ঐতিহ্যবাহী শুক্তো রান্নার রেসিপি | Bengali Shukto Ranna Recipe

ঐতিহ্যবাহী শুক্তো রান্নার রেসিপি
শুক্তো রান্না রেসিপি | সুক্তো রেসিপি "কলকাতা বাঙালি স্টাইলে"



 শুক্তো !

বাঙালির যেকোনো অনুষ্ঠানেই প্রথম পাতে পড়ে ঐতিহ্যবাহী শুক্তো। প্রচীন বাংলা সাহিত্যেও এর প্রসঙ্গ রয়েছে। লেবু-কাঁচামরিচের সঙ্গে বাঙালির পাতে প্রথম থেকেই ঐতিহ্যগত ভাবে উপস্থিত রয়েছে শুক্তো। মঙ্গলকাব্য ও বৈষ্ণবসাহিত্যে এই রান্নাটির কথা উল্লেখ থাকলেও তখন শুক্তো বলতে শুধুমাত্র তিতোকেই বোঝানো হত। এই সাত রকমের সবজির তিক্ত ব্যাঞ্জন তখন ছিল না। সেকালে শুক্তো রান্না করা হত- বেগুন, কুমড়ো, কাঁচকলা, মোচা আর গুঁড়ো অথবা বাটা মশলা দিয়ে।

এছাড়া বাঙালির সামাজিকতায় প্রতিবারই সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য পেয়ে এসেছে খাদ্য। খাওয়াদাওয়ার ব্যাপারে তো বাঙালি মোটেই অলস নয়। আদা-রসুন-ও পেঁয়াজে কষিয়ে যেমন করে মাছ, মাংসের পদ রান্না করে ঠিক তেমনভাবে নিরামিশ রান্না করতেও বাঙালির জুড়ি মেলা ভার। বাঙালি যে শাস্ত্র মানে না। আর তা শুধু না মেনেই ক্ষান্ত নয়, নিজের মতো করে শাস্ত্র করে, আচার এবং ধর্মকে বদলাতে  পারে। বাঙালির জীবন যে রকম বিচিত্র, ঠিক তেমনই মৌলিকত্ব রয়েছে বাঙালির রান্নায়। বাঙালি হেঁশেলে আজ যেরকম আলু, টমেটো এবং কাঁচামরিচের এত কদর তা পর্তুগীজদের দান। যতই ডায়াবিটিসের চোখরাঙানি ভাব থাকুক না কেন, বাঙালির সব রান্নাতেই অপরিহার্য হয়ে বসে থাকে আলু। এছাড়া পাশের চরিত্র  হিসেবে লাই, কুমড়ো, পটল, ঝিঙে, উচ্ছে, কাঁচকলা এরাও থেকে থাকে।

যেকোনো বাঙালি বাড়িতেই গরম ভাতের সাথে শুক্তো হল 'অলটাইম হিট'। অনেকে বলে থাকে আলু, বেগুন, পেঁপে আর উচ্ছের সঙ্গে ঠিক পরিমানে রাঁধুনি, মেথি এবং মৌরির গুণেই যে অসাধারণ শুক্তো বানানো যায় তা পর্তুগীজরাই প্রথম শিখিয়েছিল ,এসব কথা বললে আমরা কেন শুনবো? বাঙালির মুখরক্ষা করে যে পদ তাকে কি  আমরা নিজের মতো করে যত্নে সাজিয়ে নেব না? আজ রইল বাঙালির প্রিয় শুক্তোর এই ঐতিহ্যবাহী রেসিপি।


শুক্তো রান্নার উপকরন :

১.রাঙ্গালু- ২ টি (মাঝারি সাইজের) লাল আলু ।

২.আলু -৩ টি (মাঝারি সাইজের)।

৩.পেপে- অর্ধেক (মাঝারি সাইজের)।

৪.কাচকলা -১ টি (মাঝারি সাইজের)।

৫.বেগুন - ১ টি (মাঝারি সাইজের)।

৬.শিম- ৭ ট।

৭.উচ্ছে - ৩ টি (মাঝারি সাইজের)।

৮.সজনে ডাঁটা -২ ট।

৯.বিউলির ডালের বড়ি -১০০ গ্রাম। 

১০.আদার ছোট টুকরো -৩ ট।

১১.সরষে -৩ চা চামচ ।

১২.পুস্ত -৩ চা চামচ ।

১৩.নারকেল কুরো -২ চা চামচ ।

১৪.পান- পরিমান মতো ।

১৫.লবন -স্বাদ মত । 

১৬.রাধুনি -১ চা চামচ ।

১৭.মৌরি- ১ চা চামচ ।

১৮.পাঁচফোড়ন-১ চা চামচ ।

১৯.তেজপাতা  -২ টি

২০.গরুর দুধ-২ কাপ ।

২১.নারকেলের দুধ -১ কাপ।

২২.চিনি-১  চা চামচ ।

২৩.ঘি -১ চা চামচ ।



বাঙালি স্টাইলে শুক্তো রান্নার পদ্ধতি;

সর্বপ্রথমে শুক্তো রান্নার জন্য রাঙ্গালুকে লম্বা সাইজে কেটে ৬ টুকরো করে নিতে হবে ,তারপর অতি অবশ্যই একে পানিতে  ভিজিয়ে রাখতে হবে ।এরপর আলুকে আগের মতো করে ৬ টুকরো করে এবং একিরকম সাইজে পেপেকেও কেটে পানিতে ভিজিয়ে রাখতে হব । এবার ৪র্থ  উপকরন লাগবে কাচকলা,কাচকলার সামনে,পেছনে কেটে খুসাটা ছারিয়ে নিতে হবে ও আলুর সাইজের মত করে কাটার পর অবশ্যই পানিতে ভিজিয়ে রাখতে হবে । এবার ৫ম উপকরনে থাকছে বেগুন যাকে আলুর সাইজের মতো কেটে নিতে হবে । তারপর শিমগুলুকে ছাড়িয়ে অর্ধেক করে নিবেন । এরপর উচ্ছেগুলুকে আলুর সাইজ করে কেটে নিবেন আর সজনে ডাটা পুরোপুরি না কেটে চেষ্টা করবেন সামান্য একটু বাকি রেখে সেখান থেকে ছাড়িয়ে নেওয়ার ।তারপর আদা,সরষে,পুস্ত ,নারকেল কুরো ও পরিমান মতো পানি দিয়ে মিক্সারে ব্লেন্ড করে নিতে হবে । তারপর একটি প্যানে পরিমান মতো পানি নেওয়ার পর স্বাদ মতো লবন দিয়ে একে একে আলু ,রাঙ্গালু,কাচা পেপে দিয়ে ২-৩ মিনিট সেদ্ধ করার পর তাতে শিম, ডাটা দিয়ে আবার ৩-৪ মিনিট ভয়েল করে নিন । ভয়েল করার পর সবজি গুলুকে একটি পাত্রে রাখুন নরমাল পানি দিয়ে ।

তারপর একটি ননস্টিক প্যানে রাধুনি, মৌরি  দিয়ে হালকা ভেজে এগুলুর পাউডার করে নিন ।এবার ফাইনালি একটি কড়াইতে ১৫০ গ্রাম সরষের তেল দিয়ে বড়িগুলো ভেজে হালকা তুলে নিন ।এভাবে একে একে বেগুন, কাচকলা,ও উচ্ছেগুলো হালকা ভেজে তুলার পর সেই অবশিষ্ট তেলে পাঁচফোড়ন ,তেজপাতা ও বেটে রাখা সরষের মসলা ২ চা চামচ দিয়ে ১ মিনিটের মত রান্না করুন ।তারপর যে ভেজিটেবলগুলো সেদ্ধ করে রেখেছিলেন তা দিয়ে মিশিয়ে  এতে গরুর দুধ,ও নারকেলের দুধ দিয়ে রান্না করুন ১ মিনিটের মতো ।তারপর স্বাদ মত লবন ,১ চা চামচ চিনি দিয়ে মিশিয়ে নিন ।এবার সবশেষে বাকি ভেজে রাখা সবজি দিয়ে দিন ।এরপরে পাউডার করে রাখা মসলা ২ চা চামচ ও ১ চা চামচ ঘি দিয়ে ২-৩ মিনিট রান্না করুন । এভাবে হয়ে গেল ঐতিহ্যবাহী শুক্তো রান্না।

Post a Comment

Previous Post Next Post