মাছের মাথার মুড়িঘন্ট বাংলার প্রতিটি ঘরে অতি জনপ্রিয় খাবার। বিশেষ করে বাংলাদেশীদের বলা হয় -"মাছে ভাতে বাঙ্গালী"। প্রতিদিন খাদ্য তালিকায় মাছ থাকা চাই নয়ত নিজেদের বাঙ্গালীই মনে হয় না। বাঙ্গালী যত প্রজাতির যত স্বাদের মাছ রান্না করতে জানে তা পৃথিবীর অন্য কোন দেশে খুজে পাওয়া কঠিন।
মুগ ডালের সাথে মাছের মাথা দিয়ে মুড়িঘন্ট রান্নার মজাদার রেসিপি
মাছের মাথার মুড়িঘন্ট রান্না করার জন্য নিম্নোক্ত পদ্ধতি অনুসরণ করতে হবে --
উপকরণসমূহ: মাছের পরিমাণের ও ডালের পরিমাণের ভিত্তিতে অন্যান্য উপকরণ পরিবর্তন করতে হবে।
- মাছের মাথা (পরিষ্কার সাফলা বা রুই মাছের মাথা ৪/৫ পিছ)
- মুগ ডাল (১ কাপ)
- পেঁয়াজ (পরিমাণমত)
- আদা বাটা (১ টেবিল চামচ)
- রসুন বাটা (১ টেবিল চামচ)
- ধনে পাতা কুচি (স্বাদমতো পরিমাণ)
- মরিচ গুঁড়া (স্বাদমতো পরিমাণ)
- হলুদ গুঁড়া (স্বাদমতো পরিমাণ)
- গরম মশলা গুঁড়া (স্বাদমতো পরিমাণ)
- লবণ (স্বাদমতো পরিমাণ)
- সরিষার তেল (প্রয়োজনমতো পরিমাণ)
পদ্ধতি: নিচে মুগডাল দিয়ে মাছের মুড়িঘন্ট রান্নার স্টেপ বাই স্টেপ পদ্ধতি দেয়া হল।
- মুগ ডাল ধুয়ে নিন এবং পানিতে ৩০ মিনিট ভিজিয়ে রাখুন। যেন মুগডাল নরম হয়ে আসে এবং রান্না করার সময় সহজে পরিপাক হয়।এবারে পানি ছেঁকে নিন।
- মুগ ডালে পেঁয়াজ, আদা বাটা, রসুন বাটা, ধনে পাতা কুচি, মরিচ গুঁড়া, হলুদ গুঁড়া, গরম মশলা গুঁড়া এবং লবণ মিশিয়ে নিন। সবকিছু ভাল করে মেশান।
- মাথার মুড়িঘন্ট উপর মুগ ডালের মিশ্রণ ছাড়িয়ে দিন। মুগ ডালে মাথার মিশ্রণ ভালো করে মিশিয়ে নিন।
- মুগ ডালের সাথে মাথা মিশ্রণ দিয়ে সামান্য পানি দিন যেন মসালা ভালোভাবে মিশে যায়। পানি পরবর্তীতে আরও দেয়া যাবে। এই অবস্থায় সামান্য পানিতে মিশিয়ে নিতে হবে।
- চুলার উপর মিশ্রণসহ পাত্রটি রেখে দিন এবং মাঝারি আচে রান্না করুন যতক্ষণ না মুগ ডাল সেদ্ধ হয়।
- পানির পরিমাণ কমে আসলে একটু একটু পানি দিতে পারেন। মুগডাল ও মাছ সিদ্ধ হয়ে গেলে পরিমাণমত পানি দিয়ে ১০ মিনিট মাঝারী তাপে রেখে দিন।
- রান্না শেষ হলে মাথা সহ মুগ ডালের তরকারি ভাতের সাথে পরিবেশন করুন । পরিবেশনের সময় ধনে পাতা কুচি ছিটিয়ে দিন।
এই মুগ ডালের সাথে মাছের মাথা রান্নার স্বাদ সবাই পছন্দ করে।তাছাড়া মুগডালের মুড়িঘন্ট পরোটার সাথে পরিবেশন করতে পারেন। পরোটা তন্দুরী রুটির সাথে এই মুগডালের মুড়িঘন্ট বেশ জনপ্রিয়।
মুগ ডাল একটি গুণকারী খাদ্য উপাদান, যা স্বাস্থ্যকর এবং পুষ্টিকর। নিম্নলিখিত উপকারগুলি এই খাদ্যের মধ্যে পাওয়া যায় -
মুগ ডালের উপকারিতা:
প্রোটিন সমৃদ্ধ: মুগ ডাল প্রোটিনের সুসংবদ্ধ উৎস এবং পূর্ণমানে প্রোটিন সরবরাহ করে। এটি ভেজিটেরিয়ান এবং ভেগেটেরিয়ান খাদ্যকে প্রোটিনের সম্পূর্ণতা দেয়।
শারীরিক পুষ্টি: মুগ ডাল অনেক উচ্চ পুষ্টির সূত্র, যেমন আয়রন, ক্যালসিয়াম, আয়ডিন, বিটাকারোটিন, ভিটামিন বি, ইত্যাদি বিশিষ্ট। এটি স্বাস্থ্যকর এমনকি হার্টের জন্য উপকারী হতে পারে এবং শরীরের প্রতিরক্ষামূলক ব্যবস্থা বৃদ্ধি করে।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ: মুগ ডাল খাবার ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করতে পারে, কারণ এটি কম কার্বোহাইড্রেট ও গ্লিসেমিক ইন্ডেক্স বিশিষ্ট। এটি শরীরে গ্লুকোজের প্রতিবন্ধক হিসাবে কাজ করতে পারে ।
ডাইজেশন সাহায্য: মুগ ডাল ডাইজেশন সিস্টেমকে সহায়তা করে কারণ এটি অতি সামান্য কার্বোহাইড্রেট এবং উচ্চ ফাইবার সম্পন্ন হয়ে থাকে। এর ফলে মুগ ডাল যেকোনো পাচনতন্ত্রিক সমস্যা সমাধান করতে সাহায্য করতে পারে, যেমন কবায় সমস্যা, প্রতিনিয়ম কমলের প্রবৃত্তি, পেট এসিডিটি ইত্যাদি।
মুগ ডাল অনেক উপকারী দিক থাকলেও কিছু অপকারিতা দেখা যায়। মুগ ডাল ফিটিক এসিডের উৎস, যা কিছু মানব শরীরে কিছু সমস্যা হতে পারে এবং দেহের ভারসাম্যে কিছু অসুবিধা তৈরি করতে পারে। এছাড়াও কিছু মানুষের জন্য মুগ ডাল ভুল ভাবে পাচনযোগ্যতায় সমস্যা করতে পারে, যা অতিরিক্ত গ্যাস, বমি বমি ভাব বা পাচনতন্ত্রে সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।
সাধারণত, মুগ ডাল মানসিক বা শারীরিক কোনও নির্দিষ্ট সমস্যার কারণ হয় না। তবে, যদি কেউ মুগ ডাল খেলে কোনও সমস্যা অনুভব করে বা পাচনতন্ত্রিক সমস্যা হয়ে থাকে, তবে সেই ব্যক্তিকে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।