বাংলাদেশী কুইজিন ! Bangladeshi Cuisine Chef Knowledge

বাংলাদেশী কুইজিন ! Bangladeshi Cuisine

বাংলাদেশী কুইজিন !

হাজার বছরেরও পুরোনো বাঙালির সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য। বাংলাদেশী কুইজিন বা রন্ধনশৈলী হলো রান্নার একটা শৈলী যা ভারতীয় উপমহাদেশের পূর্বাঞ্চলে বঙ্গে উৎপত্তি লাভ করেছিলো। প্রাচীন বঙ্গ অঞ্চল মানে বর্তমানের বাংলাদেশ এবং ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, ত্রিপুরা এবং আসামের বরাক ভ্যালীতে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। এই অঞ্চলে প্রধান খাবার ভাত এবং মাছের সাথে মাংস, সব্জি, ডাল দিয়ে সমৃদ্ধ হয়েছে এর খাদ্য সম্ভার। সব খাঁটি বাঙালি খাবারই এসেছে বাংলাদেশী রন্ধনশৈলী বা বাংলা কুইজিন হতে। ‘মাছে-ভাতে বাঙালি’ এই প্রবাদটি সেই হাজারো বছরের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের পরিচয় বহন করে। ‘মাছে-ভাতে বাঙালি’ এটা বর্তমান সময়ের কথা নয়। বর্তমানে আমাদের সংস্কৃতি অনেকটাই পরিবর্তন হয়ে গিয়েছে। আগেকার দিনে যখন এত বিদেশি খাবারের প্রচলন ছিল না সে সময় বাঙালির সংস্কৃতি ছিল কিছুটা হলেও ভিন্ন। আমরা সবাই জানি যে প্রাচীনকাল থেকেই বাঙালির প্রধান খাদ্য ছিল ভাত। সে সময় এই গোটা উপমহাদেশে নদী-নালাও ছিল প্রচুর। প্রকৃতির দানে এদেশে নদী বিধৌত উর্বর ভূমিতে প্রচুর পরিমান ফসল জন্মাত। বিশেষ করে ধান যেমন পাইজাম, নাজিরশাইল, কাটারিভোগ, বালাম, বিন্নি ইত্যাদি জাতের। অন্যদিকে নদীমাতৃক দেশ হওয়ায় এদেশের সাগর, নদী, খাল-বিলে প্রচুর পরিমাণে মাছ পাওয়া যায় এখানে । এর মধ্যে রয়েছে রূপচাঁদা, কোরাল, লাক্ষ্যা, লইট্যা, ছুরি, ফাইস্যা, রুই, কাতল, মৃগেল, ভেটকি, চিতল, বোয়াল, শোল, কৈ, শিং, মাগুরসহ আরও নানা জাতের মাছ রয়েছে। কাজেই তারা ধান চাষ করে ও মাছ ধরে জীবিকা উপার্জনের পথ বেছে নিত বেশির ভাগ। এ সহজলভ্য মাছ আর ভাত আমাদের প্রিয় খাবার, স্বল্প শ্রম ও ব্যয়ে অতি সহজে এগুলো পাওয়া যায় বলে জীবন ও জীবিকার জন্য এর ওপর নির্ভরশীলতা আমাদের অনেক বেশি। আর ভাতের সঙ্গে যদি ইলিশ মাছ ভাজা হয়, তাহলে তো আর কোনো কথাই নেই। আর তাই আমাদের মাছে-ভাতে বাঙালি বলা হয়। বিভিন্ন ধরনের মাছ ও বিভিন্ন ধরনের চাল বাংলা কুইজিনের একটা বড় অংশ।

    বাংলাদেশী কুইজিনের ইতিহাস !

    প্রাচীন বাংলার কুইজিন ! 

    প্রাচীন বাংলার আহারের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত ছিল ভাত, মাছ, মধু, দুধ এবং সবজি । বঙ্গ অঞ্চলটি প্রাচীন হিন্দু ও বৌদ্ধ রাজত্বের সময় দক্ষিণ এশিয়ার একটি প্রশাসনিক ও বাণিজ্যিক অঞ্চল ছিল; এবং পরবর্তীতে মুসলিম শাসন আমলেও এটি একটি বাণিজ্যিক অঞ্চল ছিলো। বাঙালি খাবারের বিভিন্নতা এবং বিচিত্র্তা ব্যাপক ও বিশাল । বিভিন্ন অনুষ্ঠানে পরিবেশিত ও প্রস্তুতকৃত বিভিন্ন ধরনের খাবার ছাড়াও নিজের পরিবার অথবা আত্মীয়স্বজনদের জন্য বিভিন্ন ধরনের পানীয়, আচার, পিঠা ইত্যাদি তৈরি করা হয়ে থাকে তাই বাংলা কুইজিনের পরিধি বিশাল।

    নবাব দের শাসন আমল ! 

    বিভিন্ন সময়ে বঙ্গদেশ মুসলিম নবাব ও সুলতানদের অধীনে শাসিত হয়েছে । ১৭১৭ সালে মোগল শাসন আমলে এ অঞ্চলের শাসনভার নবাব মুর্শিদ কুলী জাফর খান এর হাতে ন্যস্ত করা হয় । মোগলদের শাসন আমলে স্বাভাবিকভাবেই মোগল সংস্কৃতি এবং সাহিত্যের পাশাপাশি রন্ধণপ্রণালী এবং খাদ্যাভাসের প্রভাব এ অঞ্চলে বসবাসরত বাঙালিদের উপর পড়ে । বর্তমান সময়েও বিভিন্ন মোগলাই খাবার যেমন: বাকরখানি, মোগলাই পরোটা, কাবাব, হালুয়া, বিরিয়ানী ইত্যাদি বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গ উভয় স্থানেই ব্যাপক জনপ্রিয় ।

    খ্রিস্টান এবং ইউরোপীয় দের প্রভাব !

    চা এবং বিভিন্ন ফাস্টফুড জাতীয় খাবার, যা এখন এ অঞ্চলের মানুষের মধ্যে বহুল প্রচলিত এবং জনপ্রিয় খাবার, সেগুলো মূলত ক্রিশ্চিয়ান এবং অন্যান্য ইউরোপীয় কালচার তথা খাদ্যাভাসের সুস্পষ্ট প্রভাব । কলকাতায় ইহুদীদের বৃহৎ বেকারী যদিও আগের মত চলে না, তথাপি এর প্রভাব সারা বঙ্গদেশেই পরিলক্ষিত হয় ।

    বিধবা নারী রীতির প্রভাব !

    বঙ্গ অঞ্চলে বিধবা মহিলাদের উপর সবসময়ই কঠোর নীতি চালু ছিলো । যদিও ১৮২৯ সালে সতীদাহ প্রথা রোধ ও ১৮৫৬ সালে হিন্দু বিধবা বিবাহ আইন এর মাধ্যমে এর অনেকটাই রোধ করা গেছে, তবুও কিছু কিছু সামাজিক আচার এখনও চালু রয়েছে । বাল্য বিবাহ  এবং কম গড় আয়ুর ফলস্বরূপ অনেক মহিলাই বিধবাতে পরিণত হয়- প্রায় ৩০ শতাংশ পরিবারে একজন বিধবা মহিলা রয়েছে, যারা বাড়ির ভিতরেই আবদ্ধ থাকে এবং রান্নাবান্নার কাজেই অধিক সময় ব্যয় করে থাকে । যদিও অধিকাংশ বাঙালি সম্প্রদায়ই মাছ মাংস খেতে পারতো, বিধবা মহিলাদের জন্য এটা ছিল একেবারে নিষিদ্ধ । এ কারণেই বিধবা মহিলাদের শুধুমাত্র নিরামিষ আহারের উপর নির্ভর করে নিরামিষ খাবার রান্নার এক বৃহৎ খাদ্য রেসিপি গড়ে উঠেছিলো। এ সম্পর্কে একজন বাঙালি লেখিকা চিত্রিতা ব্যানার্জী  তিনি তার বইতে উল্লেখ করেন ।

    আহারপদ্ধতি এবং ব্যবহৃত দ্রব্যাদি !

    দৈনন্দিন আহারের ক্ষেত্রে সাধারণত প্রতিবেলার খাবার পৃথকভাবে কিছু ভাত অথবা রুটিসহ প্রস্তুতকৃত তরকারির সাথে ভোজন করা হয়ে থাকে । বাঙালি খাবার রান্নার ক্ষেত্রে প্রধানত সরিষার তেল এবং সয়াবিন তেল ব্যবহৃত হয়ে থাকে । রান্নার ক্ষেত্রে প্রচলিত দ্রব্যাদি ও মশলা হচ্ছে হলুদ, মরিচ, আদা, রসুন, পেয়াজ, জিরা, লবঙ্গ, এলাচ, দারুচিনি ইত্যাদি 


    কবি সাহিত্যিকদের ভাষায় প্রাচীন যুগ থেকে আধুনিক যুগ !

    প্রাচীনকালে বাঙালির খাওয়া-দাওয়া প্রসঙ্গে বিখ্যাত লেখক নীহাররঞ্জন রায় তার বাঙালির ইতিহাস বইটিতে লিখেছেন- ‘ইতিহাসের উষাকাল হইতেই ধান যে-দেশের প্রথম ও প্রধান উৎপন্ন বস্তু, সে-দেশে প্রধান খাদ্যই হইবে ভাত তাহাতে আশ্চর্য হবার কিছু নাই। ভাত-ভক্ষণের এই অভ্যাস ও সংস্কার অস্ট্রিক ভাষাভাষী আদি-অস্ট্রেলীয় জনগোষ্ঠীয় সভ্যতা ও সংস্কৃতির দান। উচ্চকোটির লোক হইতে আরম্ভ করিয়া নিুতম কোটির লোক পর্যন্ত সকলেরই প্রধান ভোজ্যবস্তু ভাত। ভাত রাঁধার প্রক্রিয়ার তারতম্য তো ছিলই, কিন্তু তাহার কোন সাক্ষ্য প্রমাণ নাই বলিলেই চলে।
    উচ্চকোটির বিবাহভোজে যে-অন্ন পরিবেশন করা হইত সে-অন্নের কিছু কবি শ্রীহর্ষের বিবরণ নৈষধচরিতে দময়ন্তীর বিবাহভোজের বর্ণনায় পাওয়া যায়। গরম ধূমায়িত ভাত ঘৃত সহযোগে ভক্ষণ করাটাই ছিল বোধ হয় সাধারণ রীতি। নৈষধচরিতের বর্ণনা বিস্তৃততর : পরিবেশিত অন্ন হইতে ধূম উঠিতেছে, তাহার প্রত্যেকটি কণা অভগ্ন, একটি হইতে আর একটি বিচ্ছিন্ন (ঝরঝরে ভাত), সে-অন্ন সুসিদ্ধ, সুস্বাদু ও শুভ্রবর্ণ, সরু এবং সৌরভময়। দুগ্ধ ও অন্নপক্ক পায়েসও উচ্চকোটির লোকেদের এবং সামাজিক ভোজে অন্যতম প্রিয় ভক্ষ ছিল
    রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হেমন্তবালা দেবীর মেয়ে বাসন্তীকে লিখেছেন- ‘আমাকে পেটুক বলে যদি কল্পনা কর তাহলে ভুল করবে। আমি যতটা খাই তার চেয়ে গুণ গাই বেশি।’ কবি নিজে নতুন নতুন রান্না আবিষ্কার করতেন। তিনি রান্নায় ব্যস্ত পত্নীর পাশে মোড়া নিয়ে বসে নতুন রান্নার ফরমাস করতেন, নানারকমভাবে রান্না করার নতুন পদ্ধতি শেখাতেন স্ত্রীকে। তবে একথা মানতেই হয় যে ভোজনবীরের সংখ্যাও আমাদের সমাজে নেহায়েত কম নয়।
    কালীপ্রসন্ন বন্দ্যোপাধ্যায় তার ‘মধ্যযুগের বাঙ্গালা’ গ্রন্থে লিখেছেন- ‘নবাবী আমলে বড়িশা-বেহালার সাবর্ণ চৌধুরী জমিদার রাজস্ব বাকির দায়ে বন্দিভূত হইয়া গোটা একটা খাসি রাঁধিয়া একাকী নিঃশেষ করায় বাকি খাজনা হইতে রেহাই পাইয়াছিলেন।’
    রাজা রামমোহন রায়ও নাকি একা একটি আস্ত পাঁঠা খেতে পারতেন। রাজা রামমোহন রায়ের মতো বিস্ময়কর উদাহরণ ইউরোপেও আছে।
    বাঙালির মাছ ও মাংস খাওয়া সম্পর্কে নীহাররঞ্জন লিখেছেন- ‘বারিবহুল, নদনদী-খালবিল বহুল, প্রশান্ত-সভ্যতাপ্রভাবিত এবং আদি-অস্ট্রেলীয়মূল বাঙলায় মৎস্য অন্যতম প্রধান খাদ্যবস্তু রূপে পরিগণিত হইবে, ইহা কিছু আশ্চর্য নয়। চীন, জাপান, ব্রহ্মদেশ, পূর্ব-দক্ষিণ এশিয়ার দেশ ও দ্বীপপুঞ্জ ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপপুঞ্জের অধিবাসীদের আহার্য তালিকার দিকে তাকাইলেই বুঝা যায়, বাংলাদেশ এই হিসাবে কোন্ সভ্যতা ও সংস্কৃতির অন্তর্ভুক্ত। সর্বত্রই এই তালিকায় ভাত ও মাছই প্রধান খাদ্যবস্তু। বাংলাদেশের এই মৎস্যপ্রীতি আর্যসভ্যতা ও সংস্কৃতি কোনোদিনই প্রীতির চক্ষে দেখিত না, আজও দেখে না : অবজ্ঞার দৃষ্টিটাই বরং সুস্পষ্ট। মাংসের প্রতিও বাঙালীর বিরাগ কোনোদিনই ছিল না।
    মাংসের মধ্যে হরিণের মাংস খুবই প্রিয় ছিল, বিশেষভাবে শবর, পুলিন্দ প্রভৃতি শিকারজীবী লোকেদের মধ্যে এবং সমাজের অভিজাত স্তরে। ছাগ মাংসও বহুল প্রচলিত ছিল সমাজের সকল স্তরেই। কোনও কোনও প্রান্তে ও লোকস্তরে, বিশেষভাবে আদিবাসী কোমে বোধ হয় শুক্নো মাংস খাওয়াও প্রচলিত ছিল, কিন্তু কবি ভবদেব-ভট্ট কোনও অবস্থাতেই শুক্নো মাংস খাওয়া অনুমোদন করেন নাই, বরং নিষিদ্ধই বলিয়াছেন। কিন্তু মাছই হোক্ আর মাংসই হোক্, অথবা নিরামিষই হোক্, বাঙালির রান্নার প্রক্রিয়া যে ছিল জটিল এবং নানা উপাদানবহুল তাহা নৈষধচরিতের ভোজের বিবরণেই সুস্পষ্ট।
    বাঙালির তরিতরকারি খাওয়া সম্পর্কে তিনি লিখেছেন- যে-সব উদ্ভিদ্ তরকারি আজও আমরা ব্যবহার করি, তাহার অধিকাংশই, যেমন- বেগুন, লাউ, কুমড়া, ঝিঙ্গে, কাঁকরুল, কচু (কন্দ) প্রভৃতি আদি-অস্ট্রেলীয় অস্ট্রিক ভাষাভাষী জনগোষ্ঠীর দান। এ-সব তরকারি বাঙালি সুপ্রাচীন কাল হইতেই ব্যবহার করিয়া আসিতেছে, ভাষাতত্ত্বের দিক হইতে এই অনুমান অনৈতিহাসিক নয়। পরবর্তী কালে, বিশেষভাবে মধ্যযুগে, পর্তুগীজদের চেষ্টায় এবং অন্যান্য নানাসূত্রে নানা তরকারি, যেমন- আলু, আমাদের খাদ্যের মধ্যে আসিয়া ঢুকিয়া পড়িয়াছে। কিন্তু আদিপর্বে তাহাদের অস্তিত্ব ছিল না। নানাপ্রকারের শাক খাওয়ার অভ্যাসও বাঙালির সুপ্রাচীন
    নীহাররঞ্জন মশাই শুধু আলুর কথাই উল্লেখ করেছেন। আসলে খ্রিস্টীয় ১৫০০ শতকে পুর্তগীজ নাবিক ভাস্কো দ্য গামা ও বিশেষ করে পুর্তগীজ, ইংরেজ ও ফরাসিদের হাত ধরে বাঙালির হেঁসেলে ঢুকে পড়েছিল অনেক কিছুই। ভারতের জলপথ আবিষ্কারের সময় ভাস্কো দ্য গামা ভারতে নিয়ে এসেছিলেন বহু জিনিসপত্র। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল কাঁচা মরিচ। এছাড়াও কামরাঙ্গা, আনারস ও আলু উল্লেখযোগ্য। এখানে উল্লেখ্য যে, কাঁচা মরিচ, আলু, আনারস, কামরাঙ্গা প্রভৃতি জিনিসগুলো আদৌ ইউরোপিয়ান ছিল না। ক্রিস্টোফার কলম্বাস আমেরিকা থেকেই তিনি নিয়ে এসেছিলেন আলু, মরিচ, তামাক প্রভৃতি জিনিসগুলো আর সেই জিনিসগুলোই আবার ভাস্কো দ্য গামার হাত ধরে চলে আসে ভারতে। তবে পুর্তগীজরা আমাদের আরও দুটি জিনিস খাওয়া শিখিয়েছিলেন। সে দুটো জিনিস অবশ্য আমাদের দেশেই জন্মাতো। কিন্তু তারপরও সেগুলো আমাদের হেঁসেলে আদরনীয় হয়ে ওঠেনি।
    প্রথমটি হল- ডাল আর দ্বিতীয়টি হল- সর্ষে। হরেক রকম ও বৈচিত্র্যময় ডাল আমাদের মাটিতে জন্মালেও আমাদের ডাল খাওয়ার অভ্যেস ছিল না। ইতিহাসবিদ নীহাররঞ্জন রায় তার ‘বাঙালীর ইতিহাস’ গ্রন্থটিতে পুরো একটি পরিচ্ছেদই লিখেছেন- ‘প্রাচীন বাঙালী কি ডাল খাইত না’ শিরোনামে। আমাদের খাদ্যাভ্যাসে প্রাচীনকালে উচ্চকোটির লোকজন তেলের পরিবর্তে ঘি ব্যবহার করত। যার নজির আমরা দেখি ‘প্রাকৃত পৈঙ্গল’ কাব্যে। সেখানে অজ্ঞাতনামা এক কবির উদ্ধত সেই সুন্দর শ্লোকটি, যার মধ্যে সাধারণ বাঙালির এক সুষম খাদ্যের উল্লেখ করা হয়েছে- ‘ওগ্রভত্তা রম্ভঅপত্তা, গাইকঘিত্তা দুদ্ধসঙ্গুত্তা/মোইণিমচ্ছা ণালিচগচ্ছা, দিজ্জই কন্তা খা পুণবন্তা ॥’ অর্থাৎ কলার পাতায় ফেনসহ গরম ভাত, কিছু গাওয়া ঘি, গরম দুধ, ময়না মাছ, নালিতা শাক (পাটশাক) স্ত্রী পরিবেশন করছে, পুণ্যবান খাচ্ছে। অন্যদিকে নিুবর্গের লোকজন তিল থেকে যে তেল হয় সেটা ব্যবহার করত রান্নার কাজে। তৈল শব্দের উৎপত্তিও সেই তিল শব্দ থেকেই। পরবর্তীকালে পুর্তগীজরা আমাদের সর্ষের তেল খাওয়াও শিখিয়েছিলেন। তবে মনে হয়, চিনা ব্যবসায়ীরা ১১০০-১২০০ খ্রিস্টাব্দে জলপথে চিন থেকে লিচু, চিচিংগা ও সুমাত্রা থেকে বাতাবিলেবু (জাম্বুরা) সহ সম্ভবত এ ধরনের আরও বহু জিনসিপত্র এই বঙ্গে নিয়ে এসেছিলেন। লিচু ও চিচিংগা নাম দুটো দেখলেই কিন্তু বোঝা যায় যে এগুলো চীন থেকে এসেছে। যেমন লাইচি শব্দ থেকে বাংলায় লিচু আর চীনা ভাষায় চিচিংগা শব্দের অর্থ হচ্ছে ‘বহুবর্ণের সাপ’। চিচিংগা সবজিটির দিকে তাকালেই কিন্তু শব্দটির যথার্থতা ধরা পড়ে। ধনী আর গরিবের খাদ্যাভ্যাসের সুস্পষ্ট ধারণা পাওয়া যায় পর্যটক হিউয়েন সাঙ আর মানরিকের লেখা থেকে। সম্ভ্রান্ত ধনীগৃহে সেকালে ভোজ্যদ্রব্যের এত প্রাচুর্য ছিল যে, সেগুলো খেতে বহু সময় লাগত।
    খ্রিস্টীয় সপ্তম শতকে হিউয়েন সাঙ বলেছেন, বাংলাদেশে ভোজের সময় প্রচুর আয়োজন হতো। গৌড়ের এমনই এক মুসলমান বাড়িতে পর্যটক মানরিক নিমন্ত্রিত হয়ে এত ভোজ্যদ্রব্যের প্রাচুর্য লক্ষ্য করেছিলেন যে, সেগুলো খেতে তার তিন ঘণ্টা সময় লেগেছিল। কিন্তু মানরিক এটাও লক্ষ্য করেছিলেন যে, গরিব লোকেরা ভাত, লবণ, শাক ও অল্প কিছু তরকারির ঝোল খেত। কখনও কখনও দই ও সস্তা মিষ্টি। আমানি (পান্তা ভাতের জল) গরিবদের প্রধান খাদ্য ছিল।
    ভোজনরসিক বলে বাঙালির সুখ্যাতি থাকলেও চট করে কোন বিদেশি অনুষঙ্গ নিজ রান্নাঘরে ঢোকাবে এতোটা উদার বাঙালি কোন কালেই ছিল না। আর সেজন্যই পুর্তগীজ, ইংরেজ, ফরাসি কিংবা দিনেমাররা ইউরোপ থেকে বহুকিছু নিয়ে এলেও সেগুলোকে নিজের করে নিতে বেশ সময় লেগেছিল বাঙালির। বিশিষ্ট লেখক ও ইতিহাসবিদ শ্রীপান্ত জানাচ্ছেন- ফুলকপির চাষ ভারতে শুরু হয় ১৮৫০ সালে। বাঁধাকপি তার কিছুটা আগে। টমেটো অবশ্য ভারতে আসে আরও কিছুকাল পরে, ১৮৮০ সালে। কিন্তু কলম্বাসের আবিষ্কার সেই গোল আলু ভারতে আসে ১৭৮০ সালে। ১৮৩০ সালের দিকে দেরাদুন পাহাড়ের ঢালে আলুর ব্যাপক চাষাবাদ শুরু হয়। কিন্তু কলকাতার বাজারে গোলআলু বিক্রি হতে শুরু করে তার অনেক আগে থেকেই। তবে বাঙালি সমস্ত সবজির মধ্যে আলুর মাহাত্মটাই বোধকরি সর্বাগ্রে ধরতে পেরেছিল। অন্য বিদেশি সবজিগুলো বাঙালির হেঁসেলে ঢুকতে তারপরও বেশ কিছুদিন সময় নেয়। সে বিষয়ে আমরা জানতে পারি বিখ্যাত লেখক প্রবোধকুমার সান্যালের আত্মজীবনী- ‘বনস্পতির বৈঠক’ গ্রন্থটি থেকে। ১৯২০ সালে বাঙালির ভোজ্যপণ্যের একটি চিত্র এঁকেছেন তার বইয়ে। বইটির প্রথমখণ্ডের ১৬৪ পৃষ্ঠায় লিখেছেন- ‘শীতের দিনে হাঁটা সুবিধে। নির্জন নিরিবিলি গ্রামের পথ, বন-বাগান ক্ষেতখামার ছাড়িয়ে চলেছে সে। মাঝে মাঝে খড়ের গাড়ি, তার পিছু পিছু যাচ্ছে গাড়ি গাড়ি ফুলকপি, বাঁধাকপি, বেগুন আর মুলো। টমেটোর নাম ছিল বিলেতি বেগুন, তার সঙ্গে বীট, গাজর, সয়াবিন, লেটুস- এসব কোনটাই কেউ তখন খেত না! বাজারেও তাই ওসব আসত না। ওসব গাড়ি যেত ইংরেজদের হগসাহেবের বাজারে।’
    ভারতের গোয়া প্রদেশ থেকে উত্তর ভারত, মধ্য ভারত এরপর বঙ্গদেশে লঙ্কা আসতে যে কত দেরি করেছিল তার প্রমাণ পাওয়া যায় সম্রাট আকবরের সভাসদ আবুল ফজল লিখিত বই আইন-ই-আকবরি থেকে।
    ষোলো শতকের শেষ দিকে উত্তর ভারতে বসে লেখা ‘আইন-ই-আকবরি’-তে চল্লিশটা পদের রান্নার বিবরণ দেয়া আছে। কিন্তু তার কোনোটাতেই লঙ্কার নামগন্ধ নেই। সব পদেই গোলমরিচের ব্যবহারের কথা লেখা। অন্য দিকে, দক্ষিণ ভারতের প্রবাদপ্রতিম চারণকবি পুরন্দরদাস (১৪৮৪-১৫৬৪) লঙ্কার ভালোবাসায় গান পর্যন্ত লিখেছেন। ‘তোমায় আমি প্রথম দেখি সবুজ- অভিজ্ঞতা তোমায় রাঙা করেছে হে সুন্দরী! তুমি সুস্বাদু কিন্তু পরিমিতি মাপা। হে গরিবদের মসিহা, তোমায় পেলে বিট্ঠল ভগবানকেও ভুলতে বসি।’
    অনেক অনুসন্ধিৎসু পাঠকের মনে এটা আসতেই পারে যে, মাছ, মাংস ও বহুরকম ব্যঞ্জনে বাঙালি কি ধরনের মসলা ব্যবহার করত। এই বঙ্গে ১৬০০ সাল নাগাদ তরকারিতে মরিচের জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। ভারতে মরিচ আসার আগে ঝালের জন্য গোলমরিচ ও আদা ব্যবহৃত হতো। অন্যান্য মসলা যেমন ধনে, জিরে এগুলো তো ছিলই আরও ব্যবহৃত হতো হলুদ। তবে হলুদের ব্যবহার আয়ুর্বেদ চিকিৎসায় প্রথম শুরু হয় তারপর ধীরে ধীরে ব্যঞ্জনে হলুদ ব্যবহৃত হতে থাকে। গরিব মানুষ সাধারণ মসলা ব্যবহার করলেও উচ্চকোটির মানুষ কিন্তু তাদের রান্নায় ব্যবহার করতেন শতেক রকম মসলা। প্রাচীনকাল থেকেই সনাতন ধর্মের মানুষদের কাছে পেঁয়াজ ও রসুন খাওয়া নিষিদ্ধ ছিল। হিন্দুরা মনে করত পেঁয়াজ ও রসুন ম্লেচ্ছদের খাবার। পেঁয়াজ, রসুনের পরিবর্তে ব্যবহৃত হতো হিং। খ্রিস্টপূর্ব ৭০০ সালে রচিত রামায়ণে আমরা দেখি হিং দিয়ে আগুনে ঝলসে খাওয়া হচ্ছে সবরকম মাংস। আবার এর ঠিক দুই হাজার বছর পরে অর্থাৎ ১৬০০ সালে বিজয়গুপ্তের লেখা মনসামঙ্গলে কবি লিখেছেন- রন্ধন রান্ধিয়া সোনাই করিল ভাগ ভাগ/হিঙ্গ মরিচে রাঁধিলে শ্বেত সরিষার শাগ।
    লেখক পিনাকী ভট্টাচার্য আমাদের জানাচ্ছেন যে হিংয়ের আদিবাড়ি হল আফগানিস্তানের হিন্দুকুশ পর্বতমালার পাদদেশে। আজও সেরা হিং সেখানেই পাওয়া যায়। ভারতবর্ষের এই হিং-ই একসময় বিশ্ব জয় করেছিল।
    বাঙালির খাদ্যাভ্যাসের আরেকটি বড় বৈশিষ্ট্য হচ্ছে যে কোনো তরকারিতে ঝোল খাওয়া। প্রাচীনকালে কোন ব্যঞ্জনেই ঝোল খাওয়া হতো না। রামায়ণ, মহাভারতে শতরকম মাছ, মাংস হিং দিয়ে যে ঝলসে খাওয়া হতো
    ঝোল খাওয়ার প্রথম নজির মেলে চৈতন্য চরিতামৃত, ধর্মমঙ্গল ও মনসামঙ্গল কাব্যে। কবি নারায়ণদেব লিখেছেন- ভাজিয়া তুলিল কথ চিথলের কোল/মাগুর মৎস্য দিয়া রান্ধে মরিচের ঝোল। ধারণা করা হয় ১৫০০ সাল নাগাদ বাঙালি তরকারিতে ঝোল খাওয়া শুরু করে।
    ঝোল সম্পর্কে বিখ্যাত লেখক সৈয়দ মুজতবা আলী লিখেছেন- পূর্ববাংলার গোয়ালন্দ, নারায়ণগঞ্জ, চাঁদপুরে জাহাজের খলাসীরা যে মুরগির ঝোল রান্না করে সে রকম ঝোল ভু-ভারতে আর কেউ রাঁধতে পারে না। সেজন্যই বোধকরি স্বামী বিবেকানন্দ বাংলাদেশের ঝোলের ভীষণ ভক্ত ছিলেন। কোনো এক সূর্য গ্রহণের দিনে স্বামীজী তার এক শিষ্য বলরাম বসুর বাড়িতে শিষ্যের হাতে সেবা গ্রহণে উৎসাহী হয়েছেন। স্বামীজী পূর্ববঙ্গজ শিষ্যের হাতে পূর্ববঙ্গীয় রীতিতে রান্না খেতে চাইলেন। যোগীন মা রান্নার কাজে সাহায্য করছিলেন। স্বামীজী মাঝে মাঝে রান্না ঘরে এসে রান্নার বিষয়ে খোঁজ নিচ্ছিলেন। কখনও বলছিলেন, ‘দেখিস মাছের ‘জুল’ যেন ঠিক বাংলাদেশি ধরনের হয়।’ ভাত, মুগ ডাল, কই মাছের ঝোল, মাছের টক ও মাছের সুক্তুনি রান্না হতে না হতেই স্বামীজী খেতে বসে গেলেন। তিনি মাছের সুক্তুনি খেয়ে খুশি হলেন, মাছের ‘জুল’-কে ঝাল বললেন। মাছের টক খেয়ে বলেন, ‘এটা ঠিক বর্দ্ধমানী ধরনের হয়েছে।’ দই, সন্দেশ দিয়ে তিনি আহার শেষ করলেন। আহার শেষে তামাক টানতে টানতে বল্লেন, ‘যে ভাল রাঁধতে পারে না, সে ভাল সাধু হ’তে পারে না-মন শুদ্ধ না হ’লে ভাল সুস্বাদু রান্না হয় না।’
    বিশিষ্ট লেখক ধৃতিকান্ত লাহিড়ী চৌধুরী বাদুড়ের মাংস খেতে খুব ভালোবাসতেন। তার ‘দেশে দেশে মোর ডিশ আছে’ প্রবন্ধে লিখেছেন- বাদুড়ের মাংস খাওয়া চলে কিনা এ নিয়ে একবার প্রচুর বিতর্ক হল। প্রচলিত বিশ্বাস, বাদুড় মাথা নিচে করে গাছে ঝোলে। তাহলে নিশ্চয়ই মুখ দিয়ে মলত্যাগ করে। এই রকম নোংরা জীবের মাংস খাবার প্রশ্ন ওঠে না। দা দিয়ে মৃত বাদুড়ের দেহ ব্যবচ্ছেদ করে দেখা গেল এটা একেবারেই ভুল ধারণা। বরং বলা চলে বাদুড়ের মতো মাংস হয় না, কারণ এত পরিষ্কার খাদ্যাভ্যাস অনেক পাখিরই নেই। যেমন মুরগি তো ময়লা ঠুকরে খেয়ে বেড়ায়। বাদুড় গাছপাকা ফলটি ছাড়া কিছুই খায় না।
    বাঙালির আনুষ্ঠানিক ভোজে নাকি খাদ্য অপচয়ের চূড়ান্ত হতো—এমন কথা লিখে গিয়েছেন চীনা পরিব্রাজক হিউ এন সাং। তার দেখা ব্যঞ্জনের তালিকায় রয়েছে দই আর রাই সরষে দিয়ে রান্না করা পদ। যা খেয়ে অতিথিদের মাথা চাপড়াতে হতো তীব্র ঝালের আক্রমণে। প্রাচীন বাঙালির প্রিয় খাদ্য ছিল হরিণের মাংস। সম্ভবত এজন্যই চর্যাপদে লেখা হয়েছে—‘‘আপনা মাংসে হরিণা বৈরী’’। হরিণের মাংস সুস্বাদু বলে সবাই বনে এসে আগে হরিণ শিকার করতো।
    বাংলা সাহিত্যেও ভোজন রসিক বাঙালীর দারুন সব ছবি ছড়িয়ে আছে। মনে করার চেষ্টা করি বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের অসাধারণ উপন্যাস ‘পথের পাঁচালী’র কথা্। অপু তার বাবার সঙ্গে অবস্থাসম্পন্ন এক বাড়িতে মোহনভোগ বা হালুয়া জাতীয় খাবার খেয়েছিলো। সেই মোহনভোগে ঘিয়ের পরিমাণ এত বেশি ছিল যে অপুর আঙুলে মাখামাখি হয়ে যায়। তার মনে পড়ে, মায়ের কাছে মোহন ভোগ খেতে চাইলে ‘শুধু সুজির জলে সিদ্ধ করিয়া একটু গুড় মিশাইয়া পুলটিসের মতো এক দ্রব্য তৈয়ার করিয়ে ছেলেকে আদর করিয়া খাইতে দেয়।’ আজকের মোহন ভোগ আর মায়ের তৈরি মোহনভোগের সঙ্গে অপু তফাৎ করতে পেরেও সে দরিদ্র মায়ের প্রতি করুণা ও সহানুভূতিতে পূর্ণ হয়ে গেল। ‘খাইতে বসিয়া বারবার তাহার মনে হইতেছিল অর্থাৎ তাহার দিদি এরকম খাইতে পায় নাই কখনো’। সুস্বাদু খাবার অপুর মনে বেদনারও উদ্রেক করেছিলো।

    জীবনানন্দ দাশ তাঁর এক লেখায় খাবারের বিবরণ দিতে গিয়ে লিখেছেন নিমি তাকে খেতে দিচ্ছে—‘‘নিমি পিঁড়ি পাতিয়া মল্লিকা ফুলের মতো পরিষ্কার অন্ন, কাঁচা কলাইয়ের ডাল, জঙ্গুলে ডুমুরের ডালনা, পুকুরের রুই মাছের ঝোল এবং দুগ্ধ আনিয়া জীবানন্দকে খাইতে দিল’’। এর পরেই নাম আসে তারাশঙ্কর, বনফুল ও বিভূতিভূষণের।তাঁদের লেখায় উঠে এসেছে বাঙালির খাদ্যরসিক মূর্তি।
    তবে বাঙালির ভোজনরসিক ছবি তুলে আনতে রবীন্দ্রনাথও কম যান না। ‘নৌকাডুবি’ উপন্যাসের কমলা-রমেশের স্টিমার যাত্রার বিচিত্র সরসতা পাঠকের জন্য ভুলবার নয়। কমলার রন্ধন নৈপুণ্য এবং রমেশের সংগ্রহ ক্ষমতা মিলে সে এক রসঘন পরিস্থিতি। সজনে ডাটা, লাউডগা, বেগুন কুমড়োফুল, রুইমাছ—সব মিলিয়ে সে এক মহা আয়োজন।

    সৈয়দ মুজতবা আলী বোধ করি খাবারের ব্যাপারে আদর্শ বাঙালির ছাড়পত্রটি অনায়াসে পেতে পারেন। তাঁর মতে, খাদ্যের হাজারো প্রকার থাকলেও খাদক মূলত দুই প্রকারের। ভোজনপটু ও ভোজনবিলাসী। ভোজনবিলাসীরা হরেক রকমের খাবার সামনে থাকলেও বেছে বেছে খায়। আর ভোজনপটু যারা তাদের কোনো বাছ-বিচার নেই। আহার উপযোগী হাতের কাছে যা পায় তাই টপাটপ হজম করে। এরা খাবার সামনে থাকলে ভরা পেটেও খাওয়া শুরু করে।তবে বাঙালির চরিত্রে এই দুই ধরণের ভোজনরসিকতার প্রধান্যই রয়েছে।
    বঙ্কিমচন্দ্র লিখেছিলেন, ‘‘নদের ফটিক চাঁদ, এখন আর মালপো ভোগে তেমন আস্থা নেই তার, ফাউল কারি ঠিকমতো তরিবত্ হলো কি না এ নিয়ে তার বেজায় দুশ্চিন্তা’’। ফাউল কারি আসলে মুরগির তরকারি। তখন হিন্দু সমাজে মুরগি খাওয়ার চল ছিলো না। বঙ্কিমচন্দ্রের লেখায় তৎকালীন সমাজে বাঙালীর আহারের রুচি পরিবর্তনের আঁচ পাওয়া যায়।
    রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বাড়িতে বসতো বিদ্বজ্জনসমাগম সভা কিংবা খামখেয়ালি সভা। এই সব সভায় মুখরোচক খাবার পরিবেশিত হতো। রবীন্দ্রনাথের স্ত্রী মৃণালিনী দেবীর হাতে তৈরি দইয়ের মালপো, মানকচুর জিলাপির মতো অদ্ভূত খাবারের আত্মপ্রকাশও নাকি এ সব আসরেই।
    ঈশ্বরচন্দ্ৰ বিদ্যাসাগরের মতো মানুষও নাকি ছিলেন অত্যন্ত ভোজন রসিক। খেতে ও খাওয়াতে ভালোবাসতেন। তিনি কয়েকজন অন্তরঙ্গ বন্ধুকে নিয়ে ‘ভোজন সভা’ নামে একটি সংস্থা গড়ে তুলেছিলেন। সংস্থার প্রায় জনাদশেক সদস্য ছিলো। এই সংস্থার সদস্যরা হঠাৎ দল বেঁধে ঘনিষ্ঠ আত্মীয়স্বজন-বন্ধুবান্ধবের বাড়িতে গিয়ে খেতে চাইতেন। সংস্থার নাম ছড়িয়ে পড়েছিল ঘনিষ্ঠ মহলে। তাই প্রত্যেকেই সবসময় ভয়ে থাকতেন যে, এই বুঝি ভোজনসভার সভ্যদের উদয় হলো!
    প্রখ্যাত বাঙালি লেখক শিবরাম চক্রবর্তী তো বলেই গেছেন, তাঁর জীবনের লক্ষ্য দুটো-‘‘খাই আর শুই’’। এক সময় শিবরাম পুরোদমে স্বদেশী আন্দোলনে সামিল হয়েছিলেন। রাজবন্দী হিসেবে জেলেও গিয়েছেন। তখন তাঁর এতই রোগা পটকা চেহারা ছিলো যে পুলিশ কিছুতেই তাঁকে বিপ্লবী হিসেবে আমলে নিত না। যা-ই হোক, একদিন ধরা পড়লেন, বলা ভাল নিজেই ধরা দিলেন। জেলে গিয়ে দেখা হয়ে গেলো কবি কাজী নজরুল ইসলামের সঙ্গে। তিনিও বন্দী তখন। তাঁকে দেখে নজরুল তো দারুণ খুশি। গানে, গল্পে কবিতায় হৈ হৈ করে সময় কাটতো তাঁদের। জেলখানায় রাজবন্দীদের খাবার নিজে হাতে রান্না করে খাওয়াতেন নজরুল। তিনি চমৎকার মোঘলাই খানা বানাতে জানতেন। বানাতেন বিরিয়ানি, পোলাও, কোর্মা, নানা রকম কাবাব, কাটলেট, মাংসের চপের মতো নানান জিভে-জল-আনা পদ। শিবরাম লিখেছেন, “মনে পড়লে এখনও জিভে জল সরে। নিজেকে সজিভ বোধ করি। আর জেলখানার সেই খানা! আহা! আমি তো বহরুমপুর জেলে যাওয়ার আগে পর্যন্ত টিঙটিঙে রোগা ছিলাম। তারপরে দুইবেলা কাজির খানা খেয়ে এমন মোগলাই চেহারা নিয়ে বেরলাম যে আর রোগা হলাম না। জেলখানায় আর জেলের খানায় গড়া এই চেহারা এতটুকু টসকায়নি।”
    প্রাচীন স্বচ্ছল বাড়িতে নাকি এক বেলার খাবারে ৬৪ ব্যঞ্জন রান্না করা হতো। বাঙালির নামের সাথে আড্ডাবাজ খ্যাতিও রয়েছে। আর আড্ডা তো আর খালি মুখে চলতে পারে না। তাই আড্ডার সাথে থাকতো জমজমাট খাওয়া দাওয়া। বাঙালির বৃষ্টি মানেই খিচুড়ি, মাংস, আচার, ভাজি, ভর্তা এসব।বৃষ্টির দিনে জমজমাট আড্ডা আর খিচুড়ি। আর শীত মানে নানা রকম শাক-সবজি। সবজি আবার বিভিন্ন রংয়ের হতো। এসব খাওয়া দাওয়া চলতো বাঙালির নিত্যদিনে। এছাড়াও বাঙালির শেষ পাতে একটু মিষ্টি না হলেই যেন নয়। শেষ পাতে মিষ্টি, পায়েস,পিঠে যেন লেগেই থাকতো। প্রাচীন মহিলারা বিভিন্ন ধরনের পিঠে বানাতে ভালোবাসতো।
    বাঙালির প্রাচীন বিভিন্ন কাব্যে খাদ্যের বিভিন্ন বর্ণনা দেওয়া আছে। যেমনঃ ‘নৈষধী চরিত’-এর রচয়িতা শ্রী হর্ষ ছিলেন দ্বাদশ শতকের কবি। (অনুবাদক ড. করুণাসিন্ধু দাস, কলকাতা, ১৯৮২)। তাঁর সেই কাব্যকথায় খাদ্যের বৈচিত্র্য এবং রন্ধনশিল্পীদের নৈপুণ্যের অনেক তথ্য রয়েছে। সেসব তথ্যের মধ্যে শ্রী হর্ষের দেয়া ভাতের বর্ণনাটিও উপভোগ করার মতো। এখানে তা তুলে দেয়ার লোভ সামলানো গেলো না—লোকেরা সাগ্রহে ভাত খেলেন, তাতে ধোঁয়া উঠছিল, ভাত মোটেই ভাঙ্গা নয়, গোটা, পরস্পর আলাদা, কোমল ভাব হারায়নি, সুস্বাদু, সাদা, সরু, সুগন্ধযুক্ত। তার লেখায় বাঙালীর আরেকটি প্রিয় খাবার দইকে বলা হয়েছে, ‘অমৃতের হ্রদ থেকে তুলে পাঁকের মতো…।’
    ভাত কিন্তু বাঙালির ভোজের তালিকায় সবসময় এক নম্বরেই থাকে। সৈয়দ মুজতবা আলী বহু দেশ ঘুরেছিলেন, বহু ধরনের রান্না খেয়েছেন। আরব দেশ ভ্রমণের সময় মুরগি মোসাল্লম, শিক কাবাব, শামি কাবাবের স্বাদ পেয়েছেন। জাহাজে ঘুরে বেড়াবার সময় ইউরোপীয় খাবারও খেয়েছেন। কিন্তু ওই যে বাঙালী বলে কথা। সেই ভ্রমণ কালে আলী সাহেবের প্রাণ কাঁদছিল—চারটি আতপ চাল, উচ্ছে ভাজা, সোনামুগের ডাল, পটল ভাজা আর মাছের ঝোলের জন্য।ভাবা যায়! চিরকালের ভেতো বাঙালি মনে হয় একেই বলে। ভাত কিন্তু বাঙালির পেছন ছাড়ে না কখনোই। প্রাচীন কালের ইতিহাস বইয়ের পাতা উল্টে গেলে জানা যায়, তখন ভাত খাওয়া হতো শাক এবং অন্যান্য ব্যঞ্জন দিয়ে। দরিদ্র ও পল্লী অঞ্চলের মানুষের প্রধান খাদ্যই ছিল শাক-ভাত। নালিতা বা পাটশাকের উল্লেখ আছে ‘প্রাকৃত পৈঙ্গল’-এ। মইলি বা মৌরলা মাছ ছিলো বাঙালির প্রিয় খাদ্য। তার অর্থ দাঁড়াচ্ছে খাবারের প্রতি এই দূর্বলতা এই জাতির তখন থেকেই।

    চালের বা ভাত জাতীয় খাবার!
    • কালো চাল - বিশেষ স্থানীয় জাতের ধান
    • বাদামী চাল - বিশেষ স্থানীয় জাতের ধান
    • লাল চাল - বিশেষ স্থানীয় জাতের ধান
    • ভাত - সাদা ভাত বা প্রধান খাবার
    • পান্তা ভাত - গাঁজানো চাল, দই, লবণ
    • বিরিয়ানি - ভাত, মাংস, আলু এবং মশলার বিশেষ স্থানীয় বৈচিত্র্য
    • ভুনা খিচুড়ি - গরুর মাংস/মুরগি/মাটনের সাথে ভাত
    • মোরগ পোলাও -মুরগির সাথে কালিজিরা, চিনিগুড়া, ইছাগুড়ার মতো উন্নত বাংলাদেশি জাতের চাল
    • কাচ্চি বিরিয়ানি - মাটনের সাথে বিরিয়ানি
    • পোলাও - ভাত, মাংস, আলু এবং মশলার বিশেষ স্থানীয় বৈচিত্র্য
    • তেহারী - ভাত, মাংস, আলু এবং মশলার বিশেষ স্থানীয় বৈচিত্র্য।


    শাক-সবজী জাতীয় খাবার !
    • সবজি (তরকারি) - বিভিন্ন সবুজ বা অন্যান্য সবজি
    • আলু ভর্তা - আলু এবং শুকনো মরিচ দিয়ে তৈরি খাবার
    • বেগুন ভর্তা - ভর্তা করা বেগুন দিয়ে তৈরি পদ, বাবা ঘানুশের সাথে মিল রয়েছে
    • লাউ চিংড়ি - লাউ এবং চিংড়ি দিয়ে তৈরি মশলাদার তরকারি
    • লাল শাক ভাজা - রান্না করা লাল শাক
    • আমের আচার - সবুজ আম দিয়ে তৈরি আচার
    • রুটি - চাপাতি নামেও পরিচিত একটি রুটি যা বাংলাদেশ থেকে উদ্ভূত হয়।
    মাছ দিয়ে রান্না করা খাবার !
    • চিংড়ি মালাই - তরকারি: চিংড়ি, নারকেল, সরিষা
    • হরিওঃ মাছ - সোনালি সরিষা মাছের তরকারি
    • ইলিশ ভাজা - ভাজা ইলিশ (ইলিশ মাছ)
    • কোই মাছের কারি - কোই মাচ চড়াই পার্চ কারি
    • মাছের ঝোল - মাছ ও বিভিন্ন মশলা দিয়ে তৈরি তরকারি
    • মাগুর মাছের ঝোল - মাগুর মাছের তরকারি
    • রুই ভাজা - ভাজা রুই মাছ, বাংলাদেশের একটি সাধারণ খাবার
    • শিং মাছের ঝোল -শিং মাছের তরকারি
    • ষোড়শ ইলিশ - সরিষা ও মশলা দিয়ে ইলিশ ইলিশের তরকারি
    • শুটকি ভুনা - রান্না করা শুকনো মাছ।
    মাংস দিয়ে রান্না করা খাবার !
    • গরুর কালা ভুনা - গরুর মাংস (বা মাটন) তরকারি, বাংলাদেশীদের কাছে খুবই জনপ্রিয়।
    • গরুর মাংসের তরকারি - বাংলাদেশে প্রচলিত গরুর মাংসের তরকারি
    • গোরুর ভুরি ভাজা/ভুনা - দেশীয় মশলা দিয়ে গরুর মাংসের পেট দিয়ে তৈরি খাবার
    • মুরগির রোস্ট - বাংলাদেশী শৈলীর মুরগির রোস্ট। ঘি এবং সুগন্ধি মশলাযুক্ত মুরগির মাংসের পদ
    • মুরগির তরকারি - বাংলাদেশে প্রচলিত মুরগির তরকারি
    • মাটন কারি - বাংলাদেশে সাধারণ মাটন কারি।
    ডালের তৈরি খাবার !
    • ডাল - মসুর ডাল
    • হালিম - গরুর মাংসের সাথে বিভিন্ন ধরনের মসুর ডাল দিয়ে তৈরি একটি জনপ্রিয় খাবার। হালিমের বাংলাদেশি সংস্করণ হায়দ্রাবাদের থেকে একেবারেই আলাদা।
    • মিষ্টি ছোলার ডাল -বাংলা ছোলা, নারকেল এবং চিনি দিয়ে তৈরি তরকারি।
    পানীয় জাতিয় খাবার !
    • বোরহানি - শসা জাতপানীয়।
    • লস্সি - দইজাত পানীয়।
    পিঠা
    • ভাপা পিঠা - বাদামী চিনির সর বা গুড়ের সাথে তাজা মাটির চালের আটা দিয়ে তৈরি পিঠা
    • নকশি পিঠা - নকশা করা চালের আটার পিঠা
    • পুলি পিঠা - নারকেল এবং গুড় দিয়ে তৈরি চালের গুড়ার পিঠা।
    মিষ্টান্ন ও মিষ্টিজাতীয় খাবার !
    • চমচম মিষ্টি - কুটির পনির, ময়দা, চিনির শরবত, টাঙ্গাইল জেলা থেকে উদ্ভূত
    • কুমিল্লার রসমালাই - একটি জনপ্রিয় মরুভূমি। কুমিল্লা শহরের রসমালাই সবচেয়ে জনপ্রিয়
    • ফালুদা - বিভিন্ন দ্রব্য দিয়ে তৈরি
    • লাড্ডু - নারকেল মিষ্টি
    • জিলাপি - ময়দা এবং সিরা দিয়ে তৈরি
    • মিষ্টি দোই - দই, চিনির শরবত এবং/অথবা গুড়
    • মুড়ি লারু - মিষ্টি
    • পায়েশ - দুধ, চাল এবং কখনও কখনও গুড় দিয়ে তৈরি মিষ্টি
    • পেদা - মিষ্টি
    • রসগোল্লা - কুটির পনির, ময়দা এবং চিনির সিরাপ দিয়ে তৈরি মিষ্টি
    • সন্দেশ - দুধ এবং চিনি দিয়ে তৈরি মিষ্টি
    জলখাবার ও পথখাবার গুলো !
    • চটপটি - পথখাবার, বাড়িতেও তৈরি হয়ে থাকে
    • ফুচকা - বাংলাদেশে বিশেষ করে ঢাকায় একটি সাধারণ এবং জনপ্রিয় রাস্তার নাস্তা
    • ডিমের চপ - ডিম থেকে তৈরি খাবার
    • দই পুরি -একটি সাধারণ পথ-জলখাবার
    • হালিম - গরুর মাংসের সাথে বিভিন্ন ধরনের মসুর ডাল দিয়ে তৈরি একটি জনপ্রিয় খাবার। হালিমের বাংলাদেশি সংস্করণ হায়দ্রাবাদের থেকে একেবারেই আলাদা।
    • ঝালমুড়ি - ভাজা চাল এবং অন্যান্য অনেক মশলা দিয়ে তৈরি
    • মোঘলাই পরোট - এটি একটি নরম ভাজা রুটি যা কিমা (মাংসের কিমা), ডিম, পেঁয়াজ এবং গোলমরিচ দিয়ে তৈরি করা হয়; বা একই জিনিস দিয়ে ভরা পরোটা ।
    • পুরী - ময়দা দিয়ে তৈরি রুটি



    বাংলাদেশ ১,৪৭,৫৭০ বর্গকিলোমিটারের ছোট্ট একটি দেশ হলেও এখানে রয়েছে ৬৪ টি জেলা।দেশের প্রতিটি জেলায় রয়েছে নিজস্ব খাবার; যেগুলোর সুনাম ছড়িয়ে পড়েছে দেশে-বিদেশে। যেমনঃ ছানার পোলাও ও পায়েস। আপনার জানা থাকলে অবশ্যই জামালপুর গেলে এই খাবারের স্বাদ না নিয়ে ফিরতে চাইবেন না।আমাদের দেশের প্রতিটি জেলার বিখ্যাত খাবারগুলোর নাম থাকছে এই আয়োজনে,যাতে কখনো কোনো জেলায় গেলে সেখানকার খাবারের স্বাদ নিয়ে ফিরতে পারেন আপনার গন্তব্যস্থলে-

    ৬৪ জেলার বিখ্যাত খাবারের তালিকা :

    ঢাকা বিভাগের খাবার-

    1. ঢাকা জেলাঃ বাকরখানি, বিরিয়ানি।
    2. নরসিংদী জেলাঃ সাগরকলা।
    3. রাজবাড়ী জেলাঃ চমচম,খেজুরের গুঁড়।
    4. টাঙ্গাইল জেলাঃ চমচম।
    5. ফরিদপুর জেলাঃ খেজুরের গুঁড়।
    6. মাদারীপুর জেলাঃ খেজুরের গুঁড়, রসগোল্লা।
    7. শরীয়তপুর জেলাঃ বিবিখানা পিঠা।
    8. গাজীপুর জেলাঃ কাঁঠাল, পেয়ারা।
    9. গোপালগঞ্জ জেলাঃ রসগোল্লা,ছানার জিলাপি।
    10. মানিকগঞ্জ জেলাঃ খেজুরের গুঁড়।
    11. মুন্সীগঞ্জ জেলাঃ ভাগ্যকুলের মিষ্টি।
    12. নারায়ণগঞ্জ জেলাঃ রসমালাই।
    13. কিশোরগঞ্জ জেলাঃ বালিশ মিষ্টি।

    চট্টগ্রাম বিভাগের খাবার

    1. বান্দরবন জেলাঃ তামাক, হিল জুস।
    2. রাঙামাটি জেলাঃ আনারস, কাঁঠাল,কলা।
    3. চট্টগ্রাম জেলাঃ মেজবান, শুটকি।
    4. কক্সবাজার জেলাঃ মিষ্টিপান।
    5. চাঁদপুর জেলাঃ ইলিশ।
    6. ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলাঃ তালের বড়া,ছানামুখী, রসমালাই।
    7. কুমিল্লা জেলাঃ রসমালাই।
    8. নোয়াখালী জেলাঃ নারকেল নাড়ু,ম্যারা ও খোলাজা পিঠা।
    9. লক্ষ্মীপুর জেলাঃ সুপারি।
    10. ফেনী জেলাঃ মহিষের দুধের ঘি ও খন্ডলের মিষ্টি।

    খুলনা বিভাগের খাবার

    1. যশোর জেলাঃ খই, জামতলার মিষ্টি, খেজুরের গুঁড়।
    2. খুলনা জেলাঃ সন্দেশ, গলদা চিংড়ি,নারিকেল।
    3. বাগেরহাট জেলাঃ চিংড়ি,সুপারি।
    4. চুয়াডাঙ্গা জেলাঃ পান,তামাক, ভুট্টা।
    5. ঝিনাইদাহ জেলাঃ হরি ও ম্যানজারের ধান।
    6. কুষ্টিয়া জেলাঃ তিলের খাজা।
    7. মাগুরা জেলাঃ রসমালাই।
    8. মেহেরপুর জেলাঃ মিষ্টি সাবিত্রি ও রসকদম্ব।
    9. নড়াইল জেলাঃ পেড়ো সন্দেশ, খেজুর গুঁড় ও রস।
    10. সাতক্ষীরা জেলাঃ সন্দেশ।

    সিলেট বিভাগের খাবার

    1. সিলেট জেলাঃ চা,কমলালেবু, সাতকড়ার আচার।
    2. হবিগঞ্জ জেলাঃ চা।
    3. সুনামগঞ্জ জেলাঃ দেশবন্ধুর মিষ্টি।
    4. মৌলভীবাজার জেলাঃ ম্যানেজার স্টোরের রসগোল্লা,খাসিয়া পান।

    এছাড়া আরো বিখ্যাত খাবার হলো তুশা শিন্নি,হান্দেশ,নুনর বড়া,হুটকি শিরা,ফাল,চিকেন টিক্কা মাসালা,খিচুড়ি,বিরইন ভাত,আখনি,সাতকরা,জর্দা,কালিয়া,কোরমা,চুঙ্গা পিঠা,হাঁস বাশ,সাত রং চা।

    বরিশাল বিভাগের খাবার

    1. বরগুনা জেলাঃচুইয়া পিঠা,মুইট্টা পিঠা, চ্যাপা পিঠা, বিসকি,আল্লান।
    2. বরিশাল জেলাঃ আমড়া।
    3. ঝালকাঠি জেলাঃ আটা।
    4. পিরোজপুর জেলাঃ পেয়ারা,নারিকেল, আমড়া,সুপারি।
    5. পটুয়াখালী জেলাঃ মহিষের দই।
    6. ভোলা জেলাঃ নারিকেল, দই।

    ময়মনসিংহ বিভাগের খাবার

    1. ময়মনসিংহ জেলাঃমুক্তাগাছার মন্ডা।
    2. জামালপুর জেলাঃ ছানার পোলাও ও পায়েস।
    3. শেরপুর জেলাঃ ছানার পায়েস ও চপ।
    4. নেত্রকোনা জেলাঃ বালিশ মিষ্টি।
    এছাড়া আরো বিখ্যাত ঐতিহ্যবাহী জনপ্রিয় খাবার হলো জাকির মিয়ার টক জিলাপি, কাঠকচুর বড়া
    ,লাউয়ের টক খাটাই,চাল কুমড়ার মুরব্বা, মিডুড়ী চেপা - শুটকির পুলি


    রংপুর বিভাগের খাবার

    1. রংপুর জেলাঃ তামাক, ইক্ষু।
    2. ঠাকুরগাঁও জেলাঃ সূর্যপুরী আম।
    3. পঞ্চগড় জেলাঃ ডিম ভূনা।
    4. নীলফামারী জেলাঃ ডোমারের সন্দেশ।
    5. লালমনিরহাট জেলাঃ রস।
    6. কুড়িগ্রাম জেলাঃ চমচম।
    7. গাইবান্ধা জেলাঃ রসমঞ্জরী।
    8. দিনাজপুর জেলাঃ লিচু,কাটারিভোগ চাল,চিড়া।

    রাজশাহী বিভাগের খাবার

    1. রাজশাহী জেলাঃ আম।
    2. সিরাজগঞ্জ জেলাঃ পানিতোয়া।
    3. পাবনা জেলাঃ ঘি।
    4. চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলাঃ আম, শিবগঞ্জের চমচম, কলাই-য়ের রুটি।
    5. বগুড়া জেলাঃ দই।
    6. নাটোর জেলাঃ কাঁচাগোল্লা।
    7. জয়পুরহাট জেলাঃ চটপটি।
    8. নওগাঁ জেলাঃ চাল,সন্দেশ। এছাড়াও দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বিভিন্ন ধরনের খাবার রয়েছে যা ঐসকল এলাকাকে করেছে গৌরবমন্ডিত। আজ এ পর্যন্ত পরবর্তীতে আরো নানা ধরনের তথ্য আপনাদের সামনে তুলে ধরার চেষ্টা করব।

    Post a Comment

    Previous Post Next Post