ফখরুদ্দিনের বিখ্যাত মাটন কাচ্চি বিরিয়ানি
By Chef Faysal Bhuiyan
কাচ্চি বিরিয়ানি !
স্কুলের রান্নাঘর থেকে শুরু করে বিখ্যাত ব্র্যান্ড ফখরুদ্দিন বিরিয়ানিতে পৌছানোর ইতিহাস।
২০ বর্গফুটের একটি স্কুল রান্নাঘর থেকে শুরু করে, এটি বাংলাদেশের ভৌগোলিক সীমানা ছাড়িয়ে সিঙ্গাপুর, অস্ট্রেলিয়া, দুবাই এবং এর বাইরেও তার ব্যবসায়িক কার্যক্রম সম্প্রসারিত করেছে।কিন্তু এর সূচনা হয় মুর্শিদাবাদের নবাবদের রান্নাঘরে। ফকরুদ্দিন মুন্সী, মুর্শিদাবাদের নবাবদের শেফ মুসলিম মিয়ার অধীনেই নিজেকে গড়ে তুলেছিলেন । নবাবের রান্নাঘরে, যুবক ফকরুদ্দিন মুন্সি রান্নার অনেক কৌশল আয়ত্ত করেছিলেন, তার মধ্যে একটি ছিলো দম রান্নার প্রাচীন পদ্ধতি।
তিনি তার মাস্টারের কৌশল ব্যবহার করে উদ্ভাবনী খাবার তৈরি করতে শুরু করেন এবং ঢাকার ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ক্যান্টিনটি থেকেই শুরু হয় তার যাত্রা। তার অন্যতম সিগনেচার ক্রিয়েশন হচ্ছে "কাচ্চি বিরিয়ানি"। একটি নির্দিষ্ট অনুপাতে মাংসের সাথে আলু এবং সুগন্ধি চাল ব্যবহার করে ধীরে ধীরে (দমে) রান্না করে তৈরি করা হয় এই বিশেষ কাচ্চি বিরিয়ানি।
ফখরুদ্দিন সাহেব, যখন ভিকরুন্নেসা স্কুলের ক্যান্টিনে চাকরি করতেন সেই সময় সেখানকার প্রিন্সিপাল হামিদা আলি তার একটি পারিবারিক অনুষ্ঠানে ফখরুদ্দিন সাহেবকে রান্না করার জন্য অনুরোধ করেন, তিনিও রাজি হয়ে তৈরি করেন তার সিগনেচার ডিশ কাচ্চি বিরিয়ানি আর সেই কাচ্চি বিরিয়ানি খেয়ে সবাই তার প্রশংসা করেন এবং ওই অনুষ্ঠানে আসা সবাই তাদের নিজেদের অনুষ্ঠানেও ফখরুদ্দিন সাহেবকে দিয়ে রান্না করাতে শুরু করেন এভাবেই তার নাম ডাক ছরিয়ে যায় পুরো ঢাকা শহরে। তারপর প্রিন্সিপাল হামিদা আলি তাকে ২০ বর্গ ফুট জায়গা দিয়ে ফাখরুদ্দিন বিরিয়ানি এবং কেটারিং চালু করার ব্যবস্থা করে দেন সেই ১৯৬০ সাল থেকে, মশলা এবং মুখের স্বাদের একটি ট্রেডমার্ক মিশ্রণের সাথে ছোট কোম্পানিটি ধীরে ধীরে বড় হতে শুরু করে। তখনকার সময় বাংলাদেশের প্রায় সব বড় বিয়েগুলো ফখরুদ্দিন ক্যাটারিংয়ের বিরিয়ানি ছাড়া সম্পন্ন হয়নি।
আসুন এবার সেই ঐতিহাসিক রেসিপিটি যেনে নেয়া যাক।
মাটন কাচ্চি বিরিয়ানি উপকরণঃ
১। খাসির মাংস - ৩ কেজি (প্রতি কেজিতে প্রায় ৮ থেকে ১০ টুকড়ো হলে ভালো হবে)
২। লবণ - ১২৫ গ্রাম বা (স্বাদ অনুযায়ী তার চেয়ে সামান্য কিছুটা বেশি)
৩। আদা বাটা - হাফ কাপ
৪। রসুন বাটা - হাফ কাপ
৫। টক দই - ১ কাপ
৬। জাফরান - ১ গ্রাম
৭। দারুচিনি গুড়ো - ১ চা চামচ
৮। এলাচি গুড়ো - ১ চা–চামচ
৯। লবঙ্গ - অল্প কয়েকটি
১০। জয়ত্রী - হাফ চা চামচ
১১। শাহী জিরা - হাফ চা–চামচ
১২। আস্ত দারুচিনি - অল্প কয়েকটি
১৩। কাবাব চিনি - হাফ চা–চামচ
১৪। সাদা গোলমরিচের গুঁড়ো - ১ চা–চামচ
১৫। পেস্তা বাদাম বাটা - ২৫ গ্রাম
১৬। তেজপাতা - ৩ থেকে ৫ টি
১৭। গোল আলু - ৫ টি (প্রতিটি ৪ টুকরো করা)
১৮। পেঁয়াজ বেরেস্তা - পরিমাণ অনুযায়ী
১৯। কালিজিরা/বাসমতি চাল - ১.৫ কেজি। (কাচ্চি বিরিয়ানিতে আপনি যেকোনো সুগন্ধি চালই ব্যবহার করতে পারবেন)
ফখরুদ্দিনের কাচ্চির প্রস্তুত প্রণালিঃ
১। মাংসগুলো ভালো ভাবে ধুয়ে নিবো। তারপর দইয়ের মধ্যে দারুচিনি ও এলাচ গুড়ো , জাফরান মিশিয়ে দইটা মাংসে মিশিয়ে নিবো।
২। এরপর জয়ত্রী, সাদা গোলমরিচ, আদা রসুন বাটা সহ অন্যান্য সব মশলা মাংসের সাথে ভালোভাবে মেশাতে হবে।
৩। কাচ্চির চালটাকে আলাদা ৭০% সেদ্ধ করে নিবো।
৪। পেঁয়াজ বেরেস্তা করে নিবো।
৫। আলুর টুকরাগুলোকে ডোবা তেলে ভেজে নিবো।
৬। এখন মেরিনেট করা খাসির মাংসগুলোকে রান্নার জন্য হাড়িতে ঢেলে সাজিয়ে নিবো। এবং তার ওপরে দিয়ে দিবো ভাজা আলু ও পেঁয়াজ বেরেস্তা।
৭। তারপর মাংসের ওপরে ৭০% সেদ্ধ করা চাল সমান করে বিছিয়ে নিবো।
৮। এবার চালের উপর কিছুটা জাফরান মিশানো কালারফুল পানি ও পেয়াজ বেরেস্তা ছিটিয়ে দিবো
৯। তারপর হাঁড়ির নিচে আগুন ও কয়লার দম দিবো।
১০। হাঁড়ির মুখে ঢাকনা দিয়ে চারপাশ আটা দিয়ে তৈরি ডো দিয়ে বন্ধ করে দিবো ।
১১। ৩ - ৪ ঘণ্টা সময়ের মধ্যে তৈরি হয়ে যাবে ফাখরুদ্দিনের মাটন কাচ্চি বিরিয়ানি।
বিঃদ্রঃ সময়টা নির্ভর করবে আগুনের আচের উপর।
এভাবেই তৈরি হয়ে যাবে বাংলাদেশের বিখ্যাত ফখরুদ্দিনের কাচ্চি বিরিয়ানি। তারপর গরম গরম কাচ্চি, বোরহানি সহ সার্ভ করে দিবো।
গুরুত্বপূর্ণ টিপসঃ
খাসির মাংসগুলো রান্না করার আগে লবণ মেশানো পানিতে ভিজিয়ে কয়েক ঘন্টা রাখা ।
মাংসগুলো লবণ পানিতে থাকার কারণে নরম হবে এবং খুবই সহজে সিদ্ধ হয়ে যাবে। এবং তারপর ভালো ভাবে ধুয়ে নিয়ে রান্না করবো।