মোমো রেসিপি বাংলা | Momo Recipe In Bangla

 ভেজ মোমোর রেসিপি | মোমো তৈরির সহজ উপায়

মোমো রেসিপি বাংলা


নেপাল, দার্জিলিংয়ের একটি বহুল পরিচিত স্ট্রিট ফুড হচ্ছে মোমো। আমাদের দেশের পুরি পেঁয়াজু, ফুচকা কিংবা ঝালমুড়ির মত দার্জিলিং, কলকাতা বা নেপালের রাস্তায় রাস্তায় মোমো বিক্রি করতে দেখা যায়। এসব দেশ ছাড়িয়ে এখন বাংলাদেশেও মোমার বিস্তার ক্রমশ ছড়িয়ে পরেছে এর অভাবনীয় স্বাদের কারণে !

মোমো কি?

‘মোমো’ শব্দটির অর্থ হল ‘মাংসে ভরা ভাপা ময়দার পুডিং বিশেষ’। সোজা ভাবে বলতে গেলে মোমো হল আমাদের বাংলার পুলিপিঠা বা পিষ্টক জাতীয় একরকম খাদ্য, ইংরেজিতে যাকে ডাম্পলিং বলা হয়। ময়দার চাদরে মোড়া অনেকটা আমাদের বাড়ির বানানো পিঠার মত দেখতে সবজি ও মাংসের পুরে ভরা এই অভাবনীয় স্বাদের মোমো।

প্রকারভেদ : মোমো সাধারণত দুই রকমের হয়। ‌ভাপা (steamed) বা ভাজা (fried)। আমিষ কিংবা নিরামিষ দুই প্রকারেরই মোমো হয়ে থাকে। এছাড়াও চিজ মোমো, চকোলেট মোমো, বাঁধাকপি পোরা ভেজ মোমো, স্টিম মোমো, বিফ ঝাল মোমো, চিকেন মোমো, ভেজিটেবল মোমো, স্যুপ মোমো সহ আরো নানা প্রকারের সুস্বাদু মোমো রয়েছে।


মোমোর উৎপত্তি !

তিব্বত হল এর জন্মস্থান। তিব্বতী ভাষায় Mo শব্দের অর্থ বাষ্প (Steam)। এই খাবারটি তিব্বত থেকে একসময় প্রতিবেশী নেপাল, সিকিম, দার্জিলিংয়ে ধীরে ধীরে ছড়িয়ে পড়ে। এটাকে চীনা বাওজি বা জিয়াওজি, মঙ্গোলীয় বাজ, কোরিয়ার মান্ডু বা জাপানের গিয়োজার সাথে তুলনা করা যায়। তিব্বতীয়রা স্থানীয় ভাষায় মোমোকে মগমগ বলে। অন্যান্য স্থানেও এর বিভিন্ন নাম রয়েছে। তবে মোমো নামেই এটি বিশ্বব্য‍াপী পরিচিতি পায়। এই তিব্বতীয় খাবারটি আসামে মম, নেপালে মমচা, চীনে পিনইন, বার্লাদেশে মোমো নামে পরিচিত।


মোমোর ইতিহাস !

মূলত তুলাধর জাতির মধ্যে মোমো প্রথম ভীষণ জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। নেওয়ার ব্যবসায়ীরাই তিব্বত থেকে এটি প্রথম ক্রয় করে আনে। পরবর্তীকালে তারা নিজেরাই রন্ধন প্রক্রিয়াটি একটু পরিবর্তন করে নেয়। যেহেতু নেপালে মহিষ সহজলভ্য, তাই তারা মোমোর পুর হিসাবে মহিষ মাংসের কিমাই সর্বদা ব্যবহার করত। যদিও এটি নেপালের ব্রাহ্মণ ও ছেত্রী সম্প্রদায়ের কাছে নিষিদ্ধ ছিলো। নেপালের জন-আন্দোলনের পর পরই ৯০ দশকের মাঝামাঝি পর্যন্ত নেওয়ার সম্প্রদায়ের কাছে এটি অন্যতম জনপ্রিয় প্রধান খাদ্য হিসাবে ব্যবহৃত হত। নিজেরাই প্রাত্যহিক মিল হিসাবে ভোজন করত। পরবর্তীকালে কাঠমান্ডু থেকে ব্যাপক দেশান্তর (Migration) এবং মুক্ত অর্থনীতির কল্যাণে ২০০০ সালের মাঝামাঝি ভারতের সমস্ত মেগাসিটিতে এই খাবারটি ছড়িয়ে পড়ে। ২০১৮ -তে এসে এখন এই মোমো আমেরিকা, ইংল্যান্ড সহ আমাদের দেশের আনাচে কানাচেও প্রবেশ করে গেছে ! একটি দেশের কোনো লোকাল খাবার সাধারণত এতটা জনপ্রিয়তা পায়না, যতটা এই মোমো পেয়েছে। বলতে গেলে এটি এখন বিশ্বের প্রায় ৬০% দেশেই পাওয়া যায়।

অনেক রকমের মোমো আপনি স্টলে পাবেন। ভেরিটিস মানে, এতে বিভিন্ন ধরনের স্টাফিং যেমন মাংস (মুরগি, ভেড়ার মাংস), সবজি, পনির, তোফু ইত্যাদি রয়েছে। আজ আমি ভেজ মোমোর রেসিপি শেয়ার করছি। সবজির কথা বললে, গাজর, পেঁয়াজ, বাঁধাকপি এবং ক্যাপসিকাম ব্যবহার করেছি। আপনি মাশরুম, সবুজ মটরশুটি, রান্না করা আলু, বেবি কর্ন, শিমের স্প্রাউট ইত্যাদি যোগ করতে পারেন। এটি দ্রুত সম্পন্ন করতে, ফুড প্রসেসর ব্যবহার করুন।ভেজ স্টাফিং স্বাদে হালকা। তাই পাশে যেকোনো মশলাদার ডিপিং সস দিয়ে পরিবেশন করা যায় ।শেপিং পার্ট ছাড়া এটা বাসায় বানানো খুব সহজ। এগুলিকে আকার দেওয়া কঠিন নয়, তবে এটি অল্প সময়সাপেক্ষ এবং সেগুলিকে পুরোপুরি আকার দেওয়ার জন্য কিছু অনুশীলন প্রয়োজন। তাহলে দেখা যাক বাড়িতে কিভাবে ভেজ মোমো তৈরি করতে পারবেন। 

 

উপকরণঃ


মোমোর লেচি বানাতে লাগবে:


১.ময়দা-১ কাপ

২.লবন-১/২ চা চামচ

৩.সাদা তেল-১ চা চামচ

৪.পানি- পরিমাণ মতো। 


পুর বানাতে লাগবে:


১.বাধাকপি কুচি- ১০০ গ্রাম 

২.কাঁচা মরিচ কুচি-২ টি

৩.গাজর কুচি- অর্ধেক ( মাঝারি সাইজের)

৪.রসুন কুচি- ৪ কোয়া

৫.পেঁয়াজ কুচি- অর্ধেক 

৬.পেঁয়াজ পাতা কুচি- ১/৩ কাপ

৭.লবন-স্বাদ মতো। 

৮.গোলমরিচ গুঁড়ো-১/২ চা-চামচ

৯.সয়া সস - ১ চা চামচ

১০. তেল- ১ টেবিল চামচ। 



ভেজ মোমো তৈরি পদ্ধতিঃ


শুরুতে ময়দায় লবন ও বড় চামচের ১ চামচ তেল মিশিয়ে নিন।

এরপরে হাতের সাহায্যেই তেল আর লবন ভালো করে ময়দায় মিশিয়ে নিন। তারপরএই মিশ্রণে অল্প অল্প করে পানি মেশাতে থাকুন।

একসাথে বেশি পানি ঢালবেন না এতে করে ময়দার লেচি নরম হয়ে যাবে। ময়দার মিশ্রণ খুব নরম হবে না একটু শক্ত হতে হবে। এবারে ময়দার লেচিটি পনেরো মিনিটের জন্য ঢেকে রেখে দিন। এরপর

 চুলায় একটা প্যান গরম করে তাতে বড় চামচের এক চামচ তেল দিয়ে দিন।

এবারে তেল গরম হলে রসুন এবং মরিচ কুচি দিয়ে দিন। মাঝারি আঁচে মরিচ এবং রসুন ভেজে নিন।

বাদামী রঙ হয়ে আসলে তাতে পেঁয়াজ কুচি দিয়ে একইভাবে নাড়ুন।

মনে রাখতে হবে মোমোর পুরের কোনও উপকরণই বেশি ভাজবেন না, শুধু হাল্কা করে ভেজে নিতে হবে। এরপর এতে একে একে দিন গাজর ও বাধাকপি কুচি। চুলার মাঝারি আঁচেই গোটা মিশ্রণটি ৪ মিনিট মতো নাড়াচাড়া করে নিবেন যাতে এর কাঁচা ভাবটা চলে যায়। এবারে সবশেষে এর মধ্যে পেঁয়াজপাতা দিয়ে অল্প নেড়ে চুলা বন্ধ করে দিন। এর কারণ হলো পেঁয়াজপাতা দিয়ে বেশি রান্না করা যাবে না। এরপর মিশ্রণটি ঠান্ডা করার পর এতে সামান্য লবন মিশিয়ে নিন।

কিন্তু মনে রাখতে হবে, ময়দার মিশ্রণেও লবন দিয়েছিলেন, তাই লবন সাবধানে মেশাবেন।

লবন আগে মেশালে পানি ছেড়ে দিতে পারে। এরজন্য পরেই মেশান। তারপর এতে সামান্য গোলমরিচ দিন এবং ছোট চামচের এক চামচ সয়া সস দিয়ে এবার ভাল করে মিশিয়ে দিন।

এবার একটি রাইস কুকার বা ইডলি মেকারে পানি ফুটতে দিন। এখন বানিয়ে নিন মোমো। শুরুতে বেলনে অল্প শুকনো ময়দা ছড়িয়ে নিন। এরপর মাখানো ময়দার মণ্ড থেকে ছোট ছোট লেচি কেটে নিন। তারপর একটি লেচিতে শুকনো ময়দা মাখিয়ে লুচির আকারে বেলে নিতে হবে একদম পাতলা করে। এরপর বেলে নেওয়া লেচিতে ১ চামচ ভেজিটেবিল পুর ভরে নিন।

এবার পানি নিয়ে লেচির চারপাশটা গোল করে পানিতে বুলিয়ে নিন। এতে করে আপনার মোমো খুব ভালো করে আটকাবে।

এবারে মোমো ভাঁজ করার পালা। যদি আপনি বাড়িতে পুলি পিঠে বানিয়ে থাকেন, তাহলে আপনার জন্য বিষয়টি সহজ মনে হবে।

তবে না করে থাকলেও এটা খুব কঠিন বিষয় নয়। দুই হাতের সাহায্যে ঠিক শাড়ির কুঁচি বানানোর মতো করে মোমো মুড়ে নিতে পারবেন।

এবারে স্টিমারে সামন্য তেল ব্রাশ করে নিয়ে তাতে মোমো রেখে দিন ১৫ মিনিটের জন্য।

এরপরই তৈরি হয়ে যাবে আপনার ভেজ মোমো।

সস দিয়ে গরম গরম পরিবেশন করুন।

Post a Comment

Previous Post Next Post