হয়, রক্তে অ্যান্টিবডি, হিস্টামিনসহ কিছু কেমিক্যাল বেড়ে যায়, শুরু হয় ‘ফুড অ্যালার্জি’।
তাই চিকিৎসার পাশাপাশি অ্যালার্জির প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে এমন খাবার গ্রহণ এবং বাড়ায় এমন খাবার পরিহার করা। খাবারে অ্যালার্জি তখনই হয় যখন শরীরের স্বাভাবিক প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা কোনো নির্দিষ্ট খাবারের প্রভাবে অতিরিক্ত প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে এবং অ্যান্টিবডি ও অন্যান্য পদার্থ মোচন করে। খাবারে অ্যালার্জির প্রতিক্রিয়াগুলি বর্তমানে ব্যাপকভাবে বেড়ে চলেছে এবং যদি এর দ্রুত চিকিৎসা না করা হয় তাহলে গুরুতর রোগ বা মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।
খাবারে অ্যালার্জির প্রধান লক্ষণ এবং উপসর্গ ?
- মুখের চারপাশে ফোলাভাব, জ্বালা অনুভূতি, এবং চুলকানি
- মুখে ফোলাভাব বা চোখে ফোলাভাব
- নাক দিয়ে জল পড়া
- চুলকানি হওয়া এবং র্যাশ বা ফুসকুড়ি
- আমবাত ( ত্বকে ফোলা ও লাল রঙের দাগের উপস্থিতি)
- ডায়রিয়া
- তলপেটে টান অনুভব ও ব্যথা বোধ
- শ্বাস নিতে কষ্ট হওয়া, যার মধ্যে রয়েছে হুইজিং (শ্বাস-প্রশ্বাসের সময় সাঁই সাই আওয়াজ), এবং অ্যাজমা বা শ্বাসকষ্ট
- বমি ও বমি বমি ভাব
- মাথা ঘোরা
- রক্তের নিম্নচাপ
গুরুতর উপসর্গগুলি হল !
ফুড ইনটলারেন্স কী?
ফ্রুক্টোজ অ্যালার্জি যাদের !
আম খেলেই পেট ফুলে বেলুন হয়ে যাচ্ছে? আপেল খেয়ে পেট খারাপ হয়েছে? এগুলোই ফ্রুক্টোজ অ্যালার্জির লক্ষণ। ফলমূল (যেমন আম, কলা, আপেল, আনারস), মধু, কোমল পানীয়—অর্থাৎ যেসব খাবারে মিষ্টি বেশি থাকে, সেগুলোতে থাকে ফ্রুকটোজ।
ডাইভারটিকিউলার ডিজিজ !
পরিশোধিত আটা/ময়দা এবং চালে আঁশ কম থাকে। দীর্ঘদিন ধরে যাদের কম আঁশযুক্ত খাবার খাওয়ার অভ্যাস সাধারণত তাদের এই রোগ বেশি হয়। শরীর প্রয়োজনীয় আঁশ না পেলে ঠিকমতো কাজ করতে পারে না। তাই এই রোগের ভুক্তভোগীদের সকালের নাশতায় রাখতে হবে হাই-ফাইবার অর্থাৎ আঁশযুক্ত খাবার।
সিলিয়াক ডিজিজ !
গম, বার্লি, রাইজাতীয় শস্য থেকে তৈরি রুটিজাতীয় সব খাবারে থাকে গ্লুটন নামের পদার্থ। সিলিয়াক ডিজিজ আক্রান্ত রোগীদের গ্লুটন যুক্ত খাবার পরিহার করে চলতে হয়। তবে এই রোগে আক্রান্তদের খাবারের তালিকাও তেমন ছোট নয়। প্রাকৃতিকভাবে গ্লুটনমুক্ত খাবার হল তাজা ফল, শাকসবজি, ডিম, মাছ, মাংস, বাদাম, ডাল এবং দুধ।
১৪ টি অ্যালার্জিক খাবারের নাম :
- দুধ (Milk)
- মুঁড়ি (Tree nut allergy)
- বাদাম (nuts)
- ডিম (Egg)
- মাছ (Fish)
- শেলফিশ (Shellfish)
- সয়াবিন (Soy)
- গম (Wheat)
- সরিষা (Mustard)
- তিল (Sesame)
- গ্লুটেন (Gluten)
- সেলারি (Celery)
- লুপিন (Lupin - legume seeds)
- সালফাইট (Sulphites)
একেকজনের একেক ধরনের খাবারে অ্যালার্জি থাকে। কারও দুধ খেলে পেট খারাপ হয়, কারও বেগুন খেলে মুখ চুলকায়, কারও আবার ডিম খেলে পেট ব্যথা হয়। তাই কারও কোন খাবারে অ্যালার্জি তা চিহ্নিত করে ওই নির্দিষ্ট খাবারটি বাদ দিলেই অ্যালার্জি থেকে দূরে থাকা যায়।
- দুধ : শিশুদের সাধারণত দুধে অ্যালার্জি হতে পারে। বিশেষ করে গরুর দুধে। একে ল্যাকটোজ ইনটলারেন্স বলে, দুধে ল্যাকটোজ নামক যে উপাদান থাকে তা হজম করার জন্য ল্যাকটোজ এনজাইমের ঘাটতি থেকেই এ সমস্যা হয়।
- শস্য : যব, ভুট্টা, ডট, ময়দা জাতীয় খাবারে গ্লুটেন থাকে। কারও এই গ্লুটেনে অ্যালার্জি থাকে। পেটের একটি রোগ সিলিয়াক ডিজিজে আক্রান্ত ব্যক্তিরাও গ্লুটেন জাতীয় খাবার হজম করতে পারে না।
- ডিম : ডিমের সাদা অংশ প্রোটিন। এ প্রোটিনে খুব ছোট শিশুদের অ্যালার্জি হতে পারে। এর ফলে ত্বকে চুলকানি, চোখ লাল হয়।
- মাছ : সামুদ্রিক মাছ, চিংড়ি, ইলিশ, বোয়াল ইত্যাদিতে কারও কারও অ্যালার্জি হতে পারে। তাই যে খাবারে কারও প্রতিক্রিয়া হবে সেই খাবার বাদ দেয়াই উচিত। সবার জন্যই যে চিংড়ি বা ইলিশ নিষেধ তা কিন্তু নয়।
- বাদাম ও বীজ : আমিষ জাতীয় খাবার বাদাম ও বীজে কারও কারও অ্যালার্জি হয়।
- চিনা বাদাম: সব ধরনের বাদামের মধ্যে চিনা বাদাম সবচেয়ে বেশি পরিচিত। দুঃখের বিষয় হলো এই বাদামের কারণেও অ্যালার্জি দেখা দিতে পারে খুব বাজেভাবে। গবেষণায় দেখা গেছে চিনাবাদাম এলার্জি ৪-৮ শতাংশ শিশু এবং ১-২ শতাংশ বয়স্কদের উপর প্রভাব ফেলে।
- শেল ফিশ: শেল ফিশ বলতে সেই ধরনের মাছকে বোঝায় যে মাছ শক্ত খোসা বা আবরণ দ্বারা ঢাকা থাকে। । বিভিন্ন প্রকারের শেল ফিশ যেমন চিংড়ি, কাঁকড়া, ওয়েস্টার, শামুক জাতীয় খাবার যার শক্ত খোল রয়েছে তার থেকেই অ্যালার্জি হয় বিশ্বের প্রায় ৬০ শতাংশ মানুষের।
- সয়াবিন : সয়াবিনে বড়দের ক্ষেত্রে তেমন সমস্যা না থাকলেও সাধারণত শিশুদের ক্ষেত্রে সয়াবিন জাতীয় খাবার থেকে অ্যালার্জি দেখা যায়। সাধারণত সয়া বিনস, সয়া মিট এবং সয়া মিল্কে অ্যালার্জি অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ১০ বছর বয়সের পর থেকে কমে আসে।
- সালফাইট : খাবারের রং নষ্ট হয়ে যাওয়া, বা বাদামি রং ধরাতে অনেক খাবারে সালফাইট ব্যবহার করা হয়। এই সালফাইট থেকে অনেকের অ্যালার্জি হয়।
- ফল ও সবজি : বেশ কিছু ফল ও সবজি থেকে অনেকেরই অ্যালার্জি হয়। বেগুন, গাজর, টোম্যাটো, পিচ, কলা থেকে অনেকেই অ্যালার্জির সমস্যায় ভোগেন।
তাই যে খাবার খেলে ত্বক, মুখ ও জিবে চুলকানি, র্যাশ, নাক দিয়ে পানিপড়া, চোখ লাল হওয়া, শুকনো কাশি, পেট কামড়ানো বা ব্যথা, ডায়রিয়া, শ্বাসকষ্ট, বুকে ব্যথা হয় সেই খাবার খাওয়া বাদ দেবেন। পরিবারে অ্যালার্জির ইতিহাস থেকেও এমন হতে পারে।
খাবারের অ্যালার্জির ঝুঁকির কারণগুলি হল !
জিনগত প্রবণতা ও পরিবেশগত কারণগুলি, যেমন উন্নত জীবনশৈলী, খাদ্যাভ্যাস, এবং স্বাস্থ্যবিধি স্তন্যপানের বদলে কৌটোর দুধ খাওয়ানো টিনজাত খাবার খাওয়া।
এটি নির্ণয় এবং চিকিৎসা কিভাবে করা হয় ?
চিকিৎসাগত ইতিহাস এবং উপসর্গগুলি খাবারে অ্যালার্জি নির্ণয় করতে বৃহৎ পরিমাণে সাহায্য করে।এটি খেয়াল রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ যে উপসর্গগুলি প্রতিটি ব্যক্তির ক্ষেত্রে আলাদা হতে পারে।
পরীক্ষা-নিরীক্ষার মধ্যে রয়েছে :
অ্যালার্জেন বা অ্যালার্জির কারণগুলি সনাক্ত করতে স্কিন প্রিক টেস্ট
নির্দিষ্ট খাবারের প্রতিক্রিয়ায় ইমিউনোগ্লোবিউলিন ই অ্যান্টিবডির পরিমাণ মাপার জন্য রক্ত পরীক্ষা
অ্যালার্জির চিকিৎসা হল যে নির্দিষ্ট খাবারের থেকে অ্যালার্জি হচ্ছে সেটি না খাওয়া। আক্রান্ত ব্যক্তিকে সতর্ক করে দেওয়া উচিত যে তিনি যদি দ্বিতীয়বার অ্যালার্জির কারণটির সংস্পর্শে আসেন তাহলে তার অ্যানাফাইল্যাকটিক প্রতিক্রিয়া হওয়ার সম্ভাবনা থাকতে পারে।
অ্যালার্জি এড়িয়ে চলার জন্য খাবারের মধ্যে নির্দিষ্ট উপকরণটির উপস্থিতির সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানা জরুরি
তীব্র প্রতিক্রিয়া নিয়ন্ত্রণের জন্য চিকিৎসা ব্যবস্থা !
লঘু থেকে মাঝারি অ্যালার্জিজনিত প্রতিক্রিয়ায় অ্যান্টিহিস্টামাইন দেওয়া হয়
প্রাণনাশক অ্যানাফাইল্যাকটিক প্রতিক্রিয়ার ক্ষেত্রে, এপিনেফ্রিন (অ্যাড্রেনালাইন) ইঞ্জেকশনের প্রয়োজন হয়।
এর সঙ্গে, উপসর্গগুলির উপর নির্ভর করে অক্সিজেন দেওয়া হয় এবং শরীরে তরল প্রয়োগ করা হয়